Naya Diganta

ক্যালিগ্রাফি শিল্প ও একটি প্রদর্শনী

ভোরের আকাশে সূর্যের রঙ ছিটিয়ে দিলেই সকাল হাসে। অনেক রঙের মিশেলে আনন্দে নিঃশ্বাস ফেলে ভোর। চারদিকে আলোর উৎসব! যেন শিগগিরই হেসে ওঠে পৃথিবী। হেসে ওঠে চারদিকে ঝিম সবুজের বন। বৃক্ষের স্পন্দিত পাতা। আলোড়িত মাঠভরা শস্যের ক্ষেত। ঝিরি বাতাসে কাঁপতে থাকে পাতা ও ফুলের পাপড়ি। দুলে দুলে প্রকাশ করে সুখের কম্পন। এমন দৃশ্য কার না মন কাড়ে! কে না আপ্লুত হয়! কেউ হয়তো উচ্ছ্বাসে বলে ওঠে, আহা সুন্দর! তুমি ছড়িয়ে আছো আকাশের উদার বিস্তারে! বিছিয়ে আছো জমিনের নিবিড় সবুজে। আদিগন্তে অপার মুগ্ধতা মাখিয়ে নিজেকে গুঁজে রাখো নীলের দেয়ালে!
এটি একটি দৃশ্যের কাব্যিক বর্ণনা। ভাষায় প্রকাশ পেল এর রূপ, রস ও রহস্যের গন্ধ। ভাষায় নির্মিতি পেয়েছে সকাল ও আকাশের একটি নান্দনিক রূপ।
কিন্তু এ দৃশ্যে কী করবেন একজন চিত্রশিল্পী? তিনি কিভাবে প্রকাশ করেন তার অনুভূতির ঘ্রাণ! কিভাবে প্রকাশ করেন তার দেখা সুন্দরের মুখ! কিভাবে তুলে আনেন সাধারণের চোখের কাছে। হ্যাঁ, তিনি তুলির আঁচড়ে নির্মাণ করেন তার দেখা সুন্দর! রঙের বিভায় সাজান তার মনের গভীর গহনের লীলা। কিন্তু কী নির্মাণ করেন তিনি? হ্যাঁ, তিনি নির্মাণ করেন নৈঃশব্দের চিত্র। তার ভাষা রঙের ভাষা, শব্দহীন সৌন্দর্যের ভাষা। সে ভাষা চিরন্তন অনুভবের।
চিত্রশিল্পের ধারক হলেন ‘দর্শক’। কিন্তু সব দর্শক কি সমান দেখে? না, সমান দেখে না। কারণ মানুষ যেমন মানুষ থেকে আলাদা, তার দৃষ্টিও তেমনই আলাদা। একই জিনিস একেকজন একেকভাবে দেখে। একজন চোখ বুলিয়েই চলে যায়। একজন খানিক সৌন্দর্যের আঁচ নিয়ে ছোটে। কেউ কেউ কিছুটা থমকায়! কেউ বিস্ময়বোধ করে। অনুধাবন করে দৃশ্যের আড়ালের দৃশ্যটি। একজন কবি ঠিক ঠিক কবিতাই লিখে ফেলেন। একইভাবে শিল্পী তুলির টানে নির্মাণ করেন নান্দনিক চিত্র। বিষয়টি অদ্ভুত। একটিই দৃশ্য, অথচ দেখার কত তারতম্য! কত ফারাক! এভাবে শুধু দৃষ্টির ভিন্নতায় মানুষের পরিচয় ভিন্ন হয়ে ওঠে। তাই ‘দৃষ্টি’ প্রতিটি মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ! আর গভীর দৃষ্টি শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
সুতরাং একজন শিল্পীর দেখা আর সাধারণ মানুষের দেখা কোনোভাবেই এক নয়, সমান্তরাল নয়! দর্শক শিল্পকর্ম দেখে। দেখে অনুভব করাটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি অনুভবই না করেন, তো কী করে বুঝবেন শিল্পকর্মটি! কী করে অনুধাবন করবেন শিল্পের ভার! পৌঁছা যাবে কি শিল্পের নান্দনিক সংরাগে! এক কথায়, না। তাই অনুভূতিও মানুষের একটি অতীব বিশিষ্ট গুণ। তা হলে এটি সাব্যস্ত করা যায়- শিল্প বিচারের জন্য বা শিল্পের অন্দরমহলে প্রবেশের জন্য বা অন্তত শিল্পের আনন্দ নেয়ার জন্য দেখা ও অনুভূতির সমন্বয় জরুরি।
শিল্পকলা একটি আনন্দের ভুবন সৃষ্টি করে। একটি নান্দনিক অনুভবের জন্ম দেয়। আয়োজন করে রঙের ঐশ্বর্যে জীবন দেখার। শিল্পী যখন কোনো বিষয় দেখেন, তার ভেতর জগতের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রবলভাবে কাজ করে। প্রথমত শিল্পীর বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ। তার ব্যক্তিগত রুচি, তার জীবনদৃষ্টি, তার সমাজ ও সময়- এসবই শিল্পীর চৈতন্যে ঢেউ তোলে। একজন শিল্পীর ভেতর পৃথিবীর এসব জংশনের উচ্ছ্বাসে কেউ আস্তিক, কেউ নাস্তিক, কেউবা সংশয়বাদী। আবার এর কোনো অধ্যায়েই পড়ে না এমনও আছেন।
প্রসঙ্গটি যখন ক্যালিগ্রাফি শিল্প তখন ইসলামী শিল্পকলার মুখ চেনা জরুরি। ইসলামী শিল্পকলার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে ৮০০ থেকে ১৩০০ শতাব্দীর মধ্যে। বিশ্ব ইতিহাসের ধারায় এটি মধ্য যুগ। এ যুগে ইউরোপে সংস্কৃতি ও সভ্যতার একটি সীমাবদ্ধ আড়ষ্টতা ছিল প্রবল। কিছুটা দিশাহীন ছিল শিল্পাঙ্গন। তখন ইসলামী সভ্যতা তুমুল সচ্ছলতায় ছড়িয়ে পড়েছিল পৃথিবীর সর্বত্র। এর ঔদার্যে স্পন্দিত হয়েছিল সভ্যতা। ইসলামের সংস্পর্শেই জন্ম নিয়েছিল ইউরোপীয় রেনেসাঁ। মুসলমানদের চৌকস অবদানেই ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে এসেছিল নতুন জাগৃতি।


ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে মক্কায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আবির্ভাবের পর বিস্ময়করভাবে আরম্ভ হলো সত্যের নিরিখ। এটি ছিল সমগ্র পৃথিবীবাসীর জন্য এক অবিস্মরণীয় আশীর্বাদ। জগতের সবচেয়ে আধুনিক মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর জীবনযাপন পদ্ধতিও পৃথিবীর সর্বাধুনিক। সব জাতির জন্য উন্মুক্ত ছিল তাঁর দৃষ্টি। ইসলাম সব ধর্ম ও মানুষের প্রতি সরল সহিষ্ণু। ইসলামের এ বিশালত্ব শিল্প ও সংস্কৃতির জগতকেও দিয়েছে বিস্তার। এ কারণে ইসলামী শিল্পকলা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এর শরীরে একটি সজীবতা জাগ্রত নিরন্তর। যে ক’য়টি দিকে ইসলামী শিল্পকলা প্রসারিত হয়েছে তার একটি বিশিষ্টতা পেয়েছে ক্যালিগ্রাফি শিল্প। পৃথিবীজুড়ে এ শিল্পটি বেশ প্রভাবিত করে শিল্পরসিক মানুষকে।
ক্যালিগ্রাফি শিল্প প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে তুমুলভাবে অঙ্গাঙ্গি। কোনো কোনো বৃক্ষের ডাল দেখে হঠাৎই মনে হয়- এ যে এক ধরনের প্রাকৃতিক ক্যালিগ্রাফি। কখনো কখনো প্রকৃতির কোনো অঙ্গ দেখেও ক্যালিগ্রাফির নকশা মনে পড়ে। মনে পড়ে বিশ্ব প্রকৃতির শৈল্পিক সৌন্দর্যের সচ্ছলতা। ইসলামী শিল্পকলা এই সচ্ছলতার আনন্দে উদ্ভাসিত। আধুনিক শিল্পের ফর্মের কথা বলেছেন প্লেটো। বলেছেন, আধুনিক শিল্পের ফর্ম হলো জ্যামিতিক ফর্ম। মানব জাতির জন্য ইসলাম নিয়ে এলো সর্বাধুনিক পদ্ধতি। ইসলামী শিল্পকলা সেই সর্বাধুনিকতার নান্দনিক বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। ইসলামী শিল্পকলা নকশাধর্মী। আর কে না জানে নকশা চিত্রণে জ্যামিতিক দৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ। একটি ক্যালিগ্রাফি উন্নত বলে চিহ্নিত করা যায় তখনই, যখন এটি দেখেই মনে হবে একটি অনন্য নকশা। ঠিক নকশার ভেতর ক্যালিগ্রাফির রেখাগুলো প্রাণবন্ত হবে। কখনো মনে হবে একটি ফুটন্ত গোলাপ। কখনো সজীব সবুজবীথি। কখনো জীবন্ত পরিপূর্ণ কোনো পাতা। কখনো কোনো বৃক্ষের বাঁকানো ডাল। কখনো দারুবৃক্ষের সারি। অথবা আকাশে উড়ন্ত কোনো মেঘ। কিংবা ডানা মেলা কোনো পাখির শূন্যে ভেসে থাকা ছবি। এর ভেতর বর্ণের আনন্দময় রেখার উঁকিঝুঁঁকি স্বচ্ছতা পাবে। অবশ্য শিল্পের প্রাণ হলো রেখা। একজন শিল্পীর রেখা যত সচ্ছল গভীর এবং স্বাচ্ছন্দ্য তার শিল্পও ততই নান্দনিক।
