Naya Diganta

যমুনার ভাঙনে মানবেতর জীবন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নে নদীভাঙনের দৃশ্য : নয়া দিগন্ত

যমুনার পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী গালা ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ওই ইউনিয়নের মার্জান, ফকিরপাড়া ও বিনোটিয়া গ্রামের চারটি পয়েন্টে ভাঙনে কমপক্ষে ২০টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন ব্রহ্মহ্মহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এর ফলে ওই এলাকার মানুষজনের মধ্যে প্রতিনিয়তই ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিনোটিয়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও আব্দুল করিম জানান, প্রায় ১২ বছর ধরে যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ সংস্কার করা হয় না করার ফলে বাঁধটি দুর্বল হয়ে এর বিভিন্ন স্থানে ধস শুরু হয়েছে। অন্য দিকে সর্বস্ব হারিয়ে বাঁধে আশ্রয় নেয়া মার্জান গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, আবু জাফর, হালিমা খাতুন ও জয়ফল খাতুন জানান, অব্যাহত ভাঙনের ফলে তাদের গ্রামের ১৫টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এসে তারা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটালেও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বর ও উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে কেউ তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার গালা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন বলেন, ২০০৯ সালে যমুনার তীর সংরক্ষণ বাঁধটি নির্মাণের পর থেকে সঠিকভাবে তদারকি ও সংস্কার না করায় এবং একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ড্রেজারের বছরের পর বছর নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলেই এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও আজ পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি জানান, বাঁধে আশ্রয় নেয়া ১০০ মানুষের মাঝে মাথাপিছু জিআর এর ১৫ কেজি চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত এলাকায় গত সোমবার পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। বর্তমানে নদী ভাঙন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি জানান, সর্বস্ব হারিয়ে যারা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় খাবার বিতরণ ও রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে তাঁবুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা অব্যহত রয়েছে এবং ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আছে।