Naya Diganta

ইসির ইমেজ সঙ্কট ও ভোটারদের অনীহা দূর করতে হবে

সব রাজনৈতিক দলকে সাহসী হয়ে ভোটে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ভোটকে তারা অস্বচ্ছ হতে দেবেন না। ভোটের দিন কোনো অস্বচ্ছতার চেষ্টা হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হবে। নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্য যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, সে নির্বাচনকেও ব্ল্যাক আউট বা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন সিইসি। আর পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ইমেজ সঙ্কটে রয়েছে। আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। তাহলে তো জনগণ আস্থা পাবে না। বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নেয়া উচিত।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষকদের সাথে সংলাপ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন সিইসি। বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এই সংলাপ শুরু হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশন ধারাবাহিক যে সংলাপ করছে, তার অংশ হিসেবে এই আয়োজন করা হয়। এতে নির্বাচন কমিশনাররা এবং ইসি সচিবও উপস্থিত ছিলেন। দেশের ৩২ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধানদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখানে ২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে প্রকৃত অর্থে সেটি নির্বাচন হয় না। ২০০টা বা ২৫০টা সিট যদি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যায়, তাহলে হয়তো সরকার গঠন হবে; কিন্তু সেটির লেজিটিমেসি (বৈধতা) অনেক কমে যাবে। তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূটকৌশল করতে পারবেন না। যদি নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করে, তাহলে আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট করে বক্তব্য থাকবে, সেটি টলারেট করা হবে না। সিইসি বলেন, কমিশন বিশ্বাস করে, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই বিভাজনকে ভুলে গেলে চলবে না। কমিশনকে সাহায্য করবে সরকার, দল নয়।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ইভিএম আমাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক একটি জিনিস। কারণ ওখানে গিয়ে আমি ১০টি ভোট দিতে পারব না। আরেকজন ৫০টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দিতে পারবে না। কারণ আগে আইডেন্টিফাইড হতে হবে, পরে বায়োমেট্রিক্স মিলতে হবে।
সংলাপ শেষে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন যত চেষ্টা করুক, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছা প্রকাশ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
আব্দুল আলীম বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনারা প্রার্থিতা বাতিল করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি চালু রাখতে হবে।
লুৎফুর রহমান ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া মনে করেন, নির্বাচন কমিশন ইমেজ সঙ্কটে রয়েছে। তিনি বলেন, আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। তাহলে তো জনগণ আস্থা পাবে না।
মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ না করার পরামশ দেন। তিনি বলেন, বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নেয়া উচিত।
ডরপের চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার এক দিনে সব জায়গায় ভোট না করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভোট করা উচিত।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।’