৪০০ ও ১০০ মিটারে দ্রুততম হলেন জেল খাটা বাবার ছেলে
- ১৮ জুলাই ২০২২, ১৪:৫৫
এক বছর আগে টোকিয়োয় অল্পের জন্য স্বপ্ন ছোঁয়া হয়নি। সোনা এবং তার রুপোর মাঝে তফাৎ গড়ে দিয়েছিল মাত্র ০.০৪ সেকেন্ড। ওরেগনে সেই ভুলটা আর করলেন না ফ্রেড কার্লে।
নিজের দেশেরই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জিতে নিলেন সোনা। বার্তা দিয়ে রাখলেন, উসাইন বোল্টের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি রয়েছে।
রোববার ৯.৮৬ সেকেন্ড সময়ে ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছেন কার্লে। বোল্টের বিশ্বরেকর্ড ৯.৫৮ সেকেন্ডের ধারের কাছে নেই সেই সময়। তবে কার্লে স্বপ্ন দেখেন, একদিন ঠিক বিশ্বের দ্রুততম মানব হবেন। ছাপিয়ে যাবেন বোল্টকে।
বিশ্বের দ্রুততম মানুষ হওয়ার স্বপ্নই তো তাকে টেনে এনেছে ৪০০ মিটার থেকে ১০০ মিটারে। জীবনের শুরুটা হয়েছিল ৪০০ মিটার দৌড় এবং ৪x৪০০ মিটার রিলে দিয়ে। বছর কয়েক আগে থেকে ১০০ এবং ২০০ মিটারে দৌড় শুরু করেন। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে গলায় ঝুলল সোনার পদক।
ওরেগনের হেওয়ার্ড ফিল্ডে দৌড় শেষ হওয়ার পর বুকে বেশ কয়েক বার চাপড় মারলেন। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে তখন তারই নাম। সাথে ‘ইউএসএ’, ‘ইউএসএ’ চিৎকার। হওয়াই স্বাভাবিক। আমেরিকার বুকে সে দেশেরই তিন দৌড়বিদ ১০০ মিটারে সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ জিতলেন!
দেশবাসীর গর্ব হবে না? কার্লেও প্রতিটি মুহূর্ত শুষে নিচ্ছিলেন। কখনো আমেরিকার পতাকা গায়ে ট্র্যাকের উপর দিয়ে দৌড়াচ্ছেন, কখনো নাগাড়ে হাত মেলাচ্ছেন দর্শকদের সাথে। তবে কার্লেকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তারাই জানেন কতটা কষ্ট, কতটা পরিশ্রম জড়িয়ে রয়েছেন তার সাফল্যের পিছনে?
জন্মের দু’বছরের মধ্যেই জীবনটা ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল কার্লের। বাবা-মায়ের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় ভাই-বোনেদের। গুরুতর অপরাধ করে বাবা জেলে যান। মাও অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ছোট্ট কার্ল এবং তার চার ভাই-বোনের দেখাশোনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ভার্জিনিয়াই। তার নিজের ছেলে-মেয়েও ছিলেন। সব মিলিয়ে, একই ছাদের তলায় বেড়ে উঠেছিলেন ১৩ জন।
এক ওয়েবসাইটের কলামে কার্লে লিখেছেন, ‘কাকিকে আমি মিম বলে ডাকি। অসাধারণ একজন নারী, যে ব্যক্তিত্ব আজ পর্যন্ত কারোর মধ্যে আমি দেখিনি। যত্ন যেমন নিতে পারেন, তেমন প্রয়োজনে শাসনও করতে পারেন। ছেলে-মেয়েদের খুব ভালোবাসে। একই সাথে প্রচণ্ড শৃঙ্খলাপরায়ণ।’
ছোটবেলা থেকে পাঁচ ভাই-বোনকেই খেলাধুলোয় মদত দিয়েছেন। ফলও মিলেছে। কার্লের ছোটভাই ৪০০ মিটারে দৌড়ান। কলেজে পড়ার সময় ভাইয়ের সাথে রিলে দৌড়ে পদকও জিতেছেন কার্লে। বড় ভাই ডেমারিয়া স্প্রিন্ট এবং হাই জাম্পে পারদর্শী। বোন ভার্জিনিয়া লং জাম্প এবং হাই জাম্পে অংশ নেন। কাকির সাথে কার্লের এতটাই ভালো সম্পর্ক যে, বিশ্বের যেখানেই থাকুন একবার অন্তত কাকির সাথে কথা হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার