Naya Diganta
লোকসান আতঙ্কে গরুর খামারিরা

কোরবানির আগে এটি উদ্বেগজনক

লোকসান আতঙ্কে গরুর খামারিরা

বেড়া (পাবনা) থেকে নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি জানান, গবাদিপশুসমৃদ্ধ বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলে সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ ঈদের বাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছে। গো-খামারি, চাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করেও এখন বন্যার আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের দুশ্চিন্তা, বন্যা প্রলম্বিত হলে ঈদে বেচাকেনা হবে অনেক কম। তখন পশু নিয়ে বড় লোকসানে পড়তে হবে।
জানা যায়, খামারিদের শঙ্কা, বন্যার দুর্ভোগ আরো প্রলম্বিত হতে পারে। তারা বছর ধরে গরু মোটাতাজা করে অনেক টাকা খরচ করেছেন। এবার কোরবানির ঈদে গরু-মহিষ বিক্রি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাদের। কোরবানির ঈদ কেন্দ্র করে গ্রামের গরিব মহিলা, বেকার যুবক ও কৃষক থেকে শুরু করে হাজারো মানুষ গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া লালন পালন করছেন। অনেক শিক্ষিত যুবকও গবাদিপশু মোটাতাজা করাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। তাই প্রত্যন্ত এলাকায় গরু-ছাগলের বড় বড় খামার গড়ে উঠেছে। বছর ধরে কসাইদের কাছে বিক্রি করার পাশাপাশি কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ‘স্পেশাল’ টাইপের গরু-মহিষও তৈরি করছেন খামারিরা। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলাদ্বয়ের প্রাণিসম্পদ অফিসের হিসাব মোতাবেক, জেলা দু’টিতে তালিকাভুক্ত প্রায় ৪২ হাজার খামার রয়েছে। তা ছাড়া গ্রামে গ্রামে প্রায় সব বাড়িতেই গবাদিপশু পালিত হয়ে থাকে। এ অঞ্চলে গোখামার ছাড়াও ৪০ হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও চাষির গোয়ালে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বড় বড় বাজারে প্রধানত পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া ও মুন্সীগঞ্জের গরুই বেশি সরবরাহ হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, গরুর মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ইউরিয়া সার, লালিগুড় ও খড়ের বিশেষ মিশ্রণ আট দিন যাবৎ কোনো পাত্রে বদ্ধ করে রেখে দিয়ে তা রোদে শুকিয়ে নিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। তিন মাস এ নিয়ম মানলে সে গরু মোটা ও তাজা হয়ে ওঠে। এসব গরুর গোশত মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার এক খামারি জানান, উচ্চমূল্যে কিনে তিনি খড়, গুড়, মাড়, তাজা ঘাস, সরিষার খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, কলাই, মটরের ভুসিসহ নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার দিয়ে ২৫টি গরু লালন পালন করে মোটাতাজা করেছেন। কিন্তু এখন বন্যাতঙ্কে ভুগছেন। তদুপরি, বর্ষাকালে গোচারণ ভূমি নিমজ্জিত হয়ে গো-খাদ্যের দাম বাজারে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই গরু পালনের ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। গরুগুলো কোরবানির ঈদে বেচতে না পারলে বহু টাকা লোকসান দিতে হবে তাদের। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের এক খামারি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য ও এ সময়ের বন্যার প্রভাব কোরবানিতে পড়বে। এখন গরুর দাম কমে গেলে দুঃখের শেষ থাকবে না। গরু পালন করতে গিয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে ধারদেনা করেছেন। সুতরাং তাদের দুর্ভোগ ও দুর্ভাবনা অধিক। জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানি ঈদের মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের নানা জায়গার গরুর বেপারিরা এসে এখানকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কিনে নেন। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের হাটগুলো থেকেও কিনে তারা বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন। এবার তারা এখনো না আসায় দুশ্চিন্তা আরো বেড়েছে। পাবনার গরুর সবচেয়ে বড় বেপারিও একই কথা বললেন। তিনি জানান, সিলেট-ঢাকা-চাটগাঁর ঈদের হাট সামনে রেখে এই বেপারিরা এখানে গরু কিনে থাকেন। এখন তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাবধানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ব্যবসায়ী গতবার এ সময় ৮০টি গরু কিনলেও এবার কোনো গরুই কিনেননি। এর কারণ বন্যায় গরুর দাম ও চাহিদার অনিশ্চয়তা।
আমরা আশা করছি, এবার ঈদের আগেই অবিলম্বে সরকার উদ্ভূত সঙ্কটের সুরাহা করবে পশু ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থে।