Naya Diganta

একটি আনন্দময় যাত্রা

সমবয়সী মাসতুতো ভাই সনজিতের বিয়ে। ছোটবেলা থেকে এ দেশে আমরা একসাথে বড় হয়েছি। খেলাধুলা, দুষ্টুমি থেকে শুরু করে একসাথে অনেক কিছু করেছি। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত ও আমার সহপাঠীও ছিল। তারপর সে ভারতে চলে যায়। ওখানেই ওর পড়াশোনা। এখন সরকারি হাসপাতালের একজন প্যাথলজি ডাক্তার। ১০ জুলাই ওর বিয়ে। ও আগে থেকেই খুব রিকোয়েস্ট করে বলেছে, ওর বিয়েতে যেতেই হবে। তা ছাড়া সারা জীবন ওর কথা শুনতে হবে। যাওয়ার মোটামুটি মাসখানেক আগে পাসপোর্ট রেডি করে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার স্ত্রীর একটি এক্সাম ছিল। তাই যাব-যাব না এরকম দুটানার মধ্যে ছিলাম। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৭ জুলাই রওনা দিলাম ভারতের উদ্দেশে। বাড়ি থেকে বাসে তারপর সিএনজি অটোরিকশা অতঃপর ট্রেনে বাংলা হিলি চেকপোস্টে পৌঁছলাম। বর্ডারের সব ফর্মালিটি সেরে আমরা বেলা ৩টার দিকে ভারতীয় চেকপোস্ট থেকে রওনা দিলাম। এটি আমার প্রথম ভারত ভ্রমণ। বড় মামা এসেছিলেন আমাদের রিসিভ করতে। আমার সাথে আছেন আমার মা আর এক মামাতো ভাই। আমাদের প্রথম গন্তব্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। তারপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরব। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে বড় মামার বাড়ি পৌঁছে গেলাম। মামা-মামী আমার জীবনে অনেকটা জায়গাজুড়ে আছেন। বাবা-মায়ের চেয়ে তা কোনো অংশে কম নয়। মামাবাড়িতে পুরো দু’দিন কাটালাম। তারপর ১০ তারিখে গেলাম বিয়ে বাড়িতে।
যখন বাসে কাস্টমস থেকে যাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল এ যেন এক অনন্য আকাশ। বলে রাখা ভালো, আমার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কমপক্ষে ৯০ শতাংশ লোক ভারতে বসবাস করে। আমার ছুটি মাত্র ১০-১২ দিন। সবার বাড়িতে যেতে পারব না। অনেকে খুব মন খারাপও করল। অনেকে আমাকে দেখেনি। পরে আবার যাব বলে সবাইকে ম্যানেজ করলাম। বিয়ে বাড়িতে খুব মজা করলাম। বিয়ে, বরযাত্রী আর বিবাহোত্তর সংবর্ধনার কয়েকটি দিন। প্রথমবারের মতো বিয়ে উপলক্ষে খুব আনন্দ করলাম। একেবারে নির্মল আনন্দ।
সনজিত ওর কয়েকজন বন্ধুর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। নির্ণয়, দিলীপ, উত্তম আর পিন্টু। আমি কখনো ওদের কথা ভুলব না। ওরা অত্যন্ত আন্তরিক। মুগ্ধ করেছে ওদের আন্তরিকতা। অত্যন্ত ভালো লেগেছে ওদের আন্তরিক সৌহার্দ্য । এক মুহূর্তও ওরা আমাকে ছেড়ে দেয়নি। খুশিতে ভরিয়ে রাখত সবসময়। কখনো বোরিং হতে দেয়নি। চিরকৃতজ্ঞ ওদের এবং সুন্দর মানসিকতার বৌদিদের কাছে। উত্তমের প্রচণ্ড শখ ছবি তোলার। আমার হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু ছবিও পাঠিয়েছে সে। কৃতজ্ঞতা তোমাদের প্রতি। ভালো থেকো সারা জীবন। এবার বিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পালা। বিয়ে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরলাম। বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, মালদা প্রভৃতি স্থানে। সবাই আন্তরিকতায় মুগ্ধ করল আমাকে। মাসতুতো জিজুর সাথে খুব আনন্দ করে মাছ ধরলাম পুনর্ভবা নদীতে। মামাতো ছোট বোনের স্বামী মান্তু আর অমল জিজু আমাদের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখাল আর ইন্ডিয়ার সুস্বাদু খাবারগুলো পরখ করার সুযোগ করে দিলো। গঙ্গারামপুর হাইওয়ে থেকে সামান্য উত্তরে রয়েছে ঐতিহাসিক বানগড় রাজ্য, যা এখন শুধুই ঐতিহাসিক স্থাপনা। বেশ সময় নিয়ে ঘুরে দেখলাম প্রাচীন স্থাপনাটি। এলাকাটি বেশ বড়। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক আসে এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ওদের মুখে শুনলাম বানগড় রাজ্য আর রাজার সব ঐতিহাসিক ঘটনা। ভারতীয় রেল পরিষেবা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ রেল পরিষেবা। ওখানে রেল ভ্রমণও বেশ লেগেছে আমার। ভারতীয়রা বেশ মিতব্যয়ী। প্রয়োজন অনুযায়ীই খরচ করে ওরা। ওদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি থেকে কিছুটা ভিন্ন। কী মধুর বাংলাতে ওরা কথা বলে। রান্না আর আপ্যায়নেও ওরা বেশ পারদর্শী।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে ওরা। এই কয়েক বছরে আইটিতে বেশ উন্নতি করেছে ওরা। নারী-পুরুষের সমান অধিকারের বিষয়টি যেন ভারতে না গেলে বোঝা যাবে না। জাতি হিসেবে ওরা খুবই সহিষ্ণু। যানজটমুক্ত পরিষ্কার পথঘাটগুলো সত্যিই মনোরম। এখানে স্ত্রীরা স্বামীর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল নয়। ওরাও স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ, ব্যবসায় ও চাকরি করে। অবশেষে আমার দেশে ফেরার সময় হয়ে গেল। ছুটি শেষ। আমার পরম শ্রদ্ধেয় বড় মামার বাড়িতে শেষবারের মতো আবার গেলাম। মামা-মামীকে সম্মান জানিয়ে ১৮ তারিখ আবার পা বাড়ালাম দেশের পথে।