Naya Diganta

শেরপুরে কেল্লাপোশী মেলা আজ শুরু

শেরপুরে কেল্লাপোশী মেলা আজ শুরু

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবারো জমজমাটভাবে শুরু হচ্ছে বগুড়ার শেরপুরে ঐতিহ্যবাহী কেল্লাপোশী মেলা। তিথি অনুযায়ী মেলাটি প্রতি বছর জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে উপজেলা সদরের অদূরে কেল্লাপোশী নামক স্থানে প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ২৯ মে, রোববার থেকে শুরু হবে এ মেলা। স্থানীয়দের ভাষায় এ মেলাকে বলা হয় ‘জামাইবরণ’ মেলা।
লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ওরশজাত ও একজন দত্তক পুত্র ছিলেন। ওরশজাত পুত্রের নাম ছিল গাজী মিয়া আর দত্তক পুত্রের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। দুই ভাই যৌবন বয়সে রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে ঘুরতে ঘুরতে অনেক দূরে ব্রাহ্মণ নগরে চলে আসেন। সেখানে মুকুটরাজার একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। একপর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে ফেলেন।
পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। কিন্তু মুকুটরাজা ফকির বেশী যুবকের এমন স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দী করেন। এতে গাজী মিয়া দারুণ আঘাত পান। তিনি মুকুটরাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য বর্তমান মেলার স্থানে কেল্লাপোশী নামক একটি দুর্গ নির্মাণ করেন।
পরে রাজার সাথে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং মুকুটরাজার কন্যাকে বিয়ে করে নিজ দেশে ফিরে আসেন। তিথি অনুযায়ী ওই দিনটি ছিল জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে কেল্লাপোশী দুর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব করা হয়। গাজী মিয়ার সেই বিজয়কে ধরে রাখার জন্যই কেল্লাপোশীর মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগ থেকেই গ্রামের লোকজন নানা প্রস্তুতি নিতে থাকেন। এ উপলক্ষে গ্রামের সবাই আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে বাড়িতে আনেন। বিশেষ করে নতুন জামাই-বউকে দাওয়াত করে এনে খাওয়ানো মেলার একটি ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে জামাইকে মোটা অঙ্কের সেলামিও দেয়া হয়। সেই সেলামিসহ জামাই নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেলা থেকে খাসি, বড় বড় মাছ, মহিষের মাংস, মাটির পাতিল ভর্তি মিষ্টান্ন ও রকমারি খেলনা কিনে আনেন। এ ছাড়া শ্যালক-শালিকাদের নিয়ে সারাদিন মেলায় ঘুরে বেড়ান তারা।
শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।