Naya Diganta

ঋতুকন্যা শরৎ

ঋতুকন্যা শরৎ

এসে গেছে প্রিয় ঋতু শরৎ। এ বছর শ্রাবণ বিদায় না হতেই ওর উঁকিঝুঁকি লণীয় ছিল। সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে দূর থেকে দূরান্তে ভেসে বেড়ানো, তুলোর পেঁজায় উড়ে চলা, নীল সমুদ্রের সবটুকু নীল মেখে আকাশের গভীরতায় ডুবে যাওয়া এ সবই তার আগমনী সঙ্কেত। সেই সাথে মৃদু বায়ে কাশফুলের লুটিয়ে পড়া নৃত্য, বালিহাঁসের মুক্ত বিচরণ- সবই জানান দেয় প্রিয় ঋতুর আগমন। শরতের সন্ধ্যা আমার কাছে আরো মোহনীয় লাগে। কেননা, নীলাম্বরী শাড়ি পরে সাদা আঁচলে ঘেরা আকাশ যখন গোধূলির সোনালি রং মেখে ঝলমল নাইওরির মতো হেসে ওঠে তখন স্বতঃই মনে পড়ে বড় বড় কবিদের বিখ্যাত যত কবিতা। এই যেমন কবি শেখ ফজলল করিম লিখেছিলেন : ‘বুটিদার জড়িপাড় শ্যাম শাড়ি অঙ্গে, এলো কেশে এলো হেসে শরৎ এ বঙ্গে।’ অসাধারণ এক চিত্রকল্প। আবার যখন ভোরের শিশিরে পা ফেলে ঝিরঝিরে বাতাস গায়ে মাখিয়ে হেঁটে যাই মোহনীয় টানে শিউলি কুড়াতে তখন কানে বাজে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের : ‘এসেছে শরৎ, হিমেল পরশ, লেগেছে হাওয়ার পরে, সকাল বেলায় ঘাসের আগায় শিশিরের রেখা ধরে।’ আসলে শরৎকে নিয়ে লেখেননি কোনো কবি কোনো কবিতা তা যেমন অকল্পনীয় তেমনি শরতের আগমনে কেউ পুলকিত হয়ে ওঠে না তাও অভাবনীয়। বর্ষার ভেজা ভেজা রাস্তা-ঘাট, বন-বাদাড় শুকিয়ে গিয়ে চারি দিকে পরিচ্ছন্নতার একটা ফুরফুরে মেজাজ এনে দেয় এই শরৎ। ষড়ঋতুর দেশ এই বদ্বীপটাতে শরৎকে আমি বলি ঋতুকন্যা। এটি আমাদের তিন নং ঋতু। ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস নিয়ে এ ঋতু। এ সময় চারি দিকে সাদা ফুলের সমারোহে এক শুদ্ধশুভ্র সূচিতা নিয়ে যেন প্রকৃতি হেসে ওঠে। এ ফুলগুলোর মধ্যে গগনশিরীষ, ছাতিম, বকফুল, মিনজিরি, শেফালি, শিউলি, কলিরেন্ডা, কাশফুল, দোলনচাঁপা আর সাদা শাপলা, লাল শাপলাতো আছেই। আর ফলের মাঝে? ফলের মধ্যে বিশেষভাবে অমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অরবরি, করমচা, বেলম্ব, চালতা দেউয়্যা, আমড়া উল্লেখযোগ্য। এমন সমৃদ্ধ ঋতুকে কে না ভালোবেসে পারে! আর তাইতো আমার মতো সাধারণরাও হয়ে ওঠে কবি, হয়ে ওঠে লেখক। তবে যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী তারা মহান আল্লাহর এই অপূর্ব সৃষ্টি ঋতুবিচিত্রার রূপ অবলোকনে চুপ থাকে কী করে? কৃতজ্ঞতায় তাদের কলম তো একটু জেগে উঠবেই। যদি এতেই হয় তাঁর মহিমা কীত্তন, যিনি আমারও স্রষ্টা ওই ঋতুরও স্রষ্টা!