Naya Diganta

উবারের বিরুদ্ধে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ

গাড়িতে না চড়লেও বিল পরিশোধ করার নোটিশ আসে
ভাড়া পরিশোধ করেও আনপেইড দেখানো হয়

অনলাইন অ্যাপভিত্তিক রাইডশেয়ারিং পাঠাও এর চেয়ে উবার ইন্টারসিটি এ দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে উবার এখন ভয়াবহ প্রতারণার ব্যবসায় করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তাদের অভিযোগ, উবার ইন্টারসিটির রাইড শেয়ারিং না করেও অনেক সময় স্বল্প ভাড়া যুক্ত করে তা পরিশোধ করার নোটিশ দেয়া হয়। অনেক সময় সম্পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ করার পরেও অ্যাকাউন্টে নতুন ভাড়া যুক্ত করে আনপেইড দেখানো হয়ে থাকে, যা পরবর্তী রাইড শেয়ারিংয়ের ভাড়ার সাথে যুক্ত করে বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে প্রতারণার সবচেয়ে বড় ফাঁদ হলো উবার কল করার সময় যে এস্টিমেট ভাড়া দেখানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ওই ভাড়ার সাথে আরো কিছু ভাড়া যুক্ত করে বড়সড় বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাত্রীদের সাথে এ ধরনের হয়রানির ঘটনা অহরহ ঘটছে। অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ করার সুযোগ থাকলেও সহজবোধ্য না হওয়ায় এর প্রতিকারও ঠিকমতো মিলছে না। ফলে উবার সার্ভিসে যাত্রীদের হয়রানি ও অসন্তোষ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে।
এমন ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন ফাহমিদা ইসলাম। গত সোমবার তিনি হেমায়েতপুরের আলমনগর সুগন্ধা হাউজিং থেকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে যান। গাড়িতে চড়ার আগে এস্টিমেট ভাড়া দেখানো হয় ৯১১ টাকা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে বিল ধরিয়ে দেয়া হয় ১৩১০ টাকার। ড্রাইভারকে এস্টিমেট ভাড়ার স্কিনশট দেখিয়েও কোনো লাভ হয়নি। পুরো টাকাই পরিশোধ করে রেহাই পান তিনি। আশ্চর্যের বিষয় ওই ভাড়ার সাথে ডিসট্যান্স সারচার্জ যুক্ত করা হয়েছে ২৯৮ টাকা এবং আগের ট্রিপের অমীমাংসিত ভাড়া হিসেবে ৫০ টাকা যুক্ত করা হয়েছে। এর চেয়েও বড় আশ্চর্যের বিষয় হলো পুরো টাকা পরিশোধ করার বেশ কিছুক্ষণ পরে ৩২৩ টাকা যুক্ত করে ১ হাজার ৬৩৩ টাকার নতুন আরো একটি বিল মেইলে পাঠানো হয়েছে। এতে অ্যাপে ৩২৩ টাকা আনপেইড দেখানো হচ্ছে।
উবার কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই টাকা পরবর্তী রাইড শেয়ারিংয়ের সাথে যুক্ত করে বিল প্রদান করা হবে। ভুক্তভোগী ফাহমিদা ইসলাম জানান, রাইড শেয়ারিং না করেও ৫০ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে। আবার পুরো টাকা পরিশোধ করার পরেও মেইলে নতুন বিল পাঠানো হয়েছে। যাতে ৩২৩ টাকা আনপেইড দেখানো হচ্ছে। এটাতো ভয়াবহ প্রতারণা। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যদি অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয় তাহলে এস্টিমেট ভাড়া কিসের ভিত্তিতে দেখানো হয়? এর আগে ২০২০ সালের ২১ আগস্ট হজরত শাহজালাল রহ: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাভারের কলমা পর্যন্ত এস্টিমেট ভাড়া ৭৫৫ টাকা দেখিয়ে ১ হাজার ১৩৭ টাকার বিল ধরিয়ে দেয় উবার। কোনো কথা ছাড়াই সেটাও পরিশোধ করতে বাধ্য হই। এটাতো রীতিমতো যাত্রীদের সাথে প্রতারণা।
আরেক ভুক্তভোগী আহমেদ আতিক। গত ১২ জুলাই উবার ইন্টারসিটিতে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে জামালপুরের বকশীগঞ্জে যান। ৬ হাজার ৭০০ টাকা এস্টিমেট ভাড়া দেখিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে বিল ধরিয়ে দেয়া হয় ৯ হাজার ১১৯ টাকার। উবারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এটাতো ভয়াবহ প্রতারণা। কারণ আমাকে ভাড়া দেখানো হচ্ছে একটা, গন্তব্যে পৌঁছে বিল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে আরেকটা। অনলাইনভিত্তিক অ্যাপ হওয়ায় কিছু করার নেই, পুরো টাকাই পরিশোধ করতে হয়। এ ধরনের বাটপারি মেনে নেয়া যায় না। আহমেদ আতিক বলেন, প্রতিদিন উবারের কয়েক হাজার রাইড শেয়ারিং হচ্ছে। অর্ধেক যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৫০০ টাকাও যদি অতিরিক্ত নেয় তাহলে প্রতিদিন উবারের কয়েক লাখ টাকা বাড়তি আয় হচ্ছে। বেশির ভাগ যাত্রী এই অল্প টাকার জন্য অভিযোগই করে না। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করলেও আশানুরূপ সাড়া মেলে না। ফলে যাত্রীরা হয়রানিতে পড়ছে, উবারের প্রতারণাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের যারা এ বিষয়ে কাজ করে তাদের এ দিকে নজর দেয়া উচিত।
শুধু ফাহমিদা ইসলাম কিংবা আহমেদ আতিকই নয় বরং উবার ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ প্রতিনিয়ত এভাবে প্রতারিত হচ্ছে। এ ছাড়াও উবার চালকদের বিরুদ্ধে গন্তব্য শুনে যাত্রা বাতিল করা, যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার, একজনের ট্রিপ নিয়ে অন্য কাউকে গাড়িতে তোলা এবং যাত্রাপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার মতো অভিযোগতো নিত্যদিনের। এ ছাড়া নারী যাত্রীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে উবার চালকদের বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগ, কেউ হয়রানির শিকার হলে তাকে অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ করতে হয়। তবে অ্যাপের মাধ্যমে কিভাবে অভিযোগ করতে হবে, তাও অনেক গ্রাহক জানেনই না। আবার জানলেও অ্যাপে অভিযোগের বিষয়টি সহজবোধ্যও না হওয়ায় বড় কোনো সমস্যা না হলে অভিযোগ করতে চান না। ফলে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও যাচ্ছে কম, যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ কাজ করছে।
যাত্রীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে উবারের বাংলাদেশী পিআর এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্মকর্তা আসাদ মোবাইলে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করে লিখিতভাবে ইমেইলে পাঠানোর অনুরোধ করেন। গত মঙ্গলবার ইমেইলে চারটি প্রশ্ন পাঠানো হয়। গতকাল পর্যন্ত কোনো জবাব না আসায় অভিযোগের বিষয়ে উবার কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় যেখানে আছে আমরা সেখানেই কাজ করি। উবারের মাধ্যমে কেউ যদি প্রতারিত হয় আর ভুক্তভোগী যদি ভোক্তা অধিদফতরে অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, কেউ অভিযোগ করলে প্রথমে আমরা উভয় পক্ষকে ডাকি, তাদের বক্তব্য শুনি। তারপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়।