Naya Diganta

মানি এক্সচেঞ্জ নির্ভরতা কমাতে ব্যাংকের আওতা বাড়ছে

খোলাবাজারে ডলারের দাম কমছে না। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বলা হচ্ছে চাহিদার চেয়ে ডলার সরবরাহ কম। বাজারে যে হারে ডলারের চাহিদা বাড়ছে, ওই হারে পাওয়া যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে মূল্যের ওপর। গতকালও প্রতি ডলার পেতে গ্রাহকদের ব্যয় করতে হয়েছে ১২০ টাকা। তবে লেনদেনের পরিমাণ অনেক কম ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকি জোরদারের কারণে গতকাল লেনদেন তেমন একটি হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য দেশব্যাপী ব্যাংকের শাখায় ডলার লেনদেনের আওতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর কাছে তাদের শাখার তালিকা চাওয়া হবে। ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী শাখাগুলোতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমতি দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার অংশ হিসেবে গতকালও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি চালু রেখেছে। গতকালও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিসির জ্বালানি তেল, এলএনজি ও সার আমদানি করতে ব্যাংকগুলোকে ১২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বিক্রি করেছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪১ দিনে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে ১২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। চলতি মাসের ১ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৮১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাস শেষে আড়াই শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডলার বিক্রি করার পরও বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩৯.৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রয়েছে।


এ দিকে আগের দিনের মতো গতকালও খোলাবাজারে ডলার লেনদেন ১২০ টাকা ছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির কারণে লেনদেন আগের দিনের চেয়ে গতকাল কম হয়েছে বলে একজন মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আগে বিদেশফেরত প্রবাসী কর্মী, পর্যটক, ছাত্র এমনকি চিকিৎসা দেশে দেশে ফেরত আসা রোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আহরণ করা হতো, বাজারের চাহিদার সাথে তার সমন্বয় ছিল। কিন্তু এখন ক্যাশ ডলার পাওয়া যাচ্ছে কম। তবে চাহিদা অনেক বেশি। এ কারণে খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখানে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কোনো ধরনের কারসাজি দায়ী নয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ডলার আসার চেয়ে যাচ্ছে বেশি; তাই খোলাবাজারে দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, দেশে ডলার আসার চেয়ে বেশি যাওয়ায় তাই বিদেশে যাওয়ার সময় ক্যাশ ডলার বহনে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, ডলারের কারসাজি ধরতে খোলাবাজার, মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ ও বিভিন্ন ব্যাংকে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে ৫টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট দেশী-বিদেশী ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।


তিনি বলেন, চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই ডলারের আউট-ফ্লো বেড়ে গেছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সে পরিমাণ ডলার দেশে আসছে না। এ কারণেই খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। ডলার সঙ্কট হওয়ার পেছনে অন্তর্নিহিত কারণগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলার সঙ্কট হয়েছে। রিজার্ভও কমেছে। রফতানির চেয়ে বাংলাদেশের আমদানি বেশি। তাই আমদানি-রফতানির মধ্যে শূন্যস্থান পূরণ করতে হলে রফতানি বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। বাজার স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি অব্যাহত থাকবে। তবে রেমিট্যান্স বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সারা দেশে ব্যাংকের শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে অথরাইজড ডিলার বা এডি শাখাগুলোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনপ্রাপ্ত এসব শাখার মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা, রফতানি কার্যক্রম এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করা হয়। এখন এডি শাখার বাইরে ব্যাংকগুলোর সরবরাহকৃত শাখার মাধ্যমে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার অনুমোদন দেয়া হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে শাখা নির্ধারণের জন্য তালিকা চাওয়া হবে। ব্যাংকগুলো তাদের কোন কোন শাখার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করতে চায় তার তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রদান করবে। এসব শাখার একটি উপবিভাগ থাকবে যেখানে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ থেকে ফেরত অনেক প্রবাসী কর্মী ও পর্যটক কিছু ডলার হাতে নিয়ে আসেন। এসব ডলার বিক্রি করার জন্য মানিচেঞ্জারগুলোতে যান। অনেক সময় তারা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। কিন্তু সারা দেশে ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের অনুমোদন দেয়া হলে একদিকে মানিচেঞ্জারগুলোর ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমবে, পাশাপাশি ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন না তারা। এতে মানিচেঞ্জারগুলোর বাজার কারসাজি বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।