Naya Diganta
অর্থনীতির অধোগতি

জীবনযাত্রার মান কমছে

অর্থনীতির অধোগতি

দেশের অর্থনীতির সঙ্কট সহসা কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ছে। কমেছে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স। যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে চার মাসেরও কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে অন্তত সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের সংস্থান থাকা উচিত। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। জীবনযাত্রার মান কমেছে। বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ ভয়ানক কষ্টে আছে।
অর্থনীতির এ ভাটার টান রোধে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নেয়া হয়েছে কৃচ্ছ্রতার নীতি। জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করেছে। দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার চেষ্টা চলছে। সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানির ব্যয় ২০ শতাংশ কমাতে বলা হয়েছে। আমলাদের বিদেশ সফর বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অর্থছাড় স্থগিত করা হয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ অর্থ ছাড় করা হচ্ছে না।
সব ধরনের সরকারি গাড়ি ও জলযান কেনা স্থগিত করা হয়েছে। সেই সাথে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, আপ্যায়ন ও ভ্রমণব্যয়সহ মনিহারি, কম্পিউটার-আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র কেনাকাটা ৫০ শতাংশ বন্ধ করা হয়েছে। শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বলা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী ব্যয় সম্পূর্ণ স্থগিত করেছে। এসব উদ্যোগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে সরকারি ব্যয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
কিন্তু এসব উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে স্পষ্ট নয়। গণমাধ্যমে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে তাতে স্পষ্ট, বেশির ভাগ উদ্যোগ পণ্ড হওয়ার পথে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ হয়নি। গাড়ির জ্বালানি ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল করতে রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন বিপুল অর্থ ছাড় করতে হচ্ছে।
লোডশেডিংয়ের বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিল্পকারখানা ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে। গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের একটি হিসাব এসেছে সহযোগী একটি দৈনিকের রিপোর্টে। তাতে দেখা যায়, দৈনিক ২০০-২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে সেখানে টেক্সটাইল সামগ্রী উৎপাদনে ধস নেমেছে। গার্মেন্ট মালিকরা গণমাধ্যমকে বলছেন, রফতানির প্রবৃদ্ধি আগামী দিনে কমে যাবে। অথচ বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে রফতানি বাড়ানোই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
আরেকটি উপায় আছে ডলারের সঙ্কট মোচনের। সেটি হলো- রেমিট্যান্স বাড়ানো। প্রবাসীদের বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানো নিশ্চিত করা ও দেশ থেকে মানিলন্ডারিং কঠোরভাবে বন্ধ করা। তেমন কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
ডলার বাঁচাতে আমদানির ওপরও কিছু বিধিনিষেধ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে ডলারের কিছু সাশ্রয় হয়তো হচ্ছে, কিন্তু সার্বিকভাবে আমদানি কমে যাচ্ছে অনেকটাই। আমদানি কমলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্প-কারখানা। বিলাসদ্রব্য আমদানি বন্ধ হলে সমস্যা ছিল না; কিন্তু তৈরী পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি এবং অন্য সব শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে টান পড়লে পুরো শিল্প খাতের জন্য তা হবে বিপর্যয়কর। বিদ্যুৎ ঘাটতির একটি ধারাবাহিক প্রভাবও পড়বে অন্য সব ক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পেলে বেকারত্ব বাড়বে নিশ্চিত। প্রভাব পড়বে কৃষিতেও। এ বছর বর্ষাকালে বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জায়গায় আমন চাষ ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে সেচ দেয়া যায়নি।
বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম পর্যায়ক্রমে কমে আসছে; কিন্তু দেশের বাজারে তার কোনো প্রতিফলন নেই। সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সঙ্কট উত্তরণে বিদেশী ঋণ পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সেটি পাওয়া গেলে সঙ্কটের তীব্রতা কিছু কমতে পারে।