Naya Diganta

প্রিমি জাতি

প্রিমি জাতি

প্রিমি জাতির কথা বলছি। এ জাতির বসবাস চীনের সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশে। এ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অপর নাম পুমি। এরা পোশাকসচেতন ও সৌন্দর্যপিয়াসী।
প্রিমিদের ভাষার নামও প্রিমি। এটি চীনা-তিব্বতি ভাষা-পরিবারের তিব্বতি-মিয়ানি ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। একসময় এ ভাষা লেখা হতো তিব্বতি হরফে। আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেখা হয় চীনা হরফে।
কৃষি ও পশুপালন প্রিমিদের জীবিকার অবলম্বন। কিছু প্রিমি ক্ষুদ্র শিল্প ও হস্তশিল্পে কাজ করে। শস্য এদের প্রধান খাবার। এ ছাড়া এরা ভাত, ময়দা, যব ইত্যাদি খাবার খায়। গরুর গোশত ও শূকরের মাংস এরা খায়, কুকুরের মাংস খায় না। এরা বিভিন্ন ধরনের চা, তামাক ও মদ উপভোগ করে। এরা প্রায়ই ষাঁড়ের শিংয়ে চা রাখে এবং বাঁশের সরু নল দিয়ে মদ পান করে।
প্রিমিরা উষ্ণ হৃদয় ও অতিথিপরায়ণ। অন্য খাবারের পর অতিথির সম্মানে এরা এক পেয়ালা মদ তুলে ধরে। বিদায়বেলায় আপ্যায়নকারী পরিবার অতিথিকে একটি ঢোলকাঠি, শূকরের মাংসের একটি টুকরা, এক থলে চা ও এক বোতল মদ উপহার দেয়।
প্রিমিরা কাঠের তৈরি ঘরে বাস করে। পরিবারের কাজের সুবিধার জন্য কক্ষের মাঝখানে রাখা হয় একটি দীপাধার। সাধারণত ষাঁড়ের মাথা বা ভেড়া ব্যবহৃত হয় গৃহসজ্জার কাজে। এটাকে এরা সম্পদের প্রতীক মনে করে।
প্রিমিরা বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বসন্ত উৎসব, নয়া-শস্য আস্বাদন উৎসব, খাঁটি ঔজ্জ্বল্য উৎসব ও ড্রাগন নৌকা উৎসব। বসন্ত উৎসবে এরা পূর্বপুরুষের পূজা করে। এ উৎসবে ভূরিভোজনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ঘোড়দৌড় এবং গুলিছোড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। নয়া-শস্য আস্বাদন উৎসব ফসল তোলার উৎসব। এ উৎসবে ষাঁড়কে প্রথমে ভাত খাওয়ানো হয় এর পরিশ্রম ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ। ফসল পাওয়ার জন্য ষাঁড়কে বিবেচনা করা হয় ত্রাণকারী হিসেবে। খাওয়া-দাওয়ার পর প্রিমি সমাজ নতুন তোলা ফসলের আস্বাদন গ্রহণ করে, মদ তৈরি করে, পূর্বপুরুষের আরাধনা করে এবং ডিনারের (দিন-রাতের প্রধান খাবার) জন্য অপরকে দাওয়াত দেয়। নাচ-গান-হাসিতে মুখরিত থাকে চারদিক।
প্রিমিরা সংখ্যায় প্রায় ৩৩ হাজার ৬০০। কিছু প্রিমি লামাবাদ (তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্ম) ও তাওবাদে বিশ্বাস করে, বেশিরভাগ বহুদেবতাবাদ ও পূর্বপুরুষের শক্তিতে বিশ্বাসী। এরা মনে করে, দেবতা ও পূর্বপুরুষ জীবনে প্রভাব ফেলে। জাদুকর প্রিমি সমাজে শান্তি, সুখ ও ফসল তোলার অনুষ্ঠান পরিচালনা করে।