Naya Diganta

ব্রিটেনে ৫ মন্ত্রীর পদত্যাগ বেকায়দায় জনসন

একের পর এক কেলেঙ্কারিতে এরই মধ্যে বেকায়দায় পড়া ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের জন্য আরেক বিপর্যয় হয়ে এসেছে পাঁচ মন্ত্রীর পদত্যাগ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একে একে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটেনের পাঁচ মন্ত্রী। মঙ্গলবার ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের পদত্যাগের পর বুধবার একই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির শিশু ও পরিবারবিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স, জুনিয়র পরিবহন মন্ত্রী লরা ট্রট ও স্কুলবিষয়ক মন্ত্রী রবিন ওয়াকার। তিনি বলেন, বরিস জনসনের নেতৃত্বে তার আস্থা নেই।
লরা জানিয়েছেন, তিনি সরকারের ওপর ‘আস্থা’ হারানোর জন্য পদত্যাগ করছেন। উইল কুইন্সও বলেছেন, এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। মন্ত্রিসভার চার মন্ত্রী খোয়ানোকে বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য শেষ ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এদিকে ব্রিটেনের নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চীফ অব স্টাফ স্টিভ বারক্লে। এছাড়া, ইরাকি বংশোদ্ভুত নাদিম জাহাবিকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বরিস জনসন।
কোভিড বিধি লঙ্ঘন করে একাধিক পার্টি আয়োজন নিয়ে পানি ঘোলা হয়েছে আগেই। সেই কেলেঙ্কারিতে জনসন ক্ষমা চেয়েও পার পাননি। অনেক দিন থেকেই পদত্যাগের চাপে ছিলেন তিনি। গত মাসে জনসন পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে টিকেছেন। কিন্তু জনসনের নেতৃত্ব নিয়ে তার নিজ দল এবং এর বাইরে এখনো রয়ে গেছে অসন্তোষ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই যোগ হওয়া নতুন আরেক কেলেঙ্কারিতে জনসন মঙ্গলবার ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টা নেয়ার পরই তাকে আরো বেকায়দায় ফেলে নাটকীয়ভাবে পদত্যাগ করেন দুই মন্ত্রী।
টোরি (কনজারভেটিভ) এমপি ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ সম্পর্কে আগে থেকেই জানা থাকার পরও তাকে সরকারের ডেপুটি চিফ হুইপ করার বিষয়টি নিয়ে এ দিন ক্ষমা চাইছিলেন জনসন। তিনি বলছিলেন, ক্রিসকে সরকারি পদে নিয়োগ করে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি ‘ভুল’ করেছেন। এর জন্য ‘অত্যন্ত দুঃখিত’ বলে জনসন মন্তব্য করেন এবং বলেন, এই নিয়োগের কারণে যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী।
কিন্তু জনসনের এই কথার মাত্র কয়েক মিনিট পরই পদত্যাগ করেন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। দুইজনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগের কারণ জানিয়েছেন এবং কেলেঙ্কারিতে নিমজ্জিত একটি প্রশাসন পরিচালনায় জনসনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে সর্বশেষ যৌন কেলেঙ্কারির আরেক নতুন ঘটনা সামনে আসে এবং তাকে টোরি এমপির পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
ক্রিসের বিষয়টি নিয়ে শোরগোল জনসন যেভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছেন তাতে বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি টোরি এমপিদেরও সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। উপরন্তু ক্রিসের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি জনসনের জানা থাকা নিয়েও ক্ষুব্ধ হয়েছেন এমপিরা।
এ দিকে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগের পর একটি জরিপ চালিয়েছে জরিপ সংস্থা ইউগভ। এতে অংশগ্রহণকারীদের ৬৯ শতাংশই বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরিস জনসনের পদত্যাগ করা উচিত। ২০১৯ সালে জনসনকে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের মধ্যেও ৫৪ শতাংশ এখন তার পদত্যাগ চায়। পদত্যাগ না করে বরিস জনসনের উচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। এমন মত দিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৮ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৮ শতাংশ অবশ্য মনে করছেন, বরিস জনসন পদত্যাগ করবেন না।