Naya Diganta

দুই উড়োজাহাজের সংঘর্ষ তদন্তে বিমান মন্ত্রণালয়ও

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অত্যাধুনিক দু’টি উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দু’টি উড়োজাহাজেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাদের গাফিলতিতে রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থা বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার ঘটনার রহস্য খুঁজে বের করতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদাভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) মো: মহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের গঠিত কমিটিতে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেনÑ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বিমান ও সিএ) মো: নজরুল ইসলাম সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (এয়ারওয়ার্দিনেস স্ট্যান্ডার্ড) আব্দুল কাদের, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাত ৯টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দু’টি উড়োজাহাজের সংঘর্ষে উভয়টির ডানার অংশ দুমড়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিমানের বলাকা ভবন সূত্রে জানা যায়, হ্যাংগারে আগে থেকেই মেইনটেইন্সের জন্য দাঁড় করানো ছিল বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজটি। ওই অবস্থায় সিঙ্গাপুর থেকে ফ্লাইট শেষ করে ঢাকায় অবতরণ করা বিমানের অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফট ড্রিমলাইনানের (বোয়িং৭৮৭) আর কোনো ফ্লাইট শিডিউল সেদিন না থাকায় প্রকৌশল বিভাগের কর্তব্যরতরা সেটিকে হ্যাংগারে নিয়ে যান। হ্যাংগারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা মনে করেছিলেন, বোয়িং-৭৩৭ এর ডানার সাথে বোয়িং ৭৮৭ (ড্রিমলাইনের) ডানায় কোনো সংঘর্ষ লাগবে না। কারণ ৭৩৭ থেকে এয়ারক্রাফট থেকে ড্রিমলাইনার ৭৮৭ এর ডানার উচ্চতার সাইজ একটু বড়। যখন ৭৮৭ এয়ারক্রাফটটি পুশ কার্ড দিয়ে টো করে হ্যাংগারে প্রবেশ করানো হয় তখন তারা দেখতে পান দুই উড়োজাহাজের দু’টি ডানার সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। তখন আর তাদের কিছুই করার ছিল না। এরপরই বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগ থেকে বার্তা দিয়ে বিমান ম্যানেজমেন্টকে দুর্ঘটনার খবর জানানো হয়। রাতেই বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হ্যাংগার এলাকা পরিদর্শন করতে যান।
এ দিকে গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দুর্ঘটনার প্রাথমিক বিষয় প্রসঙ্গেনয়া দিগন্তকে বলেন, বিমানের বোয়িং ৭৮৭-৮০০ এর ডানার পুরো অংশজুড়ে সমান। অপর দিকে বোয়িং ৭৩৭-এর ডানার পুরো অংশটা সমান হলেও শেষের দিকে দুই থেকে আড়াই ফুট উঁচু এবং বাঁক করানো। সংশ্লিষ্টরা মনে করেছিলেন, ৭৩৭-এর ওপর দিয়ে ড্রিমলাইনার ভেতরে ঢুকে যাবে। কিন্তু পরে শেষ প্রান্তের ডানা উঁচু হওয়ায় সংঘর্ষ লেগে যায়। প্রাথমিকভাবে এটি অসাবধানতার কারণে হয়েছে বলে মনে হচ্ছে তাদের কাছে। তবে সংঘর্ষে দু’টি বিমানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মেরামত করা ছাড়া এয়ারক্রাফট দু’টির উড্ডয়ন করানো সম্ভব নয়। তারা বলছেন, এখন এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিই খুঁজে বের করবে, আসলে ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো কিছু রয়েছে কি না।
এর আগে বিমানের চিফ অব সেফটি ক্যাপ্টেন এনামুল হক তালুকদারকে প্রধান করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরব রয়েছেন।