Naya Diganta

আনন্দ বেদনা

আনন্দ বেদনা

উস্ক-খুস্ক চুল, মলিন পোশাক। কেউ খেতে দিলে খাচ্ছে, না হলে দোকানে গিয়ে হাত পাতছে। আচরণ দেখে উনিশ বছরের ছেলেটিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলেই ধরে নিয়েছে সবাই। বাহাজ দিনের পর দিন কাজ খুঁজে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ এই নিরীহ ছেলেটির জন্য কোনো মমতা বোধ করেনি। অনেক দিনের কান্ত ও ুধার্ত সে, ঘোরাঘুরি করতে করতে একটা দোতলা ভবনের কাছে পৌঁছে গেল। একটা পানির টেপের কাছে এসে থামল, ভাবল পানি দিয়ে পেটের আগুন নিভিয়ে ফেলে। পানি খেয়ে ভবনের দেয়ালে শুয়ে পড়ল। কিছুণের মধ্যেই সাহিলা এসে হাজির। এই ভবনে কাজ করে সে। সেও ঝাড়ু-মোছার কাজ করতে কোথাও থেকে এসেছে। ছেলেটিকে দেখামাত্র তাড়াহুড়ো করে কিছু খাবার এনে দিলো। প্লেটে খাবার রাখল। ছেলেটির কাছে গিয়ে তাকে জাগাল। কোথা থেকে এসেছ, এখানে বসে আছ কেন, তোমার বাড়িতে যাও না কেন?... ইত্যাদি ইত্যাদি জিজ্ঞাসা।
বাহাজ লোলুপ দৃষ্টিতে দেখল সাহিলার হাতের খাবার। সাহিলা তড়িঘড়ি করে প্লেটটা তার দিকে এগিয়ে দিলো। বলল, হ্যাঁ, তোমার জন্যই এনেছি।
বাহাজ কিছু বলল না, খাবারের ওপর ভেঙে পড়ল। তার খাবার খাওয়া দেখে আন্দাজ করা যায়, সে অনেক দিনের ুধার্ত, তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।
সাহিলার আদর বেড়ে গেল। সে বলল, আর একটু ভাত লাগবে?
বাহাজ হ্যাঁসূচক ঘাড় নাড়ল। সাহিলা ভেতর থেকে আরো কিছু ভাত নিয়ে এসেছে।
পেট ভরে গেলে বাহাজ ট্যাপে গিয়ে পানি খেল। সাহিলা তার সাথে খুব আদর করে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল। বাহাজ নিজের প্রতিদিনকার জীবনের অভিজ্ঞতা জানাল। এখানকার মানুষজন প্রতিনিয়ত এই শহরে তার সাথে যেসব কষ্টকর আচরণ করেছে... বড় বড় ভবনের মালিকদের গাড়ি ধুয়ে দিয়েছে। কারোর কাছে কাজের কথা বললে অবজ্ঞার চোখে দেখে তাড়িয়ে দিয়েছে, তারপর বাধ্য হয়ে চুরিও করেছে সে।
সাহিলা বাহাজের মানসিকতা বুঝতে পারল। তাকে তার কুঁড়েঘরে নিয়ে এলো। কারণ দিনটি খুব ভয়ঙ্কর তাণ্ডব ঝড়ের। বাহাজ ধীরে ধীরে নিজের সম্পর্কে বলতে শুরু করল, কীভাবে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে, তার বাবা নেশা করে এবং সৎ মায়ের নির্দেশে তাকে মারত। সে যা আয় করত, সব টাকাই রেখে দিত।
সাহিলার সঙ্গে বাহাজ ছোট্ট কুঁড়েঘরেই থাকতে লাগল। দু’জনের মধ্যে মা-ছেলের সম্পর্ক তৈরি হয়। সাহিলা তার কাজের ভবনে বাহাজকে কাজ দিয়েছে, আর সবাইকে বলেছে সে আমার ভাইয়ের ছেলে।
শীতকাল এসে পড়ল। আজ একটু ঠাণ্ডা পড়েছে। শুকনো লাকড়ির টুকরা দিয়ে সাহিলা আগুন জ্বালিয়ে মা ও ছেলে দু’জনেই কথা বলছে। হঠাৎ বাহাজ জিজ্ঞেস করে, মা, আমি আসার আগে তুমি একা থাকতে কেন?
বাহাজ সাহিলার ব্যথার শিরায় হাত দিয়েছে, কিন্তু সাহিলা শুধু বলল, আমার তোমার মতো একটি ছেলে চাওয়া ছিল আল্লাহ পাকের কাছে... এটাই আমি চেয়েছিলাম। তোমার জন্য অপো করছিলাম...।
এই সুন্দর বাক্যে বাহাজের নিষ্পাপ মুখে হাসি ফুটে উঠল।