Naya Diganta

সব বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি

ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ দেশের সব বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে গত ২৩ জুন এনসিটিবি প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার ও শিক্ষাক্রম রূপরেখা সংশোধনপূর্বক জনস্বার্থে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, সঙ্গীত এবং কারিগরিসহ সব শাখায় আবশ্যিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের সভাপতি ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান ও মহাসচিব প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, প্রথম পাবলিক পরীক্ষা এসএসসির সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা বোর্ড পরীক্ষা থেকে ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়েছে । এখন যে পাঁচটি বিষয়ের বোর্ড পরীক্ষা হবে তা হলোÑ বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান। আর যে পাঁচটি বিষয়ের বোর্ড পরীক্ষা হবে না, তা হলো- জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি (জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা : পৃষ্ঠা-৯৭)। তাহলে ধর্মশিক্ষা আছে মাত্র স্কুলের ক্লাস ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার জন্য। এতে কি ধর্মশিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকল? বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ধর্মশিক্ষা কখনোই বোর্ড পরীক্ষার বাইরে ছিল না।
বিবৃতিতে তারা বলেন, শুধু বোর্ড পরীক্ষার বাইরে ছুড়ে ফেলেই ক্ষান্ত হয়নি, ধর্মশিক্ষার ক্লাসসংখ্যা বা শিখন ঘণ্টাও অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় নির্মমভাবে সঙ্কোচন করা হয়েছে। দশম শ্রেণীর ধর্মশিক্ষার বার্ষিক শিখন ঘণ্টা বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের চেয়ে ১০১টি করে কম। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে নতুন রূপরেখায় ধর্মশিক্ষার কোনো অস্তিত্বই নেই। আছে ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা’ নামের শিখন ক্ষেত্রের কথা। এতে আদৌ কোনো ধর্মশিক্ষার বই আবশ্যিক এবং বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত থাকবে কি না, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। ফলে জাতীয় শিক্ষাক্রমের বর্ণনাই ভরসা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১২ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রমের ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য ছয়টি শাখা রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, ইসলাম শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সঙ্গীত। এর মধ্যে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও সঙ্গীত, এই চার শাখায় ধর্ম শিক্ষার কোনো আংশিক বা ঐচ্ছিক পাঠও নেই। শুধু মানবিক শাখার ঐচ্ছিক ১৭টি গুচ্ছ বিষয়ের মধ্যে অপাঙ্ক্তেয় অবস্থায় ইসলাম শিক্ষা রয়েছে, যা বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত নয়। শুভঙ্করের ফাঁকির আরো সূক্ষ্ম কাণ্ড হলো, ইন্টারে খোদ ইসলাম শিক্ষা নামেই একটি শাখা রাখা হয়েছে, যাতে তিনটি আবশ্যিক বিষয়ের একটি হচ্ছে আরবি। মূলত এই শাখাটি কিতাবে থাকা কাজীর গরুর মতো। এ শাখাটি প্রচলিত নেই, এর জন্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় না; এ বিষয়টির কোনো পাইলটিং তো দূরে থাক, নতুন করে বিষয়টি ওপেন করার অনুমোদনও অঘোষিতভাবে বন্ধ। পারিপার্শ্বিক কারণে এ বিষয়টির চাহিদা প্রকাশেরও সুযোগ নেই। প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পড়া থেকে দূরে অবস্থান করে। একাদশে গিয়ে হঠাৎ করে কঠিন আরবি ভাষা ও সাহিত্য পড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই এটিকে কার্যকর করার জন্য অবশ্যই যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, নব্বই ভাগ মুসলমান তথা শতভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষের এই বাংলাদেশে কোনো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক এরকম ধর্ম শিক্ষাকে অপাঙ্ক্তেয় অবস্থায় রাখা, বোর্ড পরীক্ষার বাইরে রেখে সঙ্কুচিত ও গুরুত্বহীন করাকে কিছুতেই সমর্থন করে না। সম্পূর্ণ জনমতের বাইরে থেকে কোন্ দেশের পরামর্শে, কাদের হীনস্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, জাতির কাছে তা একদমই অবোধগম্য ও অনভিপ্রেত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মের মতো সর্বপ্রধান বিষয়টি বোর্ড পরীক্ষার বাইরে রাখার ফলে, সেটি যে মারাত্মকভাবে গুরুত্বহীন হবে, সেটুকু বোঝার জন্য যুক্তিতর্কেরও প্রয়োজন হয় না। অথচ একে তো দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার প্রধান উৎসই ধর্মশিক্ষা; তদুপরি প্রধানমন্ত্রীও বঙ্গবন্ধুর মতোই শিক্ষা-নীতিমালায় ধর্ম শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার কথা অধিক গুরুত্বের সাথে বলেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাশ কাটিয়ে, বোর্ড পরীক্ষার বাইরে রেখে ধর্ম শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করার মতো ঔদ্ধত্য কারা কিভাবে দেখাতে পারল, সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখার বিষয়। যার যার ধর্ম শিক্ষা গুরুত্বের সাথে অর্জন করা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার। প্রতিটি রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্ম শিক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখে। ইসরাইলের মতো একটি বিতর্কিত-অস্বীকৃত রাষ্ট্র, যাকে সর্বাধুনিক মনে করা হয়, তারা যদি তাদের ধর্মশিক্ষা ‘তালমুদ’ ডিগ্রি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক রাখতে পারে, তাহলে উন্নত দেশ গড়ার জন্য কোন্ যুক্তিতে আমাদের ধর্মশিক্ষাকে গুরুত্বহীন করতে হবে?
দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা বোর্ড পরীক্ষায় ‘ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়টিকে বহাল রাখা, বিতর্কিত, প্রত্যাখ্যাত কুরআনবিরোধী বিবর্তনবাদসহ ইসলামবিরোধী সব পাঠ্য রচনা সিলেবাস থেকে অপসারণ করা এবং আরব দেশগুলোর শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য আরবি ভাষাকে সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ।