Naya Diganta

মানবিক পুলিশ জীবন মাহমুদ

ছোটবেলা থেকেই অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্ট মনে গভীর ছাপ ফেলতো। বাবা পানির সেচযন্ত্র ও পাওয়ারটিলারের ব্যবসায় অনেক গরিব কৃষকের কাছ থেকে টাকা নিতেন না। চাকরিতে এসে বিষয়টি আরো বেশি মনে সাড়া ফেলে। শতসহস্র মানুষের সাথে মেশার সুযোগ করে দেয় পুলিশের চাকরি। মানুষের দুঃখ কষ্ট সহজে অনুভব করা যায় এখানে। মানুষের সাথে মিশে সেবা দেয়া যায়। তার অনুপ্রেরণা চট্টগ্রাম বেওয়ারিশ সেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পুলিশ সদস্য মানবিক শওকত। ফেসবুকের কল্যাণে অনেকেই অসহায়দের সহযোগিতা করেন। সেই অসহায়দের খুঁজে সহযোগিতা করার একজন হলেন জীবন মাহমুদ। তিনি চাকরি করেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে। ফেসবুকের কল্যাণে তিনি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন শত শত মানুষকে। এমনকি করছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও। কিভাবে তিনি মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সেই গল্প শুনিয়েছেন নয়া দিগন্তের সাথে একান্ত সাক্ষাতে।

দ্বীপজেলা ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের শাহাবুদ্দিন মিয়ার একমাত্র সন্তান জীবন মাহমুদ। তিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে কর্মরত আছেন বরিশালে। পুলিশে যোগদান করার পর রাস্তাঘাটে ডিউটি করতে গিয়ে দুস্থ মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র দেখতে পান জীবন মাহমুদ। সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন আর কিছু অসহায় মানুষের চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করে সাহায্য চেয়েছেন। অনেকেই এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। তখন চিন্তা করলেন মানুষের উপকারে ফেসবুক একটি দারুণ প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মকে মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। সেই থেকে শুরু। তিনি বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার পরামর্শ ও রক্তদাতার সন্ধান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানিমূলক বিষয়গুলোতে সাহায্য করা, আইনি সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হয়।

এমনকি রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষদের ঘর করে দেয়া হয়েছে আমার বেতন এবং কিছু অনলাইন শুভাকাক্সক্ষীর সহযোগিতায়। এখন পর্যন্ত ভোলা ও বরিশাল জেলায় ১০টি অসহায় পরিবারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যার সমাধানও দেয়ার চেষ্টা করেন জীবন মাহমুদ। কারো পুলিশি বা ডাক্তারি সেবা এবং আইনি পরামর্শ লাগলে ফেসবুকে পোস্ট করেন আর মুহূর্তে মিলে পরামর্শ। হয়ে যায় সমস্যার সমাধান, এই ফেসবুক আইডিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজনের অনুরোধ আসে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ ব্যাগের বেশি রক্ত ম্যানেজ করে দিয়েছেন। করোনাকালে প্রায় ২০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন জীবন মাহমুদ। সেই সাথে গৃহহীনদের ঘর করে দিয়েছেন তিনি।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করে ইতোমধ্যে ২০জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার উপহার দিয়েছেন জীবন মাহমুদ। এছাড়া ২৫ জন অসহায় রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে তারা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে ছিলেন তিনি। পাঁচজন অসহায় বৃদ্ধ মায়ের দায়িত্ব নিয়ে তাদের পাশে ছিলেন। বরগুনার অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের পাশে ছিলেন। শীতে অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ করেন।

জীবন মাহমুদ বলেন, আমার মানবিক কাজে সহযোগিতা করেন প্রবাসী, চিকিৎসক, পুলিশ, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। আমি সবার সহযোগিতায় একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। রমজানে তিনি একটি হাফেজি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে পবিত্র কুরআন মাজিদ, রিহাল ও পাঞ্জাবি বিতরণ করেছেন।

সিলেটে সাম্প্রতিক পাহাড়ি ঢলে চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতায় আটকে পড়া শতাধিক অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুভাকাক্সক্ষীদের সহায়তা নিয়ে অসহায় মানুষের মাঝে অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন জীবন মাহমুদ।
তিনি জানান, আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। একটি ডিজিটাল এতিমখানা ও মাদরাসা গড়তে চাই, যেখানে কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক সব শিক্ষা থাকবে, সব সুযোগ-সুবিধা পাবে শিক্ষার্থীরা।

কাউকে যেন রাস্তায় ঘুমাতে না হয়, বয়স্ক ও পথশিশুদের জন্য আবাসস্থল করতে চাই। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে থাকতে চাই, মানুষের জন্যই কাজ করে যেতে চাই।