Naya Diganta

প্রায় সব নায়ক আমার গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন : খুরশীদ আলম

প্রায় সব নায়ক আমার গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন : খুরশীদ আলম

বয়স এখন ৭৭-এর কোটায়। এই বয়সে এসেও নিয়মিত স্টেজ শোতে অংশ নেন খুরশীদ আলম। তিনি মনে করেন, প্রাণবন্ত এবং হাশিখুশি থাকার চেষ্টাই মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখে। কেউ যদি প্রতিনিয়ত ‘নেই’ এবং ‘কী করব’ ছকে বন্দী থাকে তাহলে তাকে হতাশা ঘিরে ধরে এবং নানান রোগ-বালাই তার শরীরে বাসা বাঁধে। চলতি সপ্তাহে অন্য একজনের ভিডিও গানের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই গুণী সঙ্গীতশিল্পীর সাথে কথা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে বেশ উৎসাহ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, এখন সবই নতুনদের পেছনে দৌড়ায়। পুরাতন শিল্পীদের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। এ নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। তবে নতুনদের জন্য আপসোস হয়। তারা অনেক ভালো গান করছে। তবে ছোট ছোট ভুল তাদেরকে শ্রোতাদের মনে দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয় না। যদি তারা গানগুলো নিয়ে সিনিয়রদের সাথে বসতো, ভালো মন্দ জানতে চাইতো তাহলে এখনকার গানগুলোও কালজয়ী হয়ে থাকতো। নিজের গান সম্পর্কে বলেন, আমি গান করি মনের আনন্দে। সব সময় খেয়াল রাখি শ্রোতারা যেন আনন্দবঞ্চিত না হয়। আমার মনে হয় এ কারণেই কিছু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। দেশের প্রায় সব নায়ক আমার গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন। আমার গানে সবচেয়ে বেশি লিপ রাজ্জাক, ওয়াসিম, মাহমুদ কলি, আলমগীর সাহেব, জাভেদ সাহেব। দেশের যত ফিমেল আর্টিস্ট আছে...শেষ কনক চাঁপা, বেবি নাজনীন, রিজিয়া পারভীন, রুনা, সাবিনা, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, জুলিয়া রহমান, মৌসুমী কবির, শাম্মী আখতার, শাকিলা জাফর এদের সঙ্গে আমার চলচ্চিত্রে গাওয়ার সুযোগ হয়েছে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের থেকেও অনেক শিখেছি। মাইকে কিভাবে থ্রোয়িং করতে হয়, সুরকাররাও শেখাতেন, শিল্পীরাও। টাকা-পয়সা কী ইনকাম করেছি, সেটা ব্যাপার নয়। সিনসিয়ারলি কাজ করলাম কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখন তো দেখি টাকা-পয়সা কত আসছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অগ্রজ যারা ছিলেন, খন্দকার ফারুক আহমেদ, মাহমুদুন্নবী সাহেব, এম এ হামিদ, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকি সাহেব, বশীর রহমান, অবদুর রউফ সাহেব, সৈয়দ আব্দুল হাদী, একজনের নামতো কেউ নেয়ই না, নাজমুল হুদা বাচ্চু ভাই, এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল। এরা ডিভোটেড ছিলেন গানের প্রতি। হাদী ভাই শিক্ষকতা করতেন, আনোয়ার ভাই ব্যাংকে ছিলেন।
কথা যখন ভারী হয়ে যাচ্ছিল তখন জানতে চেয়েছিলাম এই বয়সে এসে তার খাওয়া দাওয়ার রুটিন সম্পর্কে। খুরশীদ আলম বললেন, আমার ফেবারিট জিনিস ডিম। মগজ, সেটা গরু হোক, খাসি হোক বা মুরগির। আরো আছে, মোস্তাকিমের চাপ। সাদি ভাই একদিন ফোন করে বললেন, তুমি নাকি ছয়টা ডিম খাও? আমি বলেছি, যে বলেছে, সে কম বলেছে। মিনিমাম ১২টা, আজো ৪টা খেয়েছি।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, হাঁটলে শরীর ভালো থাকে। তাই আমি হাঁটি। হাতিরপুল থেকে কমলাপুর স্টেশনে হেঁটে যাই, টিকিট কিনে হেঁটে ফিরে আসি। আমার ক্লাসমেটদের অনেকে বিছানায় পড়ে আছে। কারও বুকে রিং, কারও পেসমেকার। গর্ব করছি না, আল্লাহ আমাকে সুস্থ রেখেছেন। বেশি ডিম খাই বলে ছোট মেয়ে একটু মাইন্ড করে। একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার মেয়েকে বললেন, যেহেতু ডিম ছাড়তেই পারছেন না, ডিমের সাদা অংশ খাওয়ান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লালটায় সমস্যা কী? ওটাই তো বেশি টেস্টি। ডাক্তার বললেন, না না বয়স বাড়ছে। মেয়েকে বললাম, চলো আর একজনকে দেখাই। আরো কোয়ালিফায়েড একজনের কাছে গেলাম। তিনি বললেন, আপনার বাবাকে শুধু লাল অংশটুকু খাওয়াবেন। মেয়েকে বললাম, দেখেছ? সবই খাওয়া যাবে। ডাবের শাঁস নাকি এ বয়সে হার্মফুল। আমি ওটাও খাই। তালের শাঁস খাই। ১৯৬৭ সালে বেতারে গান গাওয়ার সুযোগও হয় খুরশীদ আলমের। ১৯৬৭ সালে আজাদ রহমানের সুরে জেবুন্নেসা জামানের লেখা ‘চঞ্চল দু’নয়ন’ ও কবি সিরাজুল ইসলামের ‘তোমার দু’হাত ছুঁয়ে শপথ নিলাম’ দুটি গান বেতারের জন্য রেকর্ড করা হয়। গান দুটি প্রচারের পর পুরো পাকিস্তানে হই চই পড়ে যায়। এর পর পরই সুযোগ মিললো বাবুল চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার।