Naya Diganta

ঢাকায় রানী দর্শনের স্মৃতি

টিনাম জুবিলি অনুষ্ঠানের শেষ দিনে রোববার ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ লন্ডনে আটটি ঘোড়ার টানা গাড়িতে করে ঘুরছেন।

ব্রিটিশ রানীকে নিয়ে চলছে হইচই। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসন আরোহণের ৭০ বছর পার করলেন। এ উপলক্ষে যুক্তরাজ্য ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা উপভোগ করেছে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। রানীর জন্য চার দিনব্যাপী ‘প্ল্যাটিনাম জুবিলি’ অনুষ্ঠান হয়েছে। ‘ট্রুপিং দ্য কালার’ নামের এক ঐতিহ্যবাহী সামরিক প্যারেড দিয়ে ‘প্ল্যাটিনাম জুবিলি’ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে অংশ নেয় ১২ শ’ রাজকীয় সৈন্য, দুই শ’ ঘোড়া এবং সেনাবাহিনীর কয়েক শ’ বাদক দল। এই কুচকাওয়াজে ঘোড়ায় চড়ে শামিল হলো প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্স উইলিয়াম। লন্ডনের হাইডপার্কে রানীর সম্মানে মোট ৮২ বার তোপধ্বনি করা হয় কামান দাগিয়ে। মনোরম সাজে সজ্জিত বাকিংহাম প্রাসাদের সামনের চত্বরে সমবেত হন হাজার হাজার উৎসুক জনতা। শুধু লন্ডনই নয়, পুরো যুক্তরাজ্যজুড়েই বিভিন্ন জায়গার সড়কের ওপর টেবিল পেতে পার্টি এবং নেচে গেয়ে আনন্দ করেন নাগরিকরা। লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদের ওপর দিয়ে ছয় ডজন যুদ্ধবিমানের রঙিন ফ্লাইপাস্টের সময় রানী ও রাজপরিবারের সদস্যরা প্রাসাদের বারান্দায় এসে দাঁড়ান এবং জনতাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তাদের ভালোবাসায় তিনি আপ্লুত এবং অনুপ্রাণিতবোধ করেছেন। ব্রিটেনের শহরগুলো এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোতে মশাল প্রজ্বলন করেও রানীকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

সিংহাসনে বসার ৭০ বছরে পৃথিবী পাল্টে যাওয়ার অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। পৃথিবীর অনেক শাসকের উত্থান-পতন রাজনীতির তোলপাড় করা ঘটনা, যুদ্ধ-বিগ্রহ যেমন তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তেমনি প্রত্যক্ষ করেছেন বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার। প্ল্যাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠান যখন চলছে, তখন তিনি প্রত্যক্ষ করছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইতোমধ্যে এই যুদ্ধের ১০০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। যুদ্ধ থামাতে পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক তৎপরতা চললেও, যুদ্ধ বন্ধের লক্ষণ এখনো স্পষ্ট হয়নি। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব মোকাবেলা করেছে করোনাভাইরাস মহামারী।

এই মহামারীতে রেজিস্ট্রি করা মৃত্যু ৬৪ লাখ। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনায় প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু হয়েছে দেড় কোটিরও বেশি। এই মহামারীর ধকল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের দেশগুলো। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক সঙ্কট এবং ইউক্রেন যুদ্ধ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। যা হোক রানীর আনন্দ-উৎসবের এই সময়টিতে মন্দ বিষয়গুলো না-ইবা লিখলাম!

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। ওই মাসেই বাংলাদেশের মানুষ ভাষা আন্দোলন সফল করে একুশে ফেব্রুয়ারির সৃষ্টি করে। বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়, টেলিভিশন আবিষ্কারের পর পঞ্চাশের দশকে একে একটি বিলাসপণ্য হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্বের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় টিভি। ১৯৫৩ সালে রানীর সিংহাসন আরোহণের দৃশ্য টিভির মাধ্যমে দেখেন বিশ্বের দুই কোটিরও বেশি মানুষ। এ সময় পোলিও টিকা আবিষ্কার করেন ড. জোনাস সক। স্কুটনিক-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুরু হয় মহাশূন্য জয়ের প্রতিযোগিতা। ১৯৬৩ সালে প্রথম মানুষের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। জিনের রহস্যভেদের জন্য মার্শাল নিরেনবার্গকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। চাঁদের মাটিতে মানুষের প্রথম পদচিহ্ন পড়ে ১৯৬৯ সালে। সত্তরের দশকের ১৯৭১ সালে প্রথম সিটি স্ক্যান করা হয়।

অ্যাপোলো-১৩, এর মিশন বাতিল করে। কিন্তু মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রযুক্তির জয়যাত্রা। সোনি ওয়াকম্যানের প্রথম রিলিজ হয় ১৯৭৯ সালে। আশির দশকে চালু হয় ইন্টারনেট। যাত্রা শুরু হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, যা আবিষ্কার করেন টিম বার্নস লি। ড. ইক সান কুও শুরু করেন রোবট দিয়ে সার্জারি। আবিষ্কার হয় মোবাইলফোন। আশির দশকের শেষের দিকে এলো কেবল এবং স্যাটেলাইট টিভি। নব্বইয়ের দশকের ১৯৯২ সালে মোবাইলফোনে প্রথম টেক্সট মেসেজ পাঠানো শুরু হয়। ভিডিও টেপের জায়গায় ডিভিডির ব্যবহার শুরু হয় একই বছর। স্মার্ট পিলের মাধ্যমে ডাক্তাররা রোগীর পেটের ভেতরের দৃশ্য দেখতে পান। চালু হয় গুগল, ইন্টারনেট সার্চ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। দশ বছরের পরিশ্রমের পর চালু হয় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এবং ইলন মাস্ক চালু করেন সাধারণ ধনকুবের যাত্রীদের মহাকাশ ভ্রমণ। ক্যান্সার কোষের নতুন গবেষণার আশার সঞ্চার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। চালু হয় ফেসবুক ও ইউটিউব।

২০১০ এর দশকে সোশ্যাল মিডিয়া আর এআই বদলে দেয় মানুষের জীবন। স্মার্ট ওয়াচের ব্যবহার হয়ে যায় সাধারণ ঘটনা। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হেডসেট শুধু গেমস খেলাতেই নয়, অপারেশনের প্র্যাকটিস করতেও সার্জনরা এর ব্যবহার শুরু করেন। ২০২০ এর দশকে কোভিড মহামারী ঠেকাতে এসআরএনএ টিকা অনুমোদন করে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই অনেক সহজ হয়ে যায়। মঙ্গলগ্রহে প্রাণীহীন রকেট পাঠানোর জন্য এখন কাজ করছে স্পেস-এক্স। তাদের লক্ষ্য এক সময়ে মঙ্গলে মানুষ পাঠানো। চালু হয় মেটাভার্স প্রযুক্তি। ফলে ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে খুলে যায় নতুন এক দুনিয়া।

ঢাকা দর্শনে ব্রিটিশ রানী
ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঢাকা সফরে এসেছেন দু’বার। একবার ১৯৬১ সালে, তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। দ্বিতীয়বার রানী ঢাকার অতিথি হন ১৯৮৩ সালে, তখন জেনারেল এরশাদের শাসনামল।

প্রথমবার রানীর ঢাকা সফরের সময় বয়সে ছিলাম কোলের শিশু। আর দ্বিতীয়বার ১৯৮৩ সালে রানী যখন ঢাকায় আসেন, তখন ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দৈনিক বাংলার তরুণ সাংবাদিক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার হিসেবে তার সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের অনুষ্ঠান কভার করেছিলাম। ১৯৬১ সালে রানীর ঢাকা সফরের বিবরণ পুরোনো পত্রিকায় পড়েছি এবং ইউটিউবে কিছু অনুষ্ঠানের ভিডিও ফুটেজ দেখেছি। রানী এসে নেমেছিলেন পুরোনো এয়ারপোর্টে, যা কুর্মিটোলা বিমানবন্দর নামে পরিচিত। রানীর জন্য তখনকার সরকার মিন্টো রোডে ব্রিটিশ আদলে একটা বাড়ি তৈরি করেছিলেন। সেটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘সুগন্ধা’ নামে পরিচিত। এখন এই ভবনটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুগন্ধা কয়েক বছর প্রধানমন্ত্রীর সান্ধ্যকালীন অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তখন ওই অফিসে বসার সুযোগ হয়।

রানী প্রথমবার ঢাকা সফরে এসে বুড়িগঙ্গা দিয়ে পদ্মা-মেঘনায় নৌভ্রমণ করেছিলেন। মেরি এন্ডারসন জাহাজে করে রানীকে নদীপথের দৃশ্য দেখানো হয়। তখন নদীর দুই তীরে শত শত নৌকায় করে গ্রামীণ মানুষ রানী দর্শনে এসেছিলেন। রানী নদীমাতৃক বাংলার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করে খুশির অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন তা তখনকার মিডিয়ায় এসেছে। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে তখন ঢাকা ছিল বিশ্বের এক নম্বর। রানী পাট থেকে কিভাবে চট ও চটের বস্তা উৎপাদন হয় তা দেখতে বৃহত্তম আদমজী মিল পরিদর্শন করেছিলেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাকে তখন নাগরিক সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছিল।

রানীর দ্বিতীয়বার ঢাকার সফরটি স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। রানী আসার খবর পত্র-পত্রিকায় কয়েক দিন আগ থেকেই প্রচার হচ্ছিল। ফলে পুরো বাংলাদেশেই রানীর সফর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল এবং আলোড়ন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এবং নবীন সাংবাদিক হিসেবে কৌতূহল আমারও ছিল। দৈনিক বাংলা থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রানীর শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানটি আমাকে কভার করার জন্য অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়। রানী সড়কপথে সাভারে যাবেন। ওইদিন সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে হেঁটে যাই স্মৃতিসৌধে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং আশপাশের গ্রামের লোকজন পুরো আরিচা সড়কই ছিল লোকে লোকারণ্য। কার্ড দেখিয়েও স্মৃতিসৌধের ভিতরে যেতে পারিনি। স্মৃতিসৌধের গেট থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে রানীকে আসা-যাওয়ার সময় সামনাসামনি ‘দুই ঝলক’ দেখার সুযোগ হয়েছিল। শ্রদ্ধা জানানো শেষে রানী চলে গেলে স্মৃতিসৌধের ভেতরে গিয়ে তার লাগানো ‘গাছ’ দেখে এসেছি। পরিদর্শন বইতে তিনি কী লিখে গেছেন তা তুলে এনেছি। স্মৃতিসৌধ এলাকায় দেখা হয় সাভারে দূর গ্রাম থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধের সঙ্গে, নাম গেদু মিয়া। তিনি ভোরেই এসেছিলেন রানী দর্শনে। কিন্তু ভিড়ের ঠেলায় সামনে দাঁড়াতে পারেননি। তিনি খুব আফসোস করে বলেছিলেন, ছোটবেলার রাজ-রানীর যে কিস্সা তিনি শুনেছেন, সেই রাজ-রানী তার বাড়ির আঙ্গিনায় এসেছেন। তাই খুব শখ ছিল রানীকে দেখার। কিন্তু রানীকে দেখতে না পেরে একবুক দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। দৈনিক বাংলার ‘রানীকে দেখতে না পেয়ে গেদু মিয়ার দুঃখ’ শিরোনামে আমার নামে বক্স রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল।

রানী গাজীপুরের ‘বৈরাগীর চালা’ গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। কাঁঠালকুঞ্জে ছন দিয়ে ছাউনি টানিয়ে রানীকে বসতে দেয়া হয়েছিল। সেখানে তিনি গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। গ্রামের এক বৃদ্ধা রানীকে ওই গ্রামের প্রতীকী চাবি তুলে দিয়ে বলেন, ওই গ্রামে যখন তার মন চায়, তখন যেন চলে আসেন। রানী সেখানে মহিলাদের মুড়ি ভাজা, পুকুরের মাছ তোলা, হাঁস-মুরগির অবাধ বিচরণ প্রত্যক্ষ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বৈরাগীর চালায় রানীর ভ্রমণের ওই রিপোর্টটা করেছিলেন দৈনিক বাংলার জহিরুল হক। রিপোর্টটি পাঠকদের কাছে খুবই হৃদয়গ্রাহী হয়েছিল। রানীর গ্রাম পরিদর্শন উপলক্ষে গাজীপুরের ওই গ্রামটি রাতারাতি বিদ্যুতের আলো ও রাস্তাঘাট তৈরি করে স্বনির্ভর গ্রাম বানানো হয়েছিল। আজ রানী যখন তার সিংহাসন আরোহণের ৭০ বছর পূর্তি উৎসব করছেন, তখন তার ঢাকায় আসার দৃশ্য স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করছে।

রানীর উত্তরসূরি ঘোষণা
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স এখন ৯৬ বছর। ১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল তার জন্ম হয়। পঁচিশ বছর বয়সে বাবা ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি।

ওই সময় চার্চিল ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ২০২২ সালে ৬ ফেব্রুয়ারি তার সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্ণ হয়। এ সময় ব্রিটেনে ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী বদল হয়েছে। রাজ সিংহাসনে ৭০ বছরের বেশি থাকার ইতিহাস রয়েছে তিনজনের। রানী ভিক্টোরিয়া ছিলেন ৬৩ বছর ২১৬ দিন, রাজা তৃতীয় জর্জ ৫৯ বছর ৯৬ দিন, রাজা তৃতীয় হেনরি ৫৬ বছর ২৯ দিন। ৭০ বছরের বেশি রাজত্বে ছিলেন এমন দু’জন ব্রিটেন সীমান্তের বাইরে। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল ৭০ বছর ১২৬ দিন, দ্বিতীয় জোহান ৭০ বছর ৯১ দিন, রাজা চতুর্দশ লুই ৭২ বছর ১১০ দিন এবং সোয়াজিল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় সোভুজা ৮২ বছর ২৫৪ দিন।

রানী এলিজাবেথ আর কত দিন সিংহাসনে থাকতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে। তবে তিনি তার উত্তরসূরির কথা জানিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর পর প্রিন্স চার্লসই হবেন রাজা। আর চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা হবেন, ‘কুইন কনসার্টং’ অর্থাৎ রাজার স্ত্রী হিসেবে ক্যামিলা রানী উপাধি পাবেন। রানীর মৃত্যু হলে শেষকৃত্য পর্যন্ত কী কী করা হবে তারও অনুষ্ঠানসূচি পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছে।

ব্রিটিশ রানী দীর্ঘ ৭০ বছরের রাজত্বকালে তার মর্যাদা রক্ষা করেছেন এবং জনগণের ভালোবাসা পেয়েছেন। একবারই তিনি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়নার ডিভোর্স এবং ১৯৯৭ সালে প্যারিসে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়নার মৃত্যুর পর সন্দেহের তীর ছিল রানীর দিকে। প্যারিস ভ্রমণের সময় ওই টানেলটি দেখে এসেছি। সেখানে ডায়নার ছবি উৎকীর্ণ করে স্মরণীয় করে রাখা হয়েছে। প্রিন্সেস ডায়নার শেষকৃত্য তথা শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে রানীর দেয়া ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনা থেকে কিছুটা তিনি রেহাই পেয়েছিলেন। প্রিন্সেস ডায়নার শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে তার বন্ধু এলটন জনের গান সবাইকে কাঁদিয়েছিল। তিনি গানে ডায়নাকে ইংল্যান্ডের ‘লাল গোলাপ’ আখ্যায়িত করেছিলেন।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব
ই-মেইল : abdal62@gmail.com