Naya Diganta

অধিনায়ক স্টোকসের প্রশংসায় নাসের

জো রুট দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া। এরপর কে হবেন ইংলিশদের দলপতি এই দৌড়ে সবচেয়ে উপযুক্ত ‘প্রার্থী’ তিনিই ছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে বেন স্টোকসকে নিয়ে ‘শঙ্কা’ ছিল, এটি বাড়তি বোঝা হয়ে ভর করবে না তো তার ওপর? মাঠের পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত; কিন্তু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে না তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।
তবে এখন পর্যন্ত অধিনায়কত্ব স্টোকসের ওপর চাপ ফেলছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং রোমাঞ্চকর এক ধরনের ক্রিকেটই খেলছে স্টোকসের দল, টেস্ট ক্রিকেটের ধারাই বদলে দেয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে ৩৭৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়া স্টোকস তাই বলেন, ‘এক-দুই সপ্তাহ আগে ৩৭৮ (তাড়া করা) ভীতি-জাগানিয়া হতো। তৃন্তু এখন সব ঠিকঠাক।’
সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলছেন, শুরুতে স্টোকসকে নিয়ে যেসব শঙ্কা ছিল, সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। কে কী বলল, তাতে যে পাত্তা দিতে বয়েই গেছে স্টোকসের! যোগ করেন ‘মাঠে স্টোকসের নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত যুগান্তকারী। সে যেভাবে এই কাজটা করছে, ফিল্ডিং সাজাচ্ছে, সেটি আসলে অনেক বেশি মুগ্ধ করার মতো।’ ‘আমি আসলে তার একগুঁয়ে ভাবটা পছন্দ করি। (এজবাস্টনে) প্রথম ইনিংসে ভারতের টেলএন্ডারদের শর্ট বল করেছিল ইংল্যান্ড, যেটি বুমেরাং হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে এরপর স্টোকস কী করল? ওই একই। এবার ৯২ রানে সাত উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে গেল ভারত। আর ইংল্যান্ড পেল ইতিহাস গড়ার সুযোগ।’
গত অ্যাশেজে ভরাডুবির পর থেকেই পরিবর্তনের শুরু ইংল্যান্ডের। একে একে সরে গেছেন বোর্ডের ছেলেদের ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাশলি জাইলস, কোচ ক্রিস সিলভারউড, টেস্ট অধিনায়ক জো রুট। ইংল্যান্ডকে ৪৫টি টেস্টে নেতৃত্ব দেয়া নাসের জানান, ‘কে কী বলল, তাতে স্টোকসের কিছু যায় আসে না। সে নিজের মতো করে করছে এগুলো। স্টুয়ার্ট ব্রডকে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামানোর জন্য প্রস্তুত রাখছে, ব্রডকে আপনি কবে রক্ষণাত্মক শট খেলতে দেখেছেন?’ তবে নাসের বলছেন, স্টোকস আসলে ভিন্ন একটা ভূমিকা পালন করছেন, ‘এ মুহূর্তে স্টোকস আসলে সুরটা ধরিয়ে দিচ্ছে। দলকে একটা বার্তা দিচ্ছে। তবে আমার মনে হয় সে নিজেও থিতু হবে। কারণ সে খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার, রুট-বেয়ারস্টোর সাথে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।’
সফলতার মূল ‘বাজবল’
ইংল্যান্ড টেস্ট দল বর্তমানে যে কৌশলে খেলছে তাকে ‘বাজবল’ বলে। ‘বাজবল’ শব্দটি এসেছে ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের ডাকনাম ‘বাজ’ থেকে। খেলোয়াড় জীবনে ডাকাবুকো হিসেবে পরিচিত ম্যাককুলাম সেই মানসিকতাই ঢুকিয়েছেন ইংল্যান্ড দলে। টার্গেট যাই হোক, ভয় পান না তারা। খেলা চলাকালে ভাষ্যকার শব্দটি প্রায়ই বলছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেখা গেছে। যার প্রমাণ এই বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড। ১৭ টেস্টে যে দলের জয় একটি, সেই দলেরই অধিনায়ক ও কোচ বদলের পর টানা চার ম্যাচ জয়।
পরিবর্তনের মূলে ‘বাজবল’। অধিনায়ক স্ট্রোকস জয়ের পর যা বললেন, ‘পাঁচ সপ্তাহ আগেও ৩৭৮ রান শুনলেই অনেকটা ভীত ছিলাম। এটা এখন কোনো ব্যাপারই না। যার প্রমাণ দিয়েছেন বেয়ারস্ট্রো ও রুট ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে জয় নিশ্চিত করে। যার সর্বশেষ প্রমাণ ভারতের বিপক্ষে শেষ টেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে। ‘বাজবল’ নীতির মূল কথা ভয়ডরহীন ক্রিকেট। কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার নীতি বাদ দিয়ে আক্রমণে রান তাড়ার নতুন নিয়ম চালু করেছে ইংল্যান্ড। বর্তমান ইংল্যান্ড দলের সাথে মানিয়েছে এটি। কৌশল অনুযায়ী ৩০ ওভারের পর রান তোলার গতি দ্বিগুণ যায়। ভারতের বিপক্ষেও রুট ও বেয়ারস্ট্রোর ব্যাটিংয়ে ‘বাজবল’ নীতি ফুটে উঠেছিল। যার প্রমাণ, জয়ের কাছাকাছি গিয়েও জাদেজার স্পিনে চারবার রিভার্স সুইপ করেছেন রুট। শার্দুল ঠাকুরের পেস বলে রিভার্স-স্কুপ করে স্লিপের ওপর দিয়ে রুটের ছক্কা কৌশলের সবচেয়ে বড় উদাহরণ।