Naya Diganta

কোরবানির পশুর দাম চড়া

রাজধানীতে কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। দু-তিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে রাজধানীর পশুহাটে গরু আসছে। তবে শহরতলির হাটগুলোতে গরু বেশি এলেও শহরের ভেতরের হাটগুলোতে এখনো পশুর উপস্থিতি কম। কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার বিগত সময়ের চেয়ে অনেক চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তবে হাটে ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। দু-একজন দরদাম করলেও আগেভাগেই পশু কিনতে চান না তারা। হাটে ক্রেতার চেয়ে উৎসুক ছেলেমেয়েদের ভিড়ই বেশি দেখা গেছে।

রাজধানীতে এবার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ২১টি কোরবানির পশুহাট বসছে। সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের দিনসহ মোট পাঁচ দিন হাট বসানোর কথা। আগামী ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। তবে এর বেশ আগেই হাটে কোরবানির পশু আসতে শুরু করেছে।

গাবতলীর স্থায়ী পশুহাটে কোরবানি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসছে। যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর ও পাবনা থেকে সবচেয়ে বেশি গরু এসেছে। ঝিনাইদহ থকে আসা গরু ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, নিজ এলাকা থেকে গরু কিনে গাবতলী নিয়ে এসেছি। ২৬টি গরু এনেছি। প্রতিটি গরু মাঝারি আকারের। দেড় থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত একেকটি গরুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আসার পর আমি তিনটি গরু বিক্রি করতে পেরেছি।
নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি কুষ্টিয়া থেকে এসেছি। ৪৯টি গরু এনেছি। এর মধ্যে দু’টি বিক্রি করেছি। এখনো ৪৭টি গরু অবিক্রীত রয়েছে।

বড় গরুর মধ্যে গাবতলীতে নজর কেড়েছে মেহেরপুরের ‘গরিবের আশা’। এর মালিক মেহেদি বলেন, নিজ হাতে যতœ করে আশাকে বড় করেছি। এবার বিক্রি করতে গাবতলীতে নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত এ হাটে সবচেয়ে বড় গরু আশা-ই। এর ওজন ৩০ থেকে ৩৫ মণ হবে। আমি ১৬ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। এখন পর্যন্ত একজন অনলাইনে আশাকে দেখে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছে। তবে কেউ সরাসরি দাম বলেনি।

হাটে আসা মিরপুরের বাসিন্দা সজল বলেন, এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দামের একটি মাঝারি আকারের গরু কিনেছি। নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকব বলে আগেই গরুটি কিনে ফেললাম। তিনি বলেন, হাটে গরুর দাম অনেক চড়া। গত বছরের চেয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা বেশি দাম চাচ্ছে। গাবতলী স্থায়ী হাটে বিক্রি টুকটাক হলেও অন্য হাটে এখনো বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। পোস্তাগোলা হাটে বেশ আগে থেকেই গুরু আসা শুরু হয়েছে। তবে বিক্রি খুবই কম। দু-একটি সচরাচর বিক্রি হচ্ছে।
শাহজাহানপুরের মৈত্রী সঙ্ঘের মাঠের হাটে শনিবার দুপুরের পর থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। হাটে গতকাল বিকেলে শ’ দুয়েক গরু আসতে দেখা যায়। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর থেকে এসব গরু এসেছে। হাটে ক্রেতার চেয়ে উৎসুক ছেলেমেয়েদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।

ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু থেকে আসা ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, পাঁচজনে মিলে ১৫টি গরু নিয়ে এসেছি। পদ্মা সেতুর কারণে এবার মাত্র সাত ঘণ্টায় হাঁটে পৌছে গেছি। গত বছর পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে আসতে দুই দিন দুই রাত লেগেছিল। তবে ভাড়া কমেনি। ২৫ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে। তার নিজের একটি গরুর দাম চাচ্ছেন আড়াই লাখ টাকা। সাড়ে ছয় মণ গোশত হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার পশু খাদ্যের দাম অনেক বেশি। ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে গেছে। বাজারেও গোশতের দাম গত বছরের চেয়ে কেজিতে এক-দেড় শ’ টাকা বেশি। এ জন্য গরুর দামও এবার অনেক বেশি।

লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি মাঠের হাটে এখনো গরু এসেছে খুবই কম। একটি শেডে ও কমলাপুর শেরে বাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গরু রাখা হয়েছে। হাটে দেখা যায়, মাঝারি আকারের গরুর দাম দুই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া একটি বড় গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ছয় লাখ টাকা। এ হাটে ছোট আকারের দেশি গরুও এসেছে। দেড় থেকে দুই মণ ওজনের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮৫ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির এখনো দেরি আছে। এ জন্য ক্রেতা উপস্থিতি কম। তারা আশাবাদী আগামী কয়েক দিনে ভালো বেচাকেনা হবে। কারণ প্রতিবারই ঈদের ঠিক দুই দিন আগে পশুর হাট জমে যায়। সে জন্য এখনই হতাশ হচ্ছেন না তারা।