Naya Diganta

ডলারের একক দর নিয়ে জটিলতা

ডলারের একক দর নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংকাররা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী আজ রোববারের মধ্যে ডলারের একক দর নির্ধারণ করে জমা দেয়ার কথা। সে অনুযায়ী আজ একক দর প্রস্তাব জমা দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন করলে এ দরেই রফতানি বিল নগদায়ন আমদানি বিল পরিশোধ এবং রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে হবে।
গতকাল শনিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) ব্যাংকাররা দফায় দফায় বৈঠক করে আমদানিতে প্রতি ডলার ৮৯ টাকা ৯৫ পয়সা, রফতানিতে ৮৮ টাকা ৯৫ পয়সা, এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা এবং আন্তঃব্যাংক ৮৯ টাকা ৮৫ পয়সায় লেনদেন করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

একক দর নির্ধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাজারে যে হারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে, ওই হারে সরবরাহ নেই। আবার সব ব্যাংক সমান হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারে না বা রফতানি আদেশ পায় না। সব ব্যাংকের সমান সক্ষমতাও নেই। এ কারণে ব্যাংকভেদে ডলারের চাহিদা ও জোগান অভিন্ন নয়। ইতোমধ্যে আবার প্রতিবেশী দেশগুলো দফায় দফায় তাদের স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। পাশাপাশি চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক থাকায় ব্যাংকগুলো নগদ ডলার পেতে বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। এখন অভিন্ন দর চলমান দরের চেয়ে কম নির্ধারণ করা হলে বেশি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী ব্যাংক লোকসানে পড়বে। আবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বেশি মূল্যে কিনে কম মূল্যে ডলার বিক্রি করবে না।

অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে ডলারের মূল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি নির্ধারণ করা যাবে না। কারণ আমদানিনির্ভর অর্থনীতিতে ডলারের দাম বেড়ে গেলে আমদানিতকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দেশে মূল্যস্ফীতি আরো উসকে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতি গত ১০ মাস ধরে বাস্তবায়ন হয়ে আসছে। ডলারের মূল্য যাতে বেড়ে না যায়, সেজন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যাংকার জানান- প্রথমত, প্রতিবেশী দেশে আমাদের তুলনায় বেশি দাম হলে ডলার পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। দ্বিতীয়ত, প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে বেশি মূল্য পাওয়ার আশায় ডলার দেশে না পাঠিয়ে হুন্ডি করার প্রবণতা বেড়ে যাবে। সবমিলেই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো ডলার সরবরাহ বাড়ানো। একই সাথে ডলার ব্যয়ে সচেতন হওয়া। এর বাজারকে বাজারের মতো চলতে না দিয়ে শুধু দর নির্ধারণ করে দিয়ে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না।

প্রসঙ্গত, গত দুই বছর ধরে আমদানি ব্যয়ের বড় একটি অংশ বাকি রাখা হয়েছিল (ডেফার্ড), যা এখন পরিশোধের চাপ বেড়ে গেছে। অপর দিকে জ্বালানি তেলের দামসহ সবধরনের পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে। এ কারণে দেশে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সবমিলেই চাপ বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যায় ডলারের দাম। গত সপ্তাহে একপর্যায়ে ব্যাংকেই নগদ ডলারের দাম ৯৮ টাকা উঠে যায়। আর খোলা বাজারে উঠে ১০৩ টাকা।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের এ অস্থিতিশীলতা কাটাতে গত বৃহস্পতিবার ডলার লেনদেন হয় এমন ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ব্যাংকার শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈঠক করে একক দর নির্ধারণ করার নির্দেশ দেয়। আজকের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়। বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, ব্যাংকগুলো রোববারের মধ্যে ডলারের একক দর নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবে।