Naya Diganta

স্মরণ : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্ম তার পিতার কর্মক্ষেত্র কিশোরগঞ্জে, ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ময়মনসিংহ মৃত্যুঞ্জয় হাইস্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন। এরপর কলকাতায় সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি (১৯৩৩)। সেখানে পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নকালে সর্বভারতীয় পর্যায়ে চিত্র প্রদর্শনীতে তার ছয়টি জলরঙের চিত্র প্রদর্শনীর শ্রেষ্ঠ চিত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পুরস্কার হিসেবে ‘গভর্নরস গোল্ড মেডেল’ লাভ করেন। ১৯৩৮ সালে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক। একই বছর কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৩৫০ সালে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের স্কেচ অঙ্কন করে অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় এসে নর্মাল স্কুলের ড্রইং শিক্ষক নিযুক্ত হন। সরকারি আর্ট স্কুল (বর্তমানে চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠা (১৯৪৮)। এরপর সরকারের তথ্য বিভাগের প্রধান শিল্পী।
১৯৪৯ সালে আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ পদে যোগদান। ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও তুরস্ক সফর এবং ছবির প্রদর্শনী। ১৯৬৩ সালে আর্ট স্কুলকে আর্ট কলেজে উন্নীতকরণে ও ১৯৬৫ সালে পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন। ১৯৬৭ সালে আর্ট কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসর গ্রহণ। ১৯৭০ সালে নবান্ন চিত্র প্রদর্শনীর জন্য ৬৫ ফুট দীর্ঘ কাগজের স্ক্রলে অঙ্কন করেন শাশ্বত বাঙালি জীবনের আকর্ষণীয় চিত্রকর্ম। একই বছর আরব লিগের আমন্ত্রণে মিসর, সিরিয়া, জর্ডান ও লেবানন ভ্রমণ। ফিলিস্তিনি গেরিলা যোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিদর্শন করে তার ওপর চিত্র অঙ্কন এবং তাদের ক্যাম্পে এর প্রদর্শনী করে যোদ্ধাদের প্রেরণাদান। ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ধ্বংসলীলা দেখার জন্য মনপুরা সফর। এর ওপর ভিত্তি করে অঙ্কন করেন অপূর্ব চিত্রকর্ম।
১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন। চিত্রশিল্পীদের বিরাট মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর এবং ১৯৭৪ সালে জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত। তার উৎসাহে ও পরামর্শে শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা। ১৯৭৫ সালে তার চেষ্টায় সোনারগাঁয়ে শিল্পকলা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত। সেখানে লোকশিল্প জাদুঘর ও লোকশিল্পী গ্রাম তার স্বপ্ন। নিপীড়িত, শ্রমজীবী ও সংগ্রামী মানুষের চিত্র আঁকেন তিনি। তার আঁকা এক হাজার ১৫০টি ছবি রয়েছে। তিনি ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ পুরস্কার (১৯৫৯) এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ‘ডি-লিট’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।