Naya Diganta

দিগন্ত সাহিত্যিক কবিতা


শাহজাহান ইকবাল
হৃদয় ছিঁড়ে বৃষ্টি এলে

নেই সীমানা নেই মোহনা নদীর মতো চলি
বাঁকের পরে বাঁক পেরিয়ে নিকষ কথা বলি
জোনাক ঢেলে চাঁদ-চাতুরী দু’কূল ছেপে চলে
তীরে সিংহ গর্জে ওঠে পোড়ায় দাবানলে
হৃদয় ছিঁড়ে বৃষ্টি এলে বাঁয়ার বোলে নাচি
অহর্নিশে পান্থ আমি জলের কাছাকাছি
ঝরা বকুল অহিনকুল ছিঁড়ল দলে দলে
বৃন্ত-খ’সে জগৎ জুড়ে সুবাস ঢেলে চলে
সন্ধ্যা এলে দিবা-রসদ রাতের মুখে লীন
চক্রবালে সময়গুলো ফেরে অর্থহীন।
নিরাল রাতে বাজে না আর মধুর সুরে বাঁশি
খরতাপের প্রহর যেন আয়ু সর্বনাশী
সব কিছুতে সবুর ভালো যতই বলি মুখে
জলের মতো যায় না চলা আসবাবাদি বুকে।

 

মুসফিরা মারিয়াম
ইতিহাস কথা বলে

ইতিহাস কথা বলে-
বুকে বেঁধে রাখে সিরাজুদ্দৌলার প্রীতি
নিঃসংকোচে অকপটে তুলে ধরে
মীরজাফরের বেইমানি স্মৃতি।
ইতিহাস কথা বলে-
সেও বেঁচে থাকে নরম নদীর মতো
বুকে বয়ে স্মৃতি, কালের সাগরে সীমাহীন ভেসে চলে।
কখন কোথায় কে কাকে ঠকিয়ে গেছে
কে আসন গাড়ে মানুষের লহু বেঁচে
কোন্ বীর কবে, পৃথিবীর কোন প্রান্তে করেছে বাস
খুলে বলে যত ফেরাউনদের ভ্রান্তির ইতিহাস।
ইতিহাস বলে হিটলারদের কথা-
অত্যাচারিত মানুষগুলোর বাকহীন নীরবতা।
কিংবা কোথায় সভ্যতাহীন দেশে
রক্ত ঝরেছে বর্ণের বিদ্বেষে।
জন্মেছে কোথা রথী মহারথী, মরণবিজয়ী বীর
কোন নদী কবে ঝোড়ো তাণ্ডবে ভেঙেছে আপন তীর।
সবকিছু তুলে ধরে-
ইতিহাস বাঁচে কাল থেকে কালে মানুষের ঘরে ঘরে।

 

সিরাজুল করিম
মন ছুটে যায়

জন্ম আমার রোমের ভ্যাটিকানে নয়
জন্মেছি আমি ভাটিখাইনে চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
দেশ বিদেশের পথে ঘাটে
আমি চলি বটে
কখনো জনাকীর্ণ কখনো জনবিরল রাস্তায়
সেখান থেকেও আমার মন ছুটে যায়
ভাটিখাইন পটিয়ায়।
ভরা জ্যোৎস্নায় মায়াভরা রাতে আমার গ্রাম
ভাটিখাইন মনে হতো ছবির মতো।
বাড়ির উঠানে দল বেঁধে
সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় করে
ছুটে বেড়াতাম কত।
যতই থাকি না কেন শত কাজের মাঝে
কাজের ফাঁকে যখন স্মৃতি সব ভিড় করে
মনের মাঝে মনের কোণে
তখন মন মানে না
মন ছুটে চলে
মন ছুটে যায়
ভাটিখাইন পটিয়ায়।

 

হেলাল আনওয়ার
পাঁজর ভাঙার শব্দ

আমি এখনো ক্রমাগত শুনতে পাই
বুকের পাঁজর ভাঙার শব্দ।
বয়সের ব্ল্যান্ডারে বিচূর্ণ স্বপ্ন
কালো মেঘের মতো ভেসে বেড়ায়
হাওয়ার পালকিতে।
ত্রস্ত আমি-
আস্ফালনের ঢেউয়ে
বেদনার মাছেরা খাবি খেতে খেতে
তারপর উঠে আসে-
ধূম্রাবৃত বয়সের স্কন্ধে।
আটার খামিরের মতো দু’হাতে পিষে
আমাকে রুটির মতো বেলতে থাকে।
তারপর অগ্নিতাপে পুড়িয়ে
তৈরি করে কালের সুষম খাদ্যে।
এই রণভার বিচূর্ণ সময়ে
আর কত দগ্ধ হবো?

 

গোলাম রব্বানী টুপুল
বৃষ্টি হলো ভীষণরকম

আকাশ ভেঙে ভীষণরকম বৃষ্টি হলো
ছাদবাগানের বেলী গাছটায় সাদা সাদা
থোকা থোকা ফুলগুলোতে জল জমেছে
ঘ্রাণগুলো কি ধুয়ে দিলো ভীষণরকম?
মাটির কোলে নেতিয়ে থাকা বকুল গাছটা
বৃষ্টিজলে হাসছে যেন খলখলিয়ে
টগবগে এক যুবক সে তো ঘোড়ায় চড়ে ছুটছে দূরে
বৃষ্টি হলো বৃষ্টি হলো ভীষণরকম!
হাঁসগুলো আজ ঘোলাজলে সাঁতার কাটে
মনের সুখে আধার খোঁজে জলের তলে
বটের তলায় মরা পাতার নৌকো ভাসে
হিজল ফুলের স্নিগ্ধ রঙে হৃদয় হাসে
বৃষ্টি হলো বৃষ্টি হলো ভীষণরকম!

 

নন্দিনী আরজু রুবী
আকাক্সক্ষার ঝিনুক

কিছু আকাক্সক্ষা ঝিনুকের খোলার মতো!
শুভ্রপৃষ্ঠে রঙিন আঁকিবুঁকি নুন সমুদ্দুরের বিস্তারে
ধূসর স্পন্দনহীন।
জীবন! খোলসের মতো...
কিছুটা রঙ আর ধূসর ক্লান্তিতে নি®প্র্রভ, তবুও
আমরা জীবনের ভাঁজ খুলি, কিছু সবুজ আর
নোনাজল স্তরে স্তরে সাজিয়ে তুলি।
নিঃশব্দে কুড়িয়ে নিই প্রকৃতির মৌন কোলাহল।
দৃষ্টিসীমায় রোমাঞ্চকর পাথুরে সবুজ হাতছানি...
আবেগী মন প্রাপ্তির পৃষ্ঠায় জমা করে আমাদের প্রেম।
ভালোবাসার বিশুদ্ধ উদ্ভাস খেলা করে
পৃথিবীর অবারিত ক্রোড় জুড়ে, অনুভবের গভীরে প্রথিত
প্রেমময় বুনো শেকড় আর মাটির কোলে কুসুমিত ঘ্রাণ!
আদিবাসী ঠোঁটের বারান্দায় অনাবিল হাসে সাঁওতালী মন।
অনন্ত আকাক্সক্ষার ঝিনুক পড়ে থাকে ভাঙা পথে অথবা
ভেসে যায় দূর বহুদূর ভাটির টানে, আমাদের
ফিরতে হয় আবার...
রিক্ত, শূন্য সেই সে চেনায় শুধু।