Naya Diganta
দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সঙ্কট নেই

পশু চোরাকারবার বন্ধে কঠোর হোন

দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সঙ্কট নেই

কয়েক বছর আগেও ঈদুল আজহার কোরবানির হাটে উল্লেøখযোগ্য-সংখ্যক বিদেশী পশু, বিশেষ করে ভারতীয় গরু দেখা যেত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদার সবটুকু পূরণ হচ্ছে দেশের গবাদিপশু দিয়ে। প্রয়োজনীয় কোরবানির পশুর শতভাগ জোগান এবারো দেশের পশুতেই সম্ভব। এবারো চাহিদার চেয়ে কোরবানিযোগ্য পশু বেশি রয়েছে। উপরন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গবাদিপশু ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগে অতি সহজেই নেয়া সম্ভব হবে। এসব অঞ্চল থেকে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানি উপলক্ষে ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে প্রচুর গবাদিপশুর জোগান হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি বছর দেশে এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় দুই লাখ সাত হাজার বেশি। এ বছর কোরবানিতে পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার। ওই হিসাবে, এ বছর চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৯টি গবাদিপশু বেশি রয়েছে। গত বছর এক কোটি ১৯ লাখ গবাদিপশু প্রস্তুত ছিল, তার মধ্যে প্রায় ৯১ লাখ গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় গত বছরের চেয়ে কোরবানি বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে গরু-মহিষ রয়েছে ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি, ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭টি ও অন্যান্য পশু রয়েছে ১৪ হাজার ৯টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ বছর দেশের আটটি বিভাগের ছয় লাখ ৮১ হাজার ৫৩২টি খামার থেকে ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু আসবে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ১৯৬টি, চট্টগ্রাম থেকে ১৫ লাখ ১২ হাজার ১১৪টি, রাজশাহী থেকে ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি, খুলনা থেকে আট লাখ ৭৯ হাজার ২৫১টি, বরিশাল থেকে তিন লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৩টি, সিলেট থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার ৩৫৩টি, রংপুর থেকে ১০ লাখ তিন হাজার ২৮১টি ও ময়মনসিংহ থেকে আসবে দুই লাখ ৯ হাজার ৩৪৪টি পশু। আর গৃহপালিত গবাদিপশু আসবে ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৭টি।
পশুর বাণিজ্যিক খামারিরা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত গবাদিপশুর জোগান থাকলেও পশুখাদ্যের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। পশুর জন্য অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যয় বেড়েছে। তাই এবার কোরবানি পশুর দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি হবে। দেশীয় পশুর দাম একটু বেশি হওয়ার সুযোগে ভারত থেকে স্বল্প দামে রুগ্ণ ও অস্বাস্থ্যকর পশু যাতে অবৈধ পথে চোরাকারবারিরা কোনোভাবেই আনতে না পারে সে জন্য সীমান্তে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে।
আমরা মনে করি, চাহিদার চেয়ে বেশি পশু উৎপাদন হওয়ায় খামারিদের উৎসাহিত করতে দেশে পশু আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। একই সাথে ভারত থেকে অবৈধভাবে যেন পশু আসতে না পারে সে জন্য সীমান্তে শুধু কোরবানির সময় নয়, সব সময় নজরদারি বাড়াতে হবে। তা না হলে পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় পশুর দাম একটু বাড়তি হলে প্রতিবেশী দেশের সস্তা পশু অবৈধ পথে এনে পাচারকারীরা কোরবানির মৌসুমসহ সব সময় ভারতীয় গরু দিয়ে ভরে ফেলতে পারে দেশীয় বাজার। এতে দেশীয় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। আমরা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। দেশে দেখা দেবে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অভাব।