ক্যালিগ্রাফি সাধারণত আরবি হরফের শরীর বেয়ে রূপায়িত। এটির সূচনা হয় মহাগ্রন্থ আল-কুরআন লিপিবদ্ধ করার দায় থেকে। যুগের পর যুগ ধরে মুসলমানরা কুরআনকে সর্বোচ্চ সুন্দর লিপির মাধ্যমে সংরক্ষণ করার আয়োজন করেছে। কেননা মুসলমানরা চূড়ান্তভাবে এই সত্য মানে- কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালার অবিস্মরণীয় বাণী। আল্লাহর বাণী মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে, হচ্ছে ও হবে যত দিন না কুরআন যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফিরে না যায়। কুরআন অলৌকিক। লিপি লৌকিক। ক্যালিগ্রাফি অলৌকিক বাণীর একটি লৌকিক শিল্প। শিল্প ও নন্দনতত্ত্বের দিক থেকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সাথে আর কোনো গ্রন্থের সামান্যতম তুলনাও চলে না। অসামান্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপ্রতিরোধ্য একটি গ্রন্থের বাণী এবং বর্ণকে শিল্পের উচ্চতায় পৌঁছানোর যে সাধনা এটিও অতুলনীয়। অতুলনীয় শিল্পটিই ক্যালিগ্রাফি। একে একটি উচ্চাঙ্গ শিল্পে পরিণত করেছে মুসলমানরা। আরবি হরফের লম্ব স্বভাব ও সমান্তরাল স্বভাব-এই দুইয়ের বৈপরীত্যের মাধ্যমে শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য নির্মাণ করেন। হলে কী হবে এর ব্যবহারে শিল্পীরা এতই বৈচিত্র্য প্রকাশ্য করেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। কালে কালে ক্যালিগ্রাফি আধুনিক থেকে আরো আধুনিক হয়ে বহু বিচিত্র রূপ ও দ্যোতনায় শাণিত হয়েছে। পৃথিবীতে সুদান ও নাইজেরিয়ার ক্যালিগ্রাফি সর্বাধুনিক।
ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বাংলাদেশও এগিয়েছে বেশ। পৃথিবীর নানা অঙ্গনে বাংলাদেশী ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা সাফল্যের ছাপ রেখেছেন। বেশ ক’বছর ধরে বাংলাদেশে প্রতি বছর ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী হচ্ছে। কিন্তু এবারই প্রথম জাতীয় প্রদর্শনীর আয়োজন হলো। বেশ বড়সড় কলেবরে ১০ দিন ধরে প্রদর্শনী চলছে জাতীয় জাদুঘর লবিতে। আয়োজক সংগঠন- বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদ। প্রদর্শনীর আহ্বায়ক বিশিষ্ট শিল্পী ইব্রাহীম মণ্ডল। ছবি বাছাই কমিটির প্রধান হলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত মুখ শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্পের অগ্রপথিকদের অন্যতম তিনি।


ক্যালিগ্রাফি আন্দোলনের গোড়ার দিকের উদ্যোক্তা যারা তাদের একজন শিল্পী ইব্রাহীম মণ্ডল। তিনি বাংলাদেশ চারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি। ছবি বাছাই কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ফকির। সদস্য অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার, অধ্যাপক আবদুল আজিজ। প্রদর্শনীর আয়োজনে আছেন একটি উপদেষ্টা কমিটি। এ কমিটির সদস্য বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুর রউফ, অধ্যাপক ড. আবুল হাসান এম সাদেক, কবি আল মুজাহিদী, অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার. অধ্যাপক ড. নাজমা খান মজলিস, অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ফকির, অধ্যাপক আবদুল আজিজ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ লেখক ও গবেষক আ জ ম ওবায়দুল্লাহ, অধ্যাপক শিল্পী সাইফুল্লাহ মানছুর।
প্রদর্শনীর সময় ১০ দিন। ১৮ জুন থেকে ২৮ জুন ২০২২। অংশ নিয়েছেন ৭৫ জন শিল্পী। ছবি সংখ্যা ১৪৮টি। যাদের ছবির উপস্থিতিতে প্রদর্শনী সমৃদ্ধ হয়েছে তারা হলেন- ড. আব্দুস সাত্তার, আহমেদ নওয়াজ, ড. মিজানুর রহমান ফকির, ফরেজ আলী, ইব্রাহীম মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম আমিন, ত্রিভেদী গোপাল চন্দ্র, আরিফুর রহমান, মোমিন উদ্দীন খালেদ, রফিকুল ইসলাম সরকার, ফেরদৌস আরা বেগম, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, মুসলেম মিয়া, মাসুমা সুলতানা, সুলতানা রুবী, কামরুন্নাহার আশা, নাজমা আক্তার, কৃষাণ মোশাররফ, জুবায়দা খাতুন, কে এইচ মনিরুজ্জামান, নাসির উদ্দীন খান সজল, ওসমান হায়াত, এমডি মনজুর হোসাইন, এমডি শামীম হোসাইন, মহিব্বুল্লাহ গালিব আল হানাফি, এমডি তামিম দারী, এমডি আশিকুর রহমান, খান শাহরিয়ার, মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, এম ডি এ আল মামুন, এম ডি হাসান নাসরুল্লাহ, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মোতাসিম বিল্লাহ, মোল্লা হানিফ, সাঈদুল ইসলাম, শামসুন্নাহার তাসনিম, সুমাইয়া সুলতানা সালওয়া, তাজরিয়ান মল্লিক, সিরাজুল ইসলাম তাকরিম, তাবাসসুম চৌধুরী, তামান্না মাসুমা, আবদুল্লাহ আল হুজাফি, জোবায়ের আহমদ, ইউশা হোসাইন, মোহাম্মদ রব্বানী, জিহাদ বিন ফয়েজ, আশেকে এলাহী নিজামী, মুয়াজ আল জুহানী, রাহমান তাবাসসুম প্রাপ্তি, হাদিউজ্জামান তানজিল, এমডি জাকির হোসাইন, আবুল হাসনাত আল নূর, আবদুল্লাহ জোবায়ের, আমরিন আহসান, আনাস খান, এমডি ইসমাঈল হোসাইন, শারাবান তোহুরা খান, আবদুল্লাহ, সিরাজাম মুনিরা তাসনিম, আবু সুফিয়ান আলিফ, রাদিয়া রিনি, সাঈদুর রহমান, ইসরাফিল মাকদাসী, রেজওয়ানা আরেফিন, নুসরাত জাহান, মুহাম্মদ এ রহিম, মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী, নুজহাত লুবাবা বাহারী, কবিনুর ইসলাম, শরীফ আহমেদ, জান্নাতুল বুশরা, আহসান হাবীব রাফি, মনিরুল ইসলাম, রাহাতুন্নেসা নুসাইবা ও ফখরুদ্দীন আহমদ।
বেশির ভাগ শিল্পীর চিত্রে একটি আলাদা মাত্রা আছে। আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। আছে নিজস্ব ধারা ও ঢঙ। প্রবীণ শিল্পীদের সূক্ষ্ম ও তীক্ষè তুলির টান দর্শকদের মুগ্ধ করে। ঠিক নবীনদের নতুন কিছু করার চেষ্টাও আশাবাদী করে তোলে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর নিজেদের যোগ্যতার চিহ্ন স্বচ্ছ করার চেষ্টা দৃশ্যমান। দেখতে দেখতে কোনো কোনো ছবির সামনে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। কারণ কোনো কোনো ছবি নজর কাড়ে। বিস্ময়ে অনুভব করতে হয় তার কারুকাজ। তার রঙের বিভা।
প্রদর্শনীটি বৈচিত্র্যে ভরা। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত শিল্পী যেমন, তেমনই অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পীও আছেন। মাদরাসাপড়ুয়া আছেন। সাধারণ শিক্ষিতও আছেন। পুরুষের পাশাপাশি আছেন নারী শিল্পী, আছেন অমুসলিম শিল্পীও। সব মিলিয়ে প্রদর্শনীটি অনেক দিক থেকে মাত্রা পেয়েছে।
এবারের প্রদর্শনীটি যেকোনো সময়ের চেয়ে বড়, গোছানো। ক্যালিগ্রাফি শিল্প বাংলাদেশে বেশ এগিয়েছে, এটি তারই উজ্জ্বল নমুনা।
লেখক : কবি, উপন্যাসিক, শিশুসাহিত্যিক ও গীতিকার
zabuzafar@gmail.com