Naya Diganta
তিন কেজি মাদকসহ দুই কারবারি গ্রেফতার

ওষুধের কাঁচামালের আড়ালে আসছে আফিম

তিন কেজি মাদকসহ দুই কারবারি গ্রেফতার

ওষুধের কাঁচামালের আড়ালে ‘ক’ শ্রেণীর মাদক আফিম ঢাকায় আনছে একটি চক্র। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ করা হয়ে থাকে; যা পাশের দেশ ভারত হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায়। এমন একটি চক্রকে তিন কেজি আফিমসহ গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ নোয়াখালীর আবুল মোতালেব (৪৬) ও জামালপুরের জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়া (৪৪)। তিন কেজি আফিমের আনুমানিক বাজারমূল্য পৌনে তিন কোটি টাকা।
জানা গেছে, আফিম গ্রহণের ক্ষতিকর অনেক দিক রয়েছে। এটি গ্রহণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, গ্রহণকারী অবচেতন হয়ে পড়তে পারেন। মুখ ও নাক শুকিয়ে যাওয়া, বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতির পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ব্যবহারে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর কর্মকর্তারা বলেছেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দু’ভাবে হয়ে থাকে। এক আফিম সরাসরি সেবন এবং এ আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে পরে হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো ভয়ঙ্কর ড্রাগগুলো তৈরি হয়। আফিম আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানে চাষাবাদ হয়ে থাকে।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অধিদফতরের মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিভাগ কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো: জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, বেশ কিছু দিন আগে আমাদের কাছে একটি তথ্য আসে, একটি চক্র ওষুধের কাঁচামালের আড়ালে আফিমের একটি বড় চালান ঢাকায় এনে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। এমন খবর পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রেতার ছদ্মবেশ ধারণ করে তিন কেজি আফিম জব্দ করাসহ দুই কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১০-১২ বছর পরে এটি প্রথম আফিমের চালান আটক বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ও সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর মো: শাহীনুল কবীরের টিম রাজধানীর পুরানা পল্টন লেন (ভিআইপি রোড) থেকে একটি শপিং ব্যাগের ভেতরে থাকা প্লাস্টিকের বয়ামের মধ্যে পলিথিনে মোড়ানো দুই কেজি আফিমসহ আবুল মোতালেব নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বনশ্রী আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোতালেবের সহযোগী আরেক মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে আরো এক কেজি মাদক উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের বাজারমূল্য প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা।
দীর্ঘ দিন ধরে গ্রেফতারকৃতরা মাদক কারবারের সাথে জড়িত উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ কাজল বলেন, ‘মোতালেব পল্টন এলাকায় বিদেশে আদম ব্যবসার সাথে জড়িত। অপর আসামি জাহাঙ্গীর সিদ্দিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করত। দু’জনই পেশার আড়ালে থেকে মাদক কারবারের সাথে জড়িত। উদ্ধার হওয়া মাদক ফেনী থেকে এসেছে বলে জানিয়েছেন ওই কারবারিরা।
আফিমের এ চালান কোন রুটে কিভাবে কারা নিয়ে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আফিম একটি ‘ক’ শ্রেণীর মাদক। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, পাশের দেশ ভারত থেকে এ চালান বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদকের হাব হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তান থেকেই এ আফিমের সরবরাহ। এ আফিমের চালান ঢাকায় আনা হয় ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে। উদ্ধার করা আফিমের চালানটি ফেনী থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা জব্দ করা আফিম ঢাকায় সরবরাহের চেষ্টা করে আসছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আফিমের ব্যবহার দু’ভাবে হয়ে থাকে। এক আফিম সরাসরি সেবন এবং এ আফিম দিয়ে কেমিক্যালের সাহায্যে পরবর্তীতে হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের মতো ভয়ঙ্কর ড্রাগগুলো তৈরি হয়। আফিম আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরানে চাষাবাদ হয়ে থাকে।
ঢাকা বিভাগের এই পরিচালক আরো জানান, এই চক্রের সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই নেটওয়ার্কের সব সদস্যকেই আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।