Naya Diganta
ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি

আমন ও শীতের সবজি আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় যশোরের ৫ লাখ কৃষক

ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি
সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক দেরিতে আমনের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা : নয়া দিগন্ত

হঠাৎ করে ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে যশোরের পাঁচ লাখ কৃষকের। তারা একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আগামী দিনে কিভাবে আবাদ শেষ করবেন, তা নিয়ে যত দুশ্চিন্তা তাদের। ডিজেলের এতটা মূল্যবৃদ্ধিতে চলতি আমন এবং সামনের শীত মৌসুমে সবজির আবাদ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা অত্র এলাকার কৃষকদের।
কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোর জেলায় প্রায় ৭০ হাজার ডিজেলচালিত স্যালো মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে ১০৫টি গভীর ও বাকি সব অগভীর নলকূপ। ডিজেলচালিত ছাড়াও বিদ্যুৎচালিত নলকূপ রয়েছে ১০ হাজারের বেশি। সদর উপজেলায় এক হাজার ৯৭টি ডিজেলচালিত স্যালো মেশিন রয়েছে। এসব স্যালো মেশিনর আওতায় গড়ে ১৫ বিঘা জমি চাষ হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জেলার আট উপজেলায় স্যালো মেশিনের আওতায় এক লাখ ৩৪ হাজার হেক্টরের মতো জমি চাষ হয়।
চলতি আমন মৌসুমে চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় যশোরের কৃষাণ-কৃষাণীরা শেষ পর্যন্ত স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ জায়গায় সেচের পানি দিয়ে আমন ধান রোপণ শুরু করেছেন তারা। যখন আমন চাষ নিয়ে কৃষাণ-কৃষাণী ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠিক সেই সময় আকস্মিকভাবে বেড়েছে ডিজেলের দাম। আর এ কারণেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা।
আমন চাষের পাশাপাশি আরো বেশি দুশ্চিন্তা ভর করেছে শীতকালীন সবজিচাষিদের মধ্যে। কারণ শীতকালে সবজি চাষ সম্পূর্ণ সেচের ওপর নির্ভর করে করতে হয়। যেভাবে ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে সবজি চাষে কয়েকগুণ খরচ বেড়ে যাবে বলে চাষিরা মনে করছেন। ব্যাপকভাবে খরচ করে উৎপাাদিত সবজি কাক্সিক্ষত দামে বিক্রি করতে পারবেন কি না সেই হিসাব কষছেন চাষি। বর্তমানে বৃষ্টির যে অবস্থা, সেই সাথে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় যশোর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এ বছর জেলায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯ আগস্ট পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে। জানিয়েছেন উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক।
এ দিকে কৃষাণ-কৃষাণীরা বৃষ্টির জন্য মাসের পর মাস হাহাকার করছেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। পানির অভাবে চাষিরা মাঠে নামতে পারেননি আমন চাষের জন্য। যে সময় আমন চাষ নিয়ে কৃষকের ব্যস্ত থাকার কথা, ঠিক সেই সময় অলস সময় পার করেছেন তারা। আগস্ট মাসের শুরুতে পরপর দুই দিনের বৃষ্টিতে চাষিরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পান। তারা আমন ধান রোপণ শুরু করেন। কিন্তু এটি স্থায়ী হয়নি। কারণ আবারো বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে লাখ লাখ চাষি সেচের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন।
পারুল আক্তার নামে এক কৃষাণী বলেন, স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভর করে বোরো ও সবজির আবাদ করতে হয়। এ বছর আমনেও সেচ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। মোহাম্মদ আলী নামে এক কৃষক বলেন, ডিজেলের দাম এতটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে সব ধরনের আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। কারণ চাষির খরচ উঠবে বলে মনে হয় না।
এ বিষয়ে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, ডিজিলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষিতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। একইভাবে পণ্যেরও দাম বাড়বে। তবে সরকার নানাভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে। এ কারণে তারা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়তো হবেন না। আগামীতে বিভিন্ন আবাদে প্রণোদনা বাড়তে পারে। ফলে যেভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে ঠিক সেভাবে ক্ষতি হবে না।