Naya Diganta

‘টাকার অভাবে ট্রায়ালে আসতে পারিনি’

বাফুফে ভবনের সম্মেলন কক্ষের ডায়াসে বসে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। মিডিয়াগুলোর স্পটলাইট তখন তার ওপরে। আজ পল্টন ময়দানে বিকেলে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় স্কুল ফুটবলের ফাইনালে উপলক্ষে তার সংবাদ সম্মেলনে আসা। অথচ এই নাঈম ইসলাম ২০১৭ সালে টাকার অভাবে ঢাকায় আসতে পারেননি জাতীয় দলে ট্রায়াল দিতে। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নীলফামারী থেকে ঢাকা আসা যাওয়া এবং থাকা-খাওয়ার জন্য দুই হাজার টাকা জোগাড় করতে পারেনি নাঈমের বাবা। ফলে সে বছর মক কাপ খেলতে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ হারান নাঈম। এখন অবশ্য এই উঠতি ফুটবলার নিয়মিতই ঢাকায় আসেন। আসবেন আগামীতেও। স্কুল ফুটবলের পর তিনি খেলবেন দ্বিতীয় বিভাগের দল খিলগাঁও ফুটবল অ্যাকাডেমির হয়ে।
নাঈমের বাবা সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী। দুই ভাই আর এক বোনকে নিয়ে অভাবের সংসার। ছেলেকে ঢাকায় পাঠানোর টাকা জোগাড় করতে পারেননি বাবা। কথাগুলো বলার সময় দুই চোখ পানিতে ভরে যাচ্ছিল নাঈমের। জানান, ‘আব্বা অনেকের কাছে টাকা চেয়েছিলেন আমাকে ঢাকা পাঠাতে। কিন্তু কেউ দেয়নি টাকা। তারা ভেবেছিল আব্বা সেই টাকা আর ফেরত দিতে পারবেন না। যে কারণে মালয়েশিয়া গিয়ে খেলার সুযোগ নষ্ট হয়।’ যোগ করেন, ‘এই ঘটনা আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না।’

নাঈম এখন নীলফামারীর ছমির উদ্দিন স্কুলের অধিনায়ক। আজ তার দলের ফাইনাল খেলা যশোরের বেনাপোল মাধ্যমিক স্কুলের বিপক্ষে। তার কাউন্টার পার্ট বেনাপোল স্কুলের দলপতি সাইদুর রহমান রাহুল কাঁচাবাজারের কর্মচারী ছিলেন। এবারের জাতীয় স্কুল ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে ফাইনালের আগ পর্যন্ত ৭ গোল দিয়ে সর্বোচ্চ দাতার তালিকায় সবার ওপরে অবস্থান নাঈমের। করেছেন দুই হ্যাটট্রিক। গ্রুপ পর্বে ছমির উদ্দিন স্কুল ০-৪ গোলে হেরেছিল বেনাপোল স্কুলের কাছে। আজ নেই প্রতিশোধ নিয়ে দলকে প্রথম শিরোপা এনে দিতে চান এই ক্ষুদে স্ট্রাইকার। আর রাহুল চান প্রথম ফাইনালে খেলাটা চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ করতে।
চাচার হাত ধরেই ফুটবলে আসা নাঈমের। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বুট, মোজা চেয়ে ফুটবল খেলেছেন। এখন ফুটবল খেলেই টাকা রোজগার শুরু করেছেন। কিছু দিন আগে ৫ হাজার টাকা পেয়ে তা তুলে দিয়েছেন বাবার হাতে। প্রথমে ২৫০ টাকার বুট পরে খেললেও এখন তার পরা বুটের দাম হাজার টাকার ওপরে। তাদের স্কুল আগে তিনবার সেমিফাইনালে হেরে গেলেও এই প্রথম ফাইনালে উঠেছেন। ট্রফি হাতে নিয়েই ফাইনালকে স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি।
২০১৮ সালে সানরাইজ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকার ফুটবলে নাঈমের অভিষেক পাইওনিয়ার লিগে। এর আগে ২০১৬ সালে ঢাকায় আসা বঙ্গবন্ধু আন্তঃপ্রাথমিক স্কুলের চূড়ান্ত পর্ব খেলতে। সেবার তার দল সেমিফাইনালে বাদ পড়ে। এই স্কুল ফুটবল থেকেই মক কাপের ট্রায়ালে ডাক পাওয়া। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতা তাকে ঢাকায় এসে ট্রায়ালে যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দেয়নি। পাইওনিয়ার লিগে কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী তাকে রাইটব্যাক হিসেবে খেলান। যদিও তার স্কুলের কোচ আবদুল ওয়াহাব তাকে ফিরিয়ে আনেন স্ট্রাইকার পজিশনে। ছোট্ট এই ক্যারিয়ারে নাঈমের সবচেয়ে স্মরণীয় এবারের স্কুল ফুটবলে করা দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটি। জানান, হবিগঞ্জের আলী ইদ্রিস স্কুলের বিপক্ষে আমি ৪ গোল করেছি। দলের ৬-১ গোলের জয়ে একটি অ্যাসিস্টও ছিল আমার।