Naya Diganta

শরিফা কি বাজারের সবচেয়ে দামী ফল?

সাদ্দাম হোসেনের বাগানে শরিফা ফল

দেশের বাজারে শরিফা ফল সাধারণত পাওয়া যায় আম কাঁঠালের মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই। তবে চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকার পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সমস্যার কারণে ফলটি খুব বেশি বাজারে পাওয়া যায় না।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি অপ্রধান ও স্বল্প প্রচলিত ফল। তাছাড়া এই ফল চাষেও দরকার হয় ভিন্ন ধরণের ব্যবস্থাপনা। ফলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন না করলে শরিফা ফল চাষে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলছিলেন যে, শরিফা ফল চাষের ক্ষেত্রে সঠিক জাত নির্বাচন ও যথাযথ পরিচর্যা অপরিহার্য।

‘আবার অতিরিক্ত যত্ন, যেমন- বেশি সার বা পানি দেয়ার কারণেও কাঙ্ক্ষিত ফল নাও আসতে পারে। এই সংবেদনশীলতার কারণেই খুব সতর্ক থাকতে হয়। তাই সম্ভাবনা ভালো থাকলেও ফলটি চাষের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও কম নয়,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

এই চুয়াডাঙ্গাতেই অল্প কিছু কৃষক শরিফা ফলের বাণিজ্যিক চাষের চেষ্টা করছেন গত কয়েক বছর ধরে। তবে এর মধ্যেই ফলটি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন জেলার জীবননগরের কৃষক মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন।

বিবিসিকে জানিয়েছেন, তিনি থাই জাতের শরিফা ফলের চাষ শুরু করেছে কয়েক বছর আগে যেটি খুবই উচ্চ ফলনশীল। বছরে প্রতি বিঘায় প্রায় ৮/১০ লাখ টাকার শরিফা বিক্রি করেন তিনি।

সর্বনিম্ন আড়াই শ’ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পাঁচশ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয় শরিফা। এটি প্রতি কেজিতে ৪/৫ টির মতো ফল পাওয়া যায়।

তার মতে, বাংলাদেশে যত ফল উৎপাদন হয় বাজারদর কিন্তু শরিফার বেশি। কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে ভারত থেকে চার শ’ চারা এনে পেয়ারার সাথে সাথি ফসল হিসেবে শরিফা চাষ শুরু করেছিলেন তিনি।

সাধারণত ভাদ্র মাসে ফলটি পরিপক্ব হয়ে বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়।

দাম বেশি হলেও ঝুঁকিও বেশি
শরিফা ফল ভীষণ প্রিয় গৃহিনী কুসুম আক্তারের। নিজের বসত ঘরের পাশেই জানালার কাছে তিনটি শরিফা ফল গাছ লাগিয়েছেন। বলছিলেন, তিনটি গাছ থেকেই প্রতি বছর ফল পান। তার নিজের যেমন প্রিয় তেমনি তার নাতি নাতনিরাও ফলটি খুব পছন্দ করে।

বাংলাদেশে সাধারণত বসত বাড়িতে অন্য ফলের সাথে অনেকেই এভাবে দুই একটি শরিফা ফল গাছ রোপণ করেন শখের বশে। সে কারণে এটি বাজার থেকে কিনে খাওয়ার প্রবণতা এখনো খুবই কম। তাছাড়া আম, জাম বা পেয়ারার মতো শরিফা ফল সবার কাছে এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।

কৃষিবিদ তালহা জুবাইর মাসরুর বলছেন, বেশি পরিচর্যা করলে বাগান থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ শরিফা নাও পাওয়া যেতে পারে।

আবার ভালো জাত না হলে বাণিজ্যিকভাবে লাভের সম্ভাবনা কমে যায়।

এছাড়া শরিফা ফল পেকে যাওয়ার পর দ্রুত খেয়ে ফেলতে হয়। কারণ এটি দ্রুত পচনশীল।

আবার বাজারজাতকরণের সময়েও খুব সতর্ক থাকতে হয়। কারণ ফলটি সহজেই চাপা লেগে নষ্ট হতে পারে।

‘ফলে খুব কম সময় পাওয়া যায় সঠিকভাবে বাজারে পাঠানোর জন্য। তাই দাম বেশি বলেই এর চাষ করে লাভবান হওয়াই যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে সবকিছু সঠিকভাবে করতে পারলে এর সম্ভাবনা ভালো,’ বলছিলেন মিস্টার তালহা।

সাদ্দাম হোসেন বলছেন যে, প্রতি বিঘা জমিতে বছরে ৮-১০ লাখ টাকার শরিফা পান তিনি যা আরো অনেক কৃষককে উদ্বুদ্ধ করেছে। তারপরেও বাণিজ্যিকভাবে শরিফা চাষ খুব বেশি এখনো হয় না।

শরিফা চাষের জন্য দরকারি তথ্য
শরিফা দেশি ফল হিসেবে পরিচিত হলেও মূলত থাই জাতের লাল ও সবুজ রঙয়ের শরিফাই বেশি জনপ্রিয়। এটি উচ্চ ফলনশীল ও বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষের উপযোগী।

কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ফলটির জন্য শুরুতেই দরকার হয় উঁচু জমি যেখানে পানি উঠার সুযোগ থাকবে না।

এ কারণেই অনেকে বসতবাড়ির খোলা জায়গায় এটি চাষ করেন। বেলে দোআঁশ মাটিতে ও সবসময় রোদ থাকে এমন জায়গায় ফলটি ভালো হয়।

কোনো কারণে পানি জমলে বা অতিরিক্ত পানি দেয়া হলে গাছ মরে যেতে পারে। বা না মরলেও এটি থেকে ফল আসার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।

সাধারণত প্রতি বিঘা জমিতে এক শ’রও বেশি গাছ লাগানো যায় এবং গাছ লাগানোর এক বছর পর থেকেই ফুল আসতে শুরু করে। আর ফল পাওয়া যায় প্রায় সারা বছর ধরেই।

খুবই সুস্বাদু হলেও ফলটি এখনো অপ্রচলিত ফল হিসেবেই পরিচিত। অর্থাৎ বাজারে এটি ব্যাপকভাবে বিক্রি হয় না।

যদিও কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলছেন কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন চাহিদা বেড়েছে এবং একই সাথে বাড়ছে বাণিজ্যিক চাষও।

সূত্র : বিবিসি