Naya Diganta
দেশে ঘনীভূত হচ্ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট

ভিত্তি মজবুতে স্বচ্ছতা প্রয়োজন

দেশে ঘনীভূত হচ্ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট

দেশের অর্থনীতি বেশ কিছু দিন ধরে টালমাটাল। পণ্যমূল্যের ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এবার দেখা দিয়েছে ডলারের বাজারে অস্থিরতা। বাস্তবে এর দুষ্প্রাপ্যতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যের সাথে বাজারে ডলারের দামের মিল নেই। লক্ষণীয়, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলেও যেকোনোভাবে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর এবার সরকার নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে।
মূলত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। এর আঁচ লাগছে বিশ্বব্যাপী। দু’ধরনের দেশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়বে। প্রথমত, যেসব দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল এবং দ্বিতীয়ত, যেসব দেশের অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। শেষোক্ত কারণে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে পুরো দেশই এখন ডুবতে বসেছে।
ডলারের সঙ্কট শুরুর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক দফা টাকার মান কমিয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার ৪০ পয়সা বাড়ানোর পর ডলারের দাম এখন ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। তবে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, ৯৫ টাকার কমে ডলার মিলছে না। বাস্তবতা হলো- জরুরি প্রয়োজনে বাজার থেকে আরো বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে আমদানি-রফতানি বড় আকারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা সীমিত করেছে, পরিস্থিতির চাপে কিছু প্রতিষ্ঠান তা বন্ধও করে দিয়েছে। এটি এমন এক সময় হচ্ছে; যখন দেশে আমদানি বাড়ছিল। সব মিলিয়ে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনগুলোতে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব কয়েকগুণ বেশি আকারে পড়বে।
সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশে ডলার পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ফলে যে কেউ যেকোনো অঙ্কের ডলার বাইরে থেকে পাঠাতে পারবেন। অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না। আগে এ সীমা ছিল কমবেশি পাঁচ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার। অর্থের প্রবাহ আরো বেগবান করতে এর সাথে সরকার আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। এমন উদারীকরণের কারণ কী, সে বিষয়ে কয়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এর ফলে যেসব টাকা দেশ থেকে চলে গেছে আবার তা ফিরে আসবে। বোঝাই যাচ্ছে, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা সরকারের লক্ষ্য। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে প্রবাসী আয় বাড়বে। তবে লাভবান হবে দুর্নীতিবাজরা। তারা এখন অবৈধভাবে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনবে। এতে করে নিঃসন্দেহে আমাদের অর্থনীতি সাময়িক কিছুটা লাভবান হতে পারে। কিছু দিন ধরে শেয়ারবাজারেও বড় ধরনের দরপতন দেখা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার আশঙ্কা থেকে শেয়ারের দরের পতন হচ্ছে, এটা সহজেই অনুমেয়। অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসের পর সেখানে কিছুটা স্থিতি এসেছে। এগুলো সমস্যায় প্রলেপ দেয়া মাত্র; কোনোভাবেই স্থায়ী সমাধান নয়।
বিগত বছরগুলোতে সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। যখন কোনো সমস্যা সামনে এসেছে সরকার সাময়িকভাবে সেটি সমাধান করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকার নৈতিক দিকটি আমলে নেয়নি; আমলে নেয়নি এর দীর্ঘমেয়াদি ফল কী হবে তা-ও। একটি বিপদ যেকোনো মূল্যে মোকাবেলা করা মানে তা স্থায়ী সমাধান হয়ে যাওয়া নয়। আমরা সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপেও এমন উদ্যোগ দেখেছি। যার কিছু এখন মহাসঙ্কট হয়ে সামনে আসছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দৈনন্দিন ভিত্তিতে সমাধান করেছে সরকার। ভোটাধিকার প্রয়োগ ও মানবাধিকার নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার নীতিগত দিকটি বাদ দিয়ে সমায়িকভাবে পরিস্থিতি উতরাতে চাইলে সেটিও একসময় দায় হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ জন্য অর্থনৈতিক বিষয়ে স্বচ্ছতার নীতি অবলম্বন করা উচিত। আমাদের অর্থনীতির ভিত শক্ত করতে সরকারের উচিত সুদূরপ্রসারী চিন্তা করা।