Naya Diganta

ন্যাড়া ক’বার বেলতলা যায়!

প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক ইভিএমকে অগ্রাধিকারে রেখেই ভোটের কৌশল নির্ণয় করছে আওয়ামী লীগ। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেয়ার পর যেন একটি রাজনৈতিক কালবৈশাখী বয়ে গেল। আওয়ামী লীগের ছলা-বলা-কলা নিয়ে অনুসন্ধিৎসু গবেষকরা কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না। পুরনো কৌশলগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই নতুন কৌশলের ফন্দিফিকিরে আছে আওয়ামী লীগ- তাবৎ মানুষের এ রকম ধারণা।
একজন পর্যবেক্ষকের মন্তব্য- স্বাভাবিকভাবে মানুষ যা চিন্তা করে বা স্বাভাবিক পন্থায় যা হতে পারে তার হয়তো কূলকিনারা পাওয়া যায়; কিন্তু বিষয়টি যদি অসম্ভব ও অস্বাভাবিকভাবে নিষ্পন্ন হয়, তাহলে স্বাভাবিক চিন্তা ব্যর্থ হওয়াই স্বাভাবিক। ইভিএম স্ট্র্যাটেজির কথা বলে আওয়ামী লীগ খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে- মন্তব্য সুধী মহলের। উস্তাদের মার নাকি বিহান রাতে! নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আকস্মিকভাবে ইভিএম স্ট্র্যাটেজির কথা বললে হয়তো বা পার পাওয়া যেত। এখন এত আগে বলে এত না জঞ্জাল আমদানি করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী ১৫ মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হয় বলা মুশকিল। আর আওয়ামী লীগের মতো দল অবশেষে কী বুদ্ধি আবিষ্কার করে তাও বোঝা খুব কঠিন। এইচ টি ইমামের মতো নির্বাচন প্রকৌশলের আরো অনেক হর্তা-কর্তা-বিধাতা এখনো আওয়ামী লীগে বেশুমার। তবে যত সহজে অতীতে পার পাওয়া গেছে, এবার তা হয়তো হবে না।

 


মানুষ এবার আশাবাদী- কিছু একটা হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ক্রমেই একাট্টা হচ্ছে তাতে আশাবাদ আরো বাড়ছে। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বড় ধরনের না এর কথা আমরা জানি। তারা নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে। অপর দিকে ডান-বামের ছোট দলগুলো ছোট ছোট জোট করছে। এটি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার শুভ লক্ষণ। ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী নতুন মোর্চা গঠনে সাত বাম দলের বৈঠক হয়েছে। ডান দলগুলো প্রতি সপ্তাহে প্রেস ক্লাবে ঐক্যের মহড়া দিচ্ছে। আর পর্দার অন্তরালে অঘটন ঘটন পটীয়সী আওয়ামী লীগের সুনাম আছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন চিন্তা করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন বিদেশের প্রভাবশালী মহলের চাপে এবং সমাজের অভ্যন্তরের তীব্র ক্ষুব্ধ মানসিকতা লক্ষ করে আওয়ামী লীগ রণকৌশল পাল্টে দিয়েছে। এখন তারা বিএনপিকে নিয়েই নির্বাচন করতে চায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, বিরোধী দলকে আশ্বস্ত করার মতো কিছু কৌশল আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে। যেমন- সে দিন ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিরোধী দল তাদের মিটিং মিছিল সমাবেশ স্বাধীনভাবে করুক। আমাদের তরফ থেকে বাধা সৃষ্টির কোনো প্রয়োজন নেই। অবশ্য সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা হামলা-মামলার পুনরাবৃত্তি দেখছি। হতে পারে এরকম যে, ‘রাজা যা বলে পারিষদ বলে তার শতগুণ’। খন্দকার মোশররফ হোসেনের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে হামলা এবং ২০ দলীয় জোট নেতা রেদওয়ান এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ। কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা হয়তো এসব করে থাকবে।
ইভিএম প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটি আওয়ামী লীগের নতুন ফন্দি। বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভেঙে একটা অংশকে নির্বাচনে আনার কৌশল করতে পারে আওয়ামী লীগ। আগের মতো কথাবার্তা হাওয়া থেকে পাওয়া যাচ্ছে। যেমন- সংসদে বিএনপিকে বড় একটি অংশ দিয়ে তুষ্ট করা হবে। কেউ বলছে, বিএনপির লোকদের কেউ কেউ গোপন সমঝোতায় পৌঁছেছে। আসলে এগুলো গুজব। সর্বৈব মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপির পক্ষ থেকে দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কোনো প্রশ্নই উঠে না। বিএনপি মহাসচিব অন্যত্র বলেছেন, আওয়ামী লীগ যে কথা বলে, কোনোদিন কখনো তারা তা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। জনগণের সাথে তারা শুরু থেকেই প্রতারণা করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা প্রতারণা করছে। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটি মিলাদ করতেও দেয় না, ঈদ পুনর্মিলনীতে আক্রমণ করে, এদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন! আগামী নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএম তো পরে, ইলেকশনেই তো আমরা যাবো না যদি শেখ হাসিনা সরকারে থাকেন।

 


প্রথমত, নীতিগতভাবে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ইভিএম প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দলের সুরে সুর মিলিয়ে সবাই এখন বলছে, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে কোনো নির্বাচন কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হবে না। চরমোনাই পীর সাহেবের রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া কোনো তামাশার নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। ১০ মে ২০২২ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে তাদের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানান। পীর সাহেব বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, কোনো দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ইভিএম আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যাখ্যাত। আর ইভিএমের মাধ্যমে সারা দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে, এমন কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার রাখেন না। নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন তা ঠিক করবে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
পরে বরিশালে এক জনসভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সাহেব তার নীতিগত বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, সব নিবন্ধিত দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আমরা চাই না এবং ভোটের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে। এ জনসভায় ১৫ দফা দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দাবিগুলো না মানলে তারা সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবেন। ১১৬ জন আলেমকে নিয়ে গণকমিশনের ‘অবমাননাকর’ তালিকা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে চরমোনাই পীর বলেন, অবিলম্বে ওই তালিকা প্রত্যাহার করে জাতির কাছে মাফ চান। অন্যথায় আগামীতে এ দেশের জনগণ ‘গণধোলাই’ কমিশন গঠন করবে। তখন গণকমিশনের হোতারা পালিয়েও রক্ষা পাবে না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কয়েকটি দল আমাদের বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় এসে ধোঁকা দিয়েছে। তারা জনগণের স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করেছে। এই দলগুলো এখন দেশে মাকাল ফলে পরিণত হয়েছে।
এ দিকে এককালে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত মিত্র জাতীয় পার্টিও সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, নিরক্ষরতার কারণে যে দেশের নির্বাচনে প্রার্থীর নামের পাশে প্রতীক ব্যবহার করতে হয়, এমন বাস্তবতায় ইভিএমে ভোট নেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। সম্প্রতি জাপার চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির এক মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন। জাপার চেয়ারম্যান আরো বলেন, ইভিএমের নির্বাচনে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। কারণ সেখানে ব্যালট পেপার থাকে না। ফলে ভোটিং মেশিন যে রেজাল্ট দেবে, তাই ঘোষণা হবে। দেশে গণতন্ত্র নেই, একদলীয় স্বৈরশাসন চালু হয়েছে উল্লেøখ করে জি এম কাদের বলেন, সংবিধানকে কাটাকাটি করে স্বৈরতন্ত্রকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে দেশে সাংবিধানিক স্বৈরশাসন চলছে। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্রের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষা করা যাবে না।

 


জাপার চেয়ারম্যান আরো বলেন, জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে ১৯৯০ সালে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। কিন্তু এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর হয়েছে পুরো উল্টো, গণতন্ত্র নিপাত গেছে, স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, যে মুক্তির স্বপ্নে স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল, সেই মুক্তি দেশের মানুষ এখনো পায়নি। দেশের কোনো ক্ষেত্রেই জবাবদিহি নিশ্চিত হয়নি। জি এম কাদের দাবি করেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নিশ্চিহ্ন করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। দলের মহাসচিব মো: মুজিবুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে কোনো বেকার নেই। অথচ দেশে বেকারের সংখ্যা পাঁচ কোটি। যারা দেশের বেকারত্ব বোঝে না, তারা মানুষের কষ্টও বোঝে না। যারা মানুষের কষ্ট বোঝে না, তাদের দেশ পরিচালনার অধিকার নেই। ভবিষ্যতে জাতীয় পার্টি কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জোট করবে না বলে জানান জাপার মহাসচিব। ধারণা করা হচ্ছে, প্রবীণ নেতা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারায় চলে আসতে পারে। উল্লেখ্য যে, জি এম কাদেরের নেতৃত্বকে দুর্বল করার জন্য রওশন এরশাদকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরশাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বিদিশাও নতুন দল করে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। আর এসব কিছুই উপরের ইঙ্গিতে করা হচ্ছে বলে মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ সব ডান ও বাম দল তাদের নিজস্ব পরিমণ্ডল থেকে পৃথক পৃথকভাবে জাতিকে নিশ্চিত করেছে যে, তারা কেউই ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এ দলগুলো মনে করে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত করে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট কারচুপির মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসতে চান। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ভোট কারচুপি করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে সিইসি সাহেব পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকুন।’ এতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকারের অধীনে যারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে তারা জাতীয় বেঈমান। এখনই সরকারের যা অবস্থা তাতে বোঝা যাচ্ছে ‘একে একে নিভেছে দেউটি’। শেষ বেলায় কেউ থাকবে না তাদের সাথে। ‘এই সরকারের পরিণতি হবে শ্রীলঙ্কার মতো। তারা পালানোর পথ পাবে না’। এসব মন্তব্য গণমাধ্যমে অসংখ্যবার উচ্চারিত হচ্ছে।

 


দেশে এই মুহূর্তে যে রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত রয়েছে, তা বহমান থাকলে ২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য কোনো রাজনৈতিক দলই স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে অস্বাভাবিক পথেই এগোতে হবে। সেই অস্বাভাবিক পথ হতে পারে- ক. জরুরি অবস্থাসহ সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়া; খ. সংসদের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া; গ. ১৪ দলভুক্ত দলগুলোকে দিয়ে বিরোধী দলের অভিনয় করানো; ঘ. জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা। তবে কোনো বিকল্পই সহজ হবে না। অভ্যন্তরীণ আন্দোলন যদি ক্রমেই বেগবান হয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে গণ-অভ্যুত্থানের রূপ লাভ করে, তাহলে সব হিসাব-নিকাশ ওলট-পালট হয়ে যাবে; ঙ. আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে বিদায় নেবে। বিদেশের চাপ এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আর প্রতিবেশীকে যদি দেশের প্রগতিশীল নেতারা আশ্বস্ত করতে পারেন, তাহলে পরিবর্তনটি সহজতর হতে পারে। সবকিছুই নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কুশলতা ও গণ-আকাক্সক্ষার তীব্রতার ওপর। আমরা বিশ্বাস করতে পারি, জনগণই যদি ক্ষমতার উৎস হয় তাহলে গণতন্ত্রের বিজয় অনিবার্য। বাংলাদেশে প্রচলিত প্রবাদটি এ রকম যে, ‘ন্যাড়া একবারই বেলতলা যায়’। বাংলাদেশের ন্যাড়ারা ইতোমধ্যে দু’বার বেলতলায় গেছে। জনগণের প্রশ্ন, ২০২৩ সালে ন্যাড়ারা আবার কি বেলতলায় যাবে? ন্যাড়া ক’বার বেলতলা যায়!
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com