Naya Diganta

জীবনমান উন্নয়নে অসাধু প্রতিযোগিতা ও মূল্যস্ফীতি

অসাধু প্রতিযোগিতা ও মূল্যস্ফীতি

গত সংখ্যার পর
বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল ওই ধরনের এক ‘জনতুষ্টি শাসন’ কায়েমের লক্ষ্যে অনেকটা সে দিকেই এগিয়ে গেছে। ওপরে উল্লিখিত বেড়াজাল থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা বর্তমান ক্ষমতাসীনরা খোলা রাখেননি। কেননা বাংলাদেশেও বর্তমানে এক দিকে সরকার সমর্থক গোষ্ঠী ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষমতার তাত্তি¡ক ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে এবং তারাই আবার ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে অবাধে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুটপাট করছে। এই লুটপাট করার আদব-কায়দা ও নীতি-কৌশল একই। এটি হলো সরকারদলীয় রাজনীতিবিদ, আমলা, পেশাজীবী ও বায়বীয় ব্যবসায়ীদের একটি দুষ্টচক্র। মুখরোচক হিসেবে বলা যায় সরকার সমর্থকদের ‘লুটপাটের সিন্ডিকেট’। অন্য দিকে সমর্থকদের মধ্যে যারা দুর্বল, সেসব সমর্থককে তুষ্ট রাখার লক্ষ্যে সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় নিত্যনতুন নামে বহু কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। এসবের আসল উদ্দেশ্য হলো সরকার সমর্থকদের তুষ্ট রাখা ও তাদের সমর্থন ধরে রাখা। তাতে ভর্তুকি ও ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে বিদেশের সাথে দায়স্থিতি হিসাব বেসামাল হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, ভর্তুকি, শাসক দলের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে গড়ে ওঠা নতুন স্বার্থান্বেষী ও লুটেরা গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জনতুষ্টির নীতিগুলো পর্যালোচনা করলে তেমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে স্পষ্টতই অনুভ‚ত হয়। এ অবস্থার আশু নিরসন না হলে বাংলাদেশকেও যে অচিরেই আইএমএফের বাধ্যতামূলক নীতির আওতায় যেতে হবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

আইএমএফের সমসাময়িক পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ
আইএমএফের সাথে চুক্তির আর্টিকেল ৪-এর আওতায় প্রতি বছর আইএমএফ প্রতিটি দেশের সাথে ওই দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা একটি বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এটি ‘আর্টিকেল চার’ আলোচনা নামে আখ্যায়িত। মার্চের প্রথম সপ্তাহে আইএমএফের বরাতে বিভিন্ন সংবাদপত্র একটি প্রতিবেদন ছাপায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী আইএমএফ বলেছে; ক. বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বর্তমানে সহায়ক পরিবেশ নেই। উন্নতি প্রয়োজন। খ. দেশের রফতানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো বৈচিত্র্যতা নেই। বৈচিত্র্যতা আনতে হবে। গ. বিদেশের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়াতে হবে। সে জন্য শুল্ক ও অশুল্ক অন্তরায়গুলো কমাতে হবে। ঘ. বাণিজ্যকেন্দ্রিক অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। ঙ. শিল্পকেন্দ্রিক দক্ষতা বাড়িয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। চ. মামলার জট কমাতে হবে। ছ. সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষাজনিত বিধিবিধান ও বাস্তবায়ন খুব দুর্বল; এগুলোর বাস্তবায়ন জোরদার করতে হবে। জ. বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা বাড়াতে হবে। ঝ. বাণিজ্যিক খাতের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ খুবই দুর্বল।

আমরা যে যেভাবেই উপরিউক্ত সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করি না কেন, এগুলো করা না হলে এসবই বাংলাদেশেরে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়াবে। তবে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বর্তমান সরকারের এগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এগুলোর বাস্তবায়নে একান্ত প্রয়োজন হলো শাসনব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সুশাসন।
একই প্রতিবেদনে সরকারের কার্যকারিতা ও সুশাসনের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা যেমন; ক. সরকারের কার্যকারিতা। খ. আইনের শাসন। গ. দুর্নীতি দমন। ঘ. বিচার বিভগের স্বাধীনতা। ঙ. আইনশৃঙ্খলার ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মান। চ. সম্পত্তির অধিকার সুরক্ষা ইত্যাদির অবস্থা পর্যালোচনা করে বলা হয় যে, এসবই বাংলাদেশে বর্তমানে অত্যন্ত নিম্নমানের। এগুলো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। আইএমএফের প্রাক্কলন অনুযায়ী সুশাসনের ক্ষেত্রে ‘০’ থেকে ‘২.৫’ স্কোরকে ‘ভালো’ বলে নির্ধারণ করা হয়। অন্য দিকে ঋণাত্মক বা মাইনাস ২.৫ পর্যন্ত স্কোরকে দুর্বলতার নির্দেশক হিসেবে গণ্য করা হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে উপরিউক্ত সব সূচকেই বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ঋণাত্মক; অর্থাৎ শূন্যেরও নিচে। এগুলো নিম্ন আয়ের দেশ অথবা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকেও খারাপ। সমাজ ও দেশের অর্থনীতিকে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে নেয়া বর্তমান সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। তাদের সেই সামর্থ্য নেই।

এ অবস্থার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আক্ষেপ করে বলেছেন, দেশে কোনো শক্তিশালী বিরোীধদল নেই। দেশে যেভাবে প্রহসনের নির্বাচন হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে হয়তো কোনো দিন শক্তিশালী হবেও না। তবে নিয়মানুযায়ী ও ঐতিহাসিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায়, বিরোধীরা সংসদে যত দুর্বল হবেন, ততই রাজপথে শক্তিশালী হবেন। যেমন ওপরে উলি­খিত দেশগুলোতে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারগুলো বিরোধীদের নির্বাচনে জয়ী হতে দেয়নি, আর যত দিন গেছে ততই তারা রাজপথে