Naya Diganta
করোনা সংক্রমণ আবার বাড়ছে

সতর্কতাই বড় প্রতিষেধক

করোনা সংক্রমণ আবার বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অনেক দেশেই নতুন করে সংক্রমিত হতে শুরু করে ভাইরাসটি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এরই মধ্যে প্রায় দুই হাজার নতুন রোগী শনাক্ত ও সাতজনের বেশি মারা গেছেন। অথচ গত এপ্রিল ও মে মাসে গড়ে ৫০ জনেরও কম সংক্রমিত হন। চলতি মাসের শুরুতে শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে ছিল, এখন বেড়ে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালগুলো নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী আর অক্সিজেন সরবরাহ।
এবারের সংক্রমণের কারণ করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টেরই ভিন্ন আরেকটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা উপধরন। এটিকে বলা হচ্ছে বিএ.৫। এটি ঢাকায় প্রথম শনাক্ত হয়েছিল গত ১৯ মে। আর ওমিক্রন ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৬ ডিসেম্বর। বিএ.৫ উপধরনটি খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। গত মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত এক হাজার ৯৯৮ জনকে শনাক্ত করা হয়। এদের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআর,বি গত মঙ্গলবার গবেষণার তথ্য প্রকাশ করে জানায়, চলতি বছরের ১৪ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ছয় সপ্তাহে এই সাব-ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঘটে সবচেয়ে বেশি। এ সময়ের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়া ৫২ জনের মধ্যে ৫১ জনই বিএ.৫ সাব-ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। বাকি একজন বিএ.২ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হন।

এতদিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের যেসব টিকা দেয়া হচ্ছে তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় আছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন বিএ.৫ সংক্রমিত ৪০ জন রোগীর মধ্যে ৩৮ জনই করোনা টিকার কমপক্ষে একটি ডোজ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন আবার টিকার বুস্টার ডোজও নেন। ২১ জনের নেয়া ছিল দুই ডোজ টিকা ও একজন টিকার শুধু একটি ডোজ নিয়েছিলেন।
করোনার নতুন এই উপধরনটি যে খুব বেশি তীব্র এমন নয়। এতে আক্রান্ত ৩৯ জন রোগীর মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ ছিল। একজনের মধ্যে কোনো উপসর্গই ছিল না। কিন্তু তীব্রতা কম বলে এটিকে উপেক্ষা করা মোটেও উচিত নয়। আবারো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসটি। ফলে মৃত্যুও বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। বিশেষজ্ঞরা টিকা নেয়া ও সামাজিক দূরত্বসহ সব রকমের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বজুড়েই আবার বাড়ছে। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৩২ জন। আর মৃতের সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন দুই হাজার ৯৪ জন।
দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে। রাজধানীর করোনা চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলোতে রোগীর তেমন চাপ নেই। তবে সামাজিক মাধ্যমসহ নানাভাবে জানা যাচ্ছে, বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগের বাহ্যিক লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকায় অনেকে সতর্ক হচ্ছেন না। কিন্তু সামান্য জ্বর নিয়ে টেস্ট করালেও করোনা পজিটিভ আসছে। এ অবস্থায় সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। সামনে কোরবানির ঈদ। চলছে পশুহাটে বেচাকেনা। এতে সমাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত। এর পরিণাম খারাপ হতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া দরকার।
দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। আর ১৮ মার্চ প্রথম এক রোগীর মৃত্যু হয়। ওই বছরের শেষ দিকে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত করোনার ডেল্টা ধরন ব্যাপক আকার ধারণ করে। বছরের শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও এ বছরের শুরু থেকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার বিস্তার আবারো বাড়তে শুরু করে।