Naya Diganta

বগুড়ায় খাজনা আদায়ে বেপরোয়া ইজারাদাররা

বগুড়া সদরের সাবগ্রাম পশুর হাট : নয়া দিগন্ত

বগুড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। কিন্তু হাটের খাজনা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন ক্রেতারা। বেশির ভাগ ইজারাদার খাজনা আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত খাজনার (হাসিল) দ্বিগুণ টাকা দিতে হচ্ছে ইজারাদারকে। এ ছাড়া পশু বিক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায়ের নিয়ম না থাকলেও জোর করে তাও আদায় করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোনো কোনো উপজেলা প্রশাসন কঠোর হলেও তাদের নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। টাকার পরিমাণ উল্লেখ না করেই ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে খাজনা আদায়ের রসিদ। বগুড়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে কোরবানির হাটে বড় গরুর জন্য ৫০০, ছোট গরুর জন্য ৪০০ এবং ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বগুড়া সদর, শাজাহানপুর ও শিবগঞ্জের হাটগুলোতে এমন পরিস্থিতি চলছে।
বগুড়া সদরের সাবগ্রাম পশুর হাট। এবার জায়গার সঙ্কটের কারণে রাস্তার ওপর পশুর হাট বসেছে। ক্রেতারা পছন্দের গরু-ছাগল কিনে নিয়ে ফিরছেন বাড়িতে। কিন্তু পশুক্রয়ের পর খাজনা দিতে গিয়ে চমকে উঠতে হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদর নিকট থেকে জানা যায়, হাট ইজারাদারপ্রতি গরুর জন্য ক্রেতার কাছে থেকে এক হাজার টাকা ও বিক্রেতার কাছে থেকে ২০০ টাকা খাজনা আদায় করছেন। ছাগল কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। বিক্রেতার কাছে ইজারাদার আদায় করছে ১০০ টাকা এবং ক্রেতার নিকট থেকে ৪০০ টাকা।
এ ব্যাপারে সাবগ্রাম হাটের ইজারাদার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, খাজনা বেশি না নিয়ে উপায় নেই। এ হাটের মূল্য এক কোটি টাকা। হাটের জায়গা নেই। সারা বছর গরু-ছাগলের হাট লাগে না। শুধু ঈদের সময় এই হাট লাগে। টাকা বেশি না নিলে ইজারার টাকা কিভাবে উঠবে। শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ী হাটে প্রতিটি গরুর জন্য ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আদায় করেন ইজারাদারের প্রতিনিধিরা। আর ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। কিন্তু রসিদের কোথাও টাকার কথা উল্লেখ নেই।
অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে রুহুল আমিন নামে ইজারাদারের এক প্রতিনিধি তা অস্বীকার করে বলেন, হাটে কারো কাছে থেকে বেশি খাজনা নেয়া হচ্ছে না। পরে শাজাহানপুর ইউএনও আসিফ আহমেদ পরিদর্শনে গিয়ে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ পান। ঘটনার সত্যতা পেয়ে ইজারাদারকে সতর্ক করেন। শিবগঞ্জ উপজেলায় সরকার নির্ধারিত ১৪টি পশুর হাট আছে। মঙ্গলবার উপজেলার আলিয়ার হাটে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন ইজারাদার।
গত ২৭ জুন বগুড়া জেলা প্রশাসন থেকে কোরবানির হাটের ব্যবস্থাপনায় কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু বাঁধার খুঁটি স্থাপন এবং নির্ধারিত রেইটে টোল আদায় নিশ্চিতকরণ। কিন্তু হাটগুলোয় এসব নিয়ম মানার কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। কোরবানির হাট শুরু হওয়ার পর থেকে এমন অনিয়ম হলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা হাট পরিদর্শনের গিয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেননি।
কোরবানি পশুর ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে জানতে চাইলে বগুড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) উজ্জ্বল কুমার ঘোষ জানান, হাটের খাজনা আদায়ের রসিদে টাকার মূল্য অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে। সরকার পশুর খাজনা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বড় গরুর ক্ষেত্রে এই মূল্য হবে ৫০০ টাকা। ছোট গরুর জন্য ৪০০ এবং ছাগল-ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা। তবে কোরবানির হাটের দায়িত্বে না থাকায় এর বেশি কিছু বলতে চাননি উজ্জ্বল কুমার ঘোষ।
তবে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দেখার জন্য বলবেন বলে জানান।