Naya Diganta

জাইব

জাইব জাতির কথা বলছি। এরা চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। এদের বসবাস লিয়াওনিং, জিলিন এবং জিনজিয়াং উইঘুর স্বশাসিত অঞ্চলে। ধারণা করা হয়, জিয়ানবেই যাযাবর উপজাতির বংশধর এরা। এ উপজাতি উত্তর-উয়েই রাজবংশের (৩৮৬-৫৩৪) প্রতিষ্ঠা করেছিল।
জাইবরা কথা বলে জাইব ভাষায়। এটি আলতাইক ভাষা পরিবারের তুংগুস-মাঞ্চু ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। উত্তর-পূর্ব চীনে বসবাসকারী জাইবরা কথা বলে চীনা ও মঙ্গোলীয় ভাষায়।
জাইব সমাজে সর্বপ্রাণবাদ, শামানিবাদ, কনফুসীয় মতবাদ এবং তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত।
একসময় জাইবরা শিকার করত আর মাছ ধরত। বর্তমানে এরা কৃষিকাজ এবং পশুপাখি পালনে জড়িত। এদের প্রধান খাদ্য তৈরি করা হয় চাল ও ময়দা এবং শূকর ও ছাগলের মাংস থেকে। এরা দুধ, দুধ-চা এবং তেল-চা পছন্দ করে। শীতকাল এদের শিকার করার ঋতু। এ সময় এরা ভালুক, মিঠা পানির হাঁস (রিফমবড়হ) এবং খরগোশ শিকার করে।
বেশির ভাগ জাইব লম্বা গাউন পরে। বৃদ্ধারা এখনো ঐতিহ্যবাহী সবুজ ও নীল রঙের চেওংসাম পরে, যার প্রচলন শুরু হয়েছিল কিং রাজবংশের (১৬৪৪-১৯১১) আমলে। কম বয়সের নারীরা পছন্দ করে বর্ণিল চেওংসাম। বিয়ের আগে মেয়েরা মাথার চুলে এক বেনুনি করে আর বিয়ের পরে করে দু’টি।
জাইবরা বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করে। হ্যানদের উৎসবের সাথে এদের উৎসবের সাদৃশ্য দেখা যায়। জাইবদের বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে বসন্ত উৎসব, ড্রাগন নৌকা উৎসব ও কিংমিং উৎসব গুরুত্বপূর্ণ। এরা চান্দ্র নববর্ষ পালন করে। নববর্ষের প্রাক্কালে এরা বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করে। নববর্ষের প্রথম দিন পরিবারের সবাই মিলে ভূরিভোজন করে। পরের দিন এরা নুডলস খায়।
জাইব সমাজে বিভিন্ন বিধিনিষেধ এবং প্রথা রয়েছে। খেঁকশিয়ালের চামড়া বা পশমের তৈরি পোশাক পরা নিষেধ। অতিথির বিদায়ের সময় আপ্যায়নকারী পরিবারের সবাইকে বাড়ির সামনের দরজা পর্যন্ত আসতে হয়। যদি কোনো বাড়িতে লাল কাপড়ের টুকরা টানানো থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ওই বাড়ির কেউ অসুস্থ এবং দর্শনার্থী বা অতিথিকে আপ্যায়ন সম্ভব নয়।
জাইব জনসংখ্যা ২ লাখের বেশি।