Naya Diganta

চীনকে ঠেকাতে ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামো কোয়াডের

টোকিওতে কোয়াডের শীর্ষ চার নেতা (বাঁ থেকে) আলবানিজ, বাইডেন, কিশিদা ও মোদি : এএফপি

চীনবিরোধী জোট হিসেবে পরিচিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে গঠিত কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগের (কিউএসডি বা কোয়াড) শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার জাপানের টোকিওতে বৈঠক করেছেন। এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর আগে সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর প্রসপারিটি’ (আইপিইএফ)-এর। এতে ক্ষুব্ধ বেইজিং।
আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবার ঘোষণা হলেও এই ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হতে সময় লাগতে পারে আরো দেড় থেকে দুই বছর। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপানসহ ১৩টি দেশ যুক্ত এই অর্থনৈতিক কাঠামোতে। এই অর্থনৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আইপিইএফ’-এর জন্য ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সব দেশের সাথে কাজ করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০২১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে এই প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসে আলোচিত হয়। বলা হয়, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রথাগতভাবে বাণিজ্য চুক্তি হবে না। এই চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসায়িক নীতি, সরবরাহ শৃঙ্খল, অবকাঠামো ও কার্বন নিঃসরণের মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া কর ও দুর্নীতি দমন বিষয়গুলোতেও সংযোগ তৈরি করা হবে সদস্য দেশগুলোর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের শীর্ষ নেতারা ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তারকারী চীনকে মোকাবেলা করার এবং রাশিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য দূর করার লক্ষ্যে টোকিওতে আলোচনা করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও এবারের বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তাইওয়ান ইস্যু কোয়াড এজেন্ডায় ছিল না, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাইওয়ানকে সামরিক সমর্থন দেয়ার ঘোষণার পর এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে এই অর্থনৈতিক কাঠামো বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নয়। এর আগে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি ছিল। আইপিইএফে বাইডেন যে দেশগুলোকে সাথে নিয়েছেন সেগুলো হলো ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রস্তাবে ২০০৭ সালে কোয়াড গঠিত হয়। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ জোটের অংশীদার ছিলেন সে সময়। শুরুর দিকে এটি নিষ্ক্রিয় থাকলেও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ২০১৭ সালের পর থেকে এটি আবার সক্রিয় করতে তৎপর হন নেতারা। এখন জো বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আরো তৎপরতা শুরু করেছেন।
এ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে বিশ্ব ‘আমাদের যৌথ ইতিহাসের একটি অন্ধকার সময় পাড়ি দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশগুলোর নেতাদের তিনি এ কথা বলেন। বাইডেন বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ এখন বৈশ্বিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিচ্ছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে সুর মিলিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ইউক্রেনে আক্রমণের মতো ঘটনা এশিয়ায় হওয়া উচিত হবে না।