Naya Diganta
মৌসুমেও ইলিশ নেই

কারণ উদঘাটন জরুরি

মৌসুমেও ইলিশ নেই

চট্টগ্রামের মিরসরাই সমুদ্র উপকূলে ভরা মৌসুমেও এখন ‘মাছের রাজা’ ইলিশের দেখা মিলছে না বলে নয়া দিগন্তের মিরসরাই প্রতিনিধি জানিয়েছেন। আরো জানা যায়, একনাগাড়ে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বড় আশা নিয়ে মিরসরাই উপকূলের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরতে গেছেন। দেশের অন্যান্য স্থানের উপকূলীয় মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরছেন ঝাঁকে ঝাঁকে। তবে মিরসরাইয়ের জেলেদের শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে। অথচ তাদের ওপর চেপেছে ঋণের দুঃসহ বোঝাও।
গত মঙ্গলবার মিরসরাই উপকূলীয় সাহেরখালি স্লুইস গেটে গিয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, দূর-দূরান্তের শতাধিক মানুষ ইলিশের প্রতীক্ষায়। তাদের প্রত্যাশা, জেলেরা নৌকায় করে সাগরের ইলিশ নিয়ে ভিড়বেন। আর সবাই মাছের জন্য পড়বেন হুমড়ি খেয়ে। কিন্তু না, মাছের চিহ্নও নেই জেলেদের নৌকায়। আবার কোনো নৌকায় আনা হয় সাধারণত কয়েক মণ মাছ। অথচ সেখানে অল্প কয়েক কেজি মাছ আনা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষেও এই চিত্র সবাইকে নিদারুণ হতাশ করে তুলছে। বিশেষত এ উপকূলে এমন চিত্রই যেন মৎস্যজীবীদের নিয়তি। মাত্র দুই বছর আগেও সাহেরখালি ও ডোমখালি পয়েন্টের ইলিশ গোটা মিরসরাই উপজেলার চাহিদা পূরণ করে বাইরেও ইলিশ যেত। আর বর্তমানে মাছ না পেয়ে মৎস্যজীবীরা হতাশা ও ক্ষোভে অন্য পেশায় যেতে চাচ্ছেন।
মিরসরাই অঞ্চলে ইলিশের অভাবের কারণের মধ্যে রয়েছে- বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা, ড্রেজিং করে সাগর থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলন, সাগরে চর সৃষ্টি হওয়া, জাহাজ চলাচলসহ নানান কারণে ইলিশ প্রজননের পয়েন্ট বিঘিœত হওয়া প্রভৃৃতি। কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে, শিল্পাঞ্চল স্থাপনের পরিণাম টের পাওয়া যাচ্ছে।
সাগর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মৎস্যজীবীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞায় দীর্ঘ দিন কষ্টের মধ্যে ছিলাম। ইলিশ মৌসুমে নৌকা এবং জাল ক্রয় ও মেরামতের জন্য ঋণ হয়ে গেছে বহু। আশা করেছি, সাগর থেকে ইলিশ ধরে চার-পাঁচ মাসে হলেও ঋণ শোধ করা যাবে। কিন্তু মাছ না পেলে তো ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়।
জনৈক প্রবাসী বলেছেন, ‘শৈশবে সাহেরখালি স্লুইস গেট থেকে অনেক ইলিশ কিনেছি। মাত্র দুই বছর আগেও সেখানে ইলিশ ক্রয় করেছি। এবার ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর দু’দিন এসেছি। কিন্তু ইলিশ নেই। তাই কিনতে পারছি না। আজো তাই খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।’
মৎস্যজীবীদের জন্য জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত কাক্সিক্ষত সময়। তাই মূলত বর্ষার এ তিন মাসের জন্য জেলেরা প্রহর গোনেন। এই সময়ে ধরা ইলিশ বিক্রি করেই, তাদের বছরজুড়ে সংসার চালাতে হয়। উল্লেখ্য, উত্তর চট্টগ্রামে মিরসরাই উপজেলায় ২৯টি জেলেপাড়া আছে। তাদের পরিবার পাঁচ হাজারটি। ৪২০টি মৎস্যজীবী পরিবার রয়েছে কেবল সাহেরখালিতেই। বৃদ্ধ এক মৎস্যজীবী জানান, বাল্যকাল থেকে আমার পৈতৃক পেশা মাছ ধরা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি, অন্যান্য মাছও পাওয়া যায় না। সাগরতীরে শিল্পাঞ্চলের কারণে মাছ আর মিলছে না। কুমিরা-সীতাকুণ্ডেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের ফিরতে হয় ফাঁকা হাতে। মিরসরাই উপকূলে ইলিশ ধরার জন্য ১৫০টির মতো ইঞ্জিন নৌকা আছে। আজকেও ৪০-৫০টি নৌকা মাছ ধরার জন্য সাগরে গেছে। কিন্তু গভীর সাগরেও মাছ নেই। ছোট্ট একটি ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে গেলেও ৭০০ টাকা লাগে এর জ্বালানির পেছনে। অথচ দিনভর সাগরে থেকেও ৪০০ টাকার মাছ পাওয়া যায় না। স্থানীয় উপকূলীয় জেলে সমন্বয় পরিষদ মনে করছে, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের স্লুইস গেটের দরজাগুলো খুলে দেয়ার ফলে সাগরে স্রোত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মিতব্য কলকারখানার বর্জ্য সাগরকে দূষিত করছে। এটি ইলিশ প্রজননের পথে বিরাট বাধা। সাগর থেকে ড্রেজিং করে বালু তুললেও ক্ষতি হতে পারে। ফলে চলতি মৌসুমেও মিরসরাই-সন্দ্বীপ চ্যানেলে ইলিশ নেই। এখন আগামী পূর্ণিমার জো’র দিকে সবাই তাকিয়ে। মিরসরাইয়ে ইলিশ না পাওয়া নিয়ে প্রশাসনও উদ্বিগ্নœ। এর কারণ তাদের মতে, ‘পরিবেশের পরিবর্তন হওয়ায় উপকূলে মাছের বিচরণস্থলের পরিবর্তন। এখন মাছ আবার এখানে আনা অসাধ্য।’
মিরসরাইয়ে ইলিশের অভাবের সঠিক কারণ অবিলম্বে কর্তৃপক্ষ উদ্ঘাটন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী।