Naya Diganta

ভারতের সাথে জেসিসি বৈঠক শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেছে

ভারতের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেছে। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার এটি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আসামের গৌহাটিতে নদী সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন জেসিসি বৈঠক পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ড. মোমেনের জেসিসিতে যোগ দিতে আসাম থেকে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। এখন নদী সম্মেলন শেষে তিনি ঢাকা ফিরে আসবেন।
গতকাল গৌহাটিতে বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে নদী সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠক শেষে ড. মোমেন জেসিসি বৈঠক স্থগিত হওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আজ আমরা দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অনেক ইস্যুতে আলোচনা করলাম। তাই দু’দিনের মাথায় দিল্লিতে জেসিসির পূর্বনির্ধারিত বৈঠক পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। এটি পরে উভয়ের সুবিধাজনক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শাসমসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের আজ ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। এ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে রয়েছে। কিন্তু এর আগে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত না হওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। জেসিসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত দিল্লি সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার কথা ছিল।
এ ব্যাপারে মাশফি বিনতে শামস জানান, জেসিসি বৈঠক এখন না করার ব্যাপারে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটাথকে আমি ঠিক স্থথগিত বলব না, কিছুদিন পিছিয়ে গেল। জেথসিথসি বৈঠক আগামী জুনে হথতে পারে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গৌহাটিতে নদী সম্মেলন শেষে ঢাকা ফিরে আসবেন।
জেসিসি বৈঠক নিয়ে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ড. মোমেন বলেছেন, পানিসম্পদসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে থাকবে। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু এটা খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। দিল্লিতে জেসিসি ছাড়াও আসামে বেসরকারি সংস্থার আয়োজনে নদী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ চারজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আসামের সরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এতে আমরা যোগ দেবো।
গত মাসে ঢাকা সফরে এসে দিল্লিতে জেসিসি বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য ড. মোমেনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এ সময় তিনি দিল্লি সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়েছেন। সফরকালে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এস জয়শঙ্কর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত দিল্লি সফর দুই দেশের সম্পর্ককে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার একটি ভালো সুযোগ। এর আগে জেসিসির সপ্তম বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনকে দিল্লিতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পকর্কে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির একটি সুযোগ।
বাংলাদেশ ও ভারতে মধ্যে ২০১২ সালে দিল্লিতে প্রথম জেসিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈঠকটি প্রতি বছর নিয়মিতভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২০ সালে করোনা মহামারীর মধ্যে জেসিসি বৈঠক ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়। এরপর দুই দেশে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সপ্তম জেসিসি বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। প্রায় ১৮ মাস পর বৈঠকটি অনুষ্ঠানে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও তা আবারো পিছিয়ে গেছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক : গৌহাটির খানাপাড়ার কোনিয়াধারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে গত শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনে শেখ হাসিনা সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রশংসা করে ড. শর্মা বলেন, শাস্তি ও স্থিতিশীলতা আসামের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মূল চাবিকাঠি। আসাম ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের অভিন্ন স্বার্থে বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। শর্মা ব্রিটিশ আমলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে আসামের রেলপথে বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আসাম উন্নত চিকিৎসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যটি বাংলাদেশী জনগণের চিকিৎসা ও শিক্ষার অন্যতম গন্তব্য হতে পারে।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। বর্তমানে অনেক ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করছেন। ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারত সেরা সম্পর্ক উপভোগ করছে।
আসাম ও সিলেটের জনগণের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সংযোগের কথা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, আসাম প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্যের উৎস হিসেবে বাংলাদেশের গতিশীল আর্থসামাজিক প্রবৃদ্ধির সুবিধা নিতে পারে। একই সাথে আসামে উৎপাদিত পণ্যের জন্য বাংলাদেশের বাজার সুবিধা নিতে পারে। নদী পথে পণ্য পরিবহন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া দুই অঞ্চলে মধ্যে পর্যটন প্রসারের সুযোগ রয়েছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যেসব ভারতীয় সৈন্য অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশ তাদের পরিবারের সদস্যদের ২০০টি স্কলারশিপ দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরে আসামের মুখ্যমন্ত্রী আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেন। সেখানে জয়শঙ্কর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের রাষ্ট্রদূতসহ ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।