Naya Diganta

কারনেট সুবিধা : যেভাবে দেশে আসে জাগুয়ার মার্সিডিজ মানের গাড়ি

কারনেট সুবিধার আওতায় যেভাবে দেশে আসে জাগুয়ার মার্সিডিজ মানের গাড়ি

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কারনেট সুবিধার আওতায় দেশে আনা হয়েছিল ১০৮টি বিলাসবহুল গাড়ি। আগামী ২৩ জুন এ গাড়িগুলো নিলামে তুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সে সময় আগ্রহী ক্রেতারা সরাসরি কিংবা ইলেক্ট্রনিক নিলামে অংশ নিতে পারবেন।

এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে জাগুয়ার, ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার, মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার মো: আল আমিন জানান, ক্রেতারা যাতে বন্দরে গিয়ে গাড়ি দেখে সরাসরি নিলাম কিংবা ই-অকশনে অংশ নিতে পারে সেজন্য সব পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।

একইসাথে যারা ই-অকশনে অংশ নিতে আগ্রহী তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী রোববার গাড়িগুলোর ক্যাটালগ প্রকাশ করা হবে এবং এরপর ৫ থেকে ৯ জুন ক্রেতারা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়েই গাড়িগুলো দেখে আসতে পারবেন।

জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পর্যটক পরিচয় দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরাই ‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ সুবিধায় গাড়িগুলো এনেছিলেন।

তখন জাতিসংঘের সনদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কারনেটের আওতায় আনা গাড়িতে শুল্ক আরোপ করতো না বাংলাদেশ।

‘কারনেট ডি প্যাসেজ’ বা কারনেট সুবিধা আসলে কী

বাংলাদেশের শারমিন সুলতানা সপরিবারে নিজেদের গাড়িতে করে যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্স গিয়েছেন গত মাসেই এবং এ সফরে তার গাড়ির জন্য কোনো শুল্ক দিতে হয়নি।

এভাবে এক দেশ থেকে নিজের গাড়ি নিয়ে শুল্কমুক্ত চলাচল সুবিধাই হলো কারনেট ডি প্যাসেজ।

কাস্টমস উপকমিশনার মো: আল আমিন জানান, কারনেট হলো একটি বিশেষ পাস যার মাধ্যমে পর্যটকরা তার গাড়ি নিয়েই অন্য দেশ ভ্রমণ করে আবার নিজ দেশে ফিরে আসতে পারেন।

যেমন বেলজিয়ামের কোনো নাগরিক যদি নিজের গাড়ি নিয়ে ফ্রান্স ভ্রমণ করতে চান তাহলে তাকে এই পাস নিতে হবে। এই পাস নিয়ে তিনি তার নিজের গাড়ি নিয়ে ফ্রান্স ভ্রমণ করে আবার নিজের দেশে ফিরে আসতে পারেন।

এই ব্যবস্থায় গাড়িটি সাময়িক আমদানি সুবিধায় শুল্ক কর পরিশোধ ছাড়াই বিভিন্ন দেশে প্রবেশ ও চলাচল করতে পারে।

তবে এজন্য দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি থাকতে হয় অথবা ইউএন কনভেনশনাল অন দ্য ইমপোর্ট অফ প্রাইভেট ভেহিক্যাল ১৯৫৪-তে স্বাক্ষরকারী হতে হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের এ সম্পর্কিত কোনো চুক্তি নেই। আবার বাংলাদেশ কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশও নয়। ফলে বিদেশী পর্যটকদের ব্যক্তিগত গাড়ি বাংলাদেশে আনার কোনো সুযোগ ছিল না।

কিন্তু তারপরও পর্যটক পরিচয় দিয়ে আগে বাংলাদেশে অহরহ কারনেট সুবিধার আওতায় বিলাসবহুল গাড়ি আনা হতো এবং অনেক সময় সেগুলোকে বন্দর থেকে ছাড়ও দেয়া হতো।

অনেকে আবার এসব গাড়ি বাংলাদেশে এনে তা আর ফেরত নেননি, যদিও কারনেট সুবিধার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত শর্তই হলো ভ্রমণ শেষে গাড়ি ফিরিয়ে নেয়া।

মূলত জাতিসংঘের দুটি আন্তর্জাতিক সনদের সূত্র ধরেই স্বাক্ষরকারী দেশ না হওয়া সত্ত্বেও কারনেট সুবিধা দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ।

আর এ সুযোগ নিয়েই প্রবাসী বাংলাদেশীরাই অনেকে পর্যটক পরিচয় নিয়ে কারনেটের আওতায় বিলাসবহুল গাড়ি এনে শুল্কমুক্ত ছাড় নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করেছেন।

বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর থেকে হঠাৎ করেই কারনেট সুবিধার আওতায় পোরশ, হ্যামার, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউর মতো গাড়ি আনার প্রবণতা বেড়ে গেলে তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়।

২০১১ সালে হঠাৎ রাজস্ব বিভাগ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে বেশ কয়েকটি গাড়ি রাস্তাঘাটে পরিত্যক্ত অবস্থাতেও পাওয়া যায়।

শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় যে, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আর পর্যটক গাড়ি আনতে দেয়া হবে না।

আর কারনেট সুবিধা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় এরপর কেউ এভাবে গাড়ি আনলেও তার জন্য নিয়মিত কর পরিশোধের নিয়ম চালু হয়।

এ কারণেই ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত যেসব গাড়ি বন্দরে এসে আটকে ছিলো সেগুলো আর কেউ শুল্ক দিয়ে গ্রহণ করেনি।

কাস্টমস উপকমিশনার মো: আল আমিন বলছেন, এসব গাড়ির শুল্ক কেনা দামের চেয়ে দু’ শ’ বা তিন শ’ গুণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ কারনেট সুবিধার আওতায় আনা গাড়ির শুল্ক দিয়ে দেশে প্রবেশ করাতে হলে বাজারমূল্যের সমান দাম পড়ে যায়।

এ কারণেই ওই সুবিধায় গাড়ি এনে অবৈধভাবে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছিলো একটি চক্র।

কারনেটের গাড়ি নিলাম : ক্রেতাকে কি শুল্ক দিতে হবে?

মো: আল আমিন বলেছেন, কারনেটের আওতায় আনা গাড়ি নিলাম থেকে কেনার পর সেই গাড়ির জন্য ১৭% ভ্যাট ও ট্যাক্স দিতে হবে। কিন্তু তারপরেও এসব গাড়ির মোট দাম বাজার দামের চেয়ে অনেক কম পড়বে।

কারণ একটি ৪০ লাখ টাকা দামের বিলাসবহুল গাড়ি বাংলাদেশে আনলে তার ওপর কর ‍দু’ শ’ শতাংশ হলে মোট গাড়ির দাম পড়ে এক কোটি বিশ লাখ টাকা।

সেখানে নিলামে কেউ ৪০ লাখ টাকায় কিনলেও তার জন্য অতিরিক্ত ১৭ শতাংশ কর দিতে হবে।

আল আমিন জানান, এর আগে তারা দুটি বিএমডব্লিউ এবং একটি মার্সিডিজ গাড়ি নিলামে দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন পাঁচ বছরের পুরনো গাড়ি বাজারজাত করার সুযোগ নেই।

সেক্ষেত্রে এখন যেসব গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে সেগুলো কমপক্ষে দশ বছরের পুরনো হওয়ায় এগুলোর বিষয়ে ছাড়পত্র নিতে হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।

সূত্র : বিবিসি