Naya Diganta

গ্রিস থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার পথে বাংলাদেশী অভিবাসীর মৃত্যু

গ্রিস থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার পথে বাংলাদেশী অভিবাসীর মৃত্যু

গ্রিস থেকে দালালদের মাধ্যমে অনিয়মিত পথে ফ্রান্সে যাওয়ার সময় পথে এক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়েছে৷ তার লাশ দুর্গম অঞ্চলে ফেলে রেখে দালাল চক্র পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷

অনিয়মিত পথে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী ও শরণার্থীরা মৃত্যুর মুখে পতিত হন

গ্রিস থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়েফ্রান্সে যাওয়ার সময় বাংলাদেশী যুবক তাপস সরকার প্রাণ হারান৷ টানা কয়েক দিন হাঁটার পর একপর্যায়ে তিনি ‘ব্রেইন স্ট্রোক' করেন বলে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন তার বড় ভাই সুমন সরকার৷

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা তাপস সরকার ২০১৯ সালে ওমান, তুরস্ক হয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করেছিলেন৷ সর্বশেষ গ্রিসে কয়েক মাস থাকার পর একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে গ্রিস থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ এজন্য দালাল চক্রকে বাংলাদেশের একটি ব্যাংকে দুই লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল বলে জানান সুমন সরকার৷ আরো এক লাখ টাকা তাপস ফ্রান্সে পৌঁছানোর পর দেয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু পথিমধ্যেই তার মৃত্যু হয়৷

গ্রিস প্রবাসী সাংবাদিক প্রদীপ কুমার সরকার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘গ্রিস থেকে গত ৩ আগস্ট তাপসসহ ৩০ জনকে আলবেনিয়া নিয়ে যায় দালাল চক্র৷ আলবেনিয়া সমতল সীমান্ত থেকে তীব্র গরমের মাঝে আট ঘণ্টায় উঁচু পাহাড় বেয়ে মন্টিনিগ্রো প্রবেশের সময় হঠাৎ পাহাড়ের মাঝে লুটে পড়েন তাপস৷'

‘এ সময় অনেক চেষ্টা করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে দালালসহ অন্য যাত্রীরা তাকে রেখেই চলে যান৷ তখন একটি ভিডিও করে গ্রিসে থাকা স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে ঘটনাটি জানান তার সাথে থাকা দুই বন্ধু,' বলেন প্রদীপ কুমার সরকার৷

ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে একাধিক অভিবাসী তাপস সরকারের ভিডিওটি পাঠিয়েছেন৷ এতে এক ব্যক্তিকে নিথর অবস্থায় একটি পাথরের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকা অবস্থায় দেখা গেছে৷ ভিডিওটিতে তাপসকে দেখা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন তার ভাই সুমন সরকার৷ তবে, ঠিক কোথায় ও কখন তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি তিনি৷ শনিবার ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ জেনেছেন বলে সুনামগঞ্জ থেকে টেলিফোনে জানিয়েছেন সুমন৷

ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘তাপসের সাথে থাকা মানুষেরা জানিয়েছেন যে টানা তিনদিন হাঁটার সময় তাপস পানি ছাড়া আর কিছু খাননি৷ একপর্যায়ে তিনি তার এক বন্ধুকে বলেন যে তার শরীর কেমন যেন করছে৷'

‘এভাবে আরো একদিন হাঁটার পর হঠাৎ করে বড় একটি পাথরের কাছে বসে পড়েন তিনি৷ এরপর তিনি তার এক বন্ধুর কাছে পানি চান৷ কিন্তু পানি মুখে দেয়ার পরই তার এরকম অবস্থা হয়,' যোগ করেন সুমন সরকার৷

সাড়ে সাত লাখ টাকা ঋণ করে ভাইকে ইউরোপে পাঠানো হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ এই ঘটনায় দালালচক্রের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি বিবেচনা করছে তাপসের পরিবার৷

ঝুঁকিপূর্ণ অনিয়মিত পথে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসী ও শরণার্থীরা মৃত্যুর মুখে পতিত হন৷ এর আগে গত মার্চে সার্বিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় এক বাংলাদেশী মৃত্যুবরণ করেন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে