Naya Diganta

কুমার

ছবি: সংগ্রহ

কুমারদে কথা বলছি। এরা মৃৎশিল্পী। নদীবিধৌত পলিমাটির বাংলার মৃৎ শিল্পের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। সে ঐতিহ্যের রূপকার হলেন কুমোর বা কুমার শ্রেণীর পেশাজীবীরা। কুমাররা মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন। এ দেশে কুমার শ্রেণী সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত, তারা ‘পাল’ পদবীতে পরিচিত। বংশপরম্পরায় তারা এ কাজ করে আসছেন। নরম কাদামাটি দিয়ে নিপুণ কৌশলে গড়ে তোলেন বিভিন্ন তৈজষপত্র ও গৃহস্থালীকাজে ব্যবহার্য সামগ্রী। কুমাররা হাঁড়ি, কলসি, ঘড়া, ঘাগড়া, সানকি, প্রদীপ, পাঁজাল বা ধূপতি, গ্লাস, বদনা, ঝাঁঝর, চাড়ি, মটকি, পিঠার সাজ, সরা, ঢাকন, বাটি, ফুলের টব, পুতুল, প্রতিমা, মূর্তি ইত্যাদি তৈরি করেন। এঁটেল মাটি হলো এসব সামগ্রী তৈরির প্রধান উপকরণ। কুমররা এসব সামগ্রী তৈরি করতে চাকযন্ত্রও ব্যবহার করে থাকেন। কাঁচা মাটি দিয়ে এসব সামগ্রী বানানোর পর পুড়িয়ে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রঙ করে সেগুলো বাজারে বা গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। অতীতে নৌকা বোঝাই করে এসব সামগ্রী নিয়ে পাল মশাইরা বেশ কয়েক দিনের জন্য বেরিয়ে পড়তেন। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে সেগুলো বিক্রি করতেন। বিক্রি শেষ হলে বাড়ি ফিরতেন। মাটির এসব সামগ্রী তৈরিতে কুমারদের স্ত্রী ও মেয়েদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বৈশাখ মাস হলো তাদের মলো মাস, এ মাসে তারা কোনো মাটির জিনিষ তৈরি করেন না, শুধু বিক্রি করেন। বেশির ভাগ কুমরা শিবের উপাসক।
প্রাচীনকাল থেকেই এসব সামগ্রী বাংলার মানুষ নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে। সম্প্রতি আধুনিকতার ছোঁয়া লাগায় সেই শিল্পে অনেকটা ভাটা পড়েছে। এখন শহরের প্রায় সবাই ধাতব, প্লাস্টিক, ম্যালামাইন ও চিনামাটির সামগ্রী ব্যবহার করায় কুমার শ্রেণীর পেশা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। তবে নতুন করে মৃৎশিল্পের আর একটি শাখা উন্মোচিত হয়েছে। সেটি হলো নান্দনিক মৃৎশিল্প। এ শাখার মৃৎশল্পীরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন শৌখিনসামগ্রী ও শিল্পকর্ম তৈরি করে থাকেন, ইংরেজিতে একে বলা হয় পটারি শিল্প। প্রাচীনকালের টেরাকোটা বা মৃৎফলকে খোদাই করে সুন্দর সুন্দর শোপিস তৈরি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মূর্তি, অলঙ্কার, নকশি পাত্র, ঘণ্টা ইত্যাদি তৈরি করছেন। ঢাকার প্রায় ৭০০ দোকানে এসব শৌখিন মৃৎসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। পটুয়াখালী হলো এসব পেশাশিল্পীদের পীঠস্থান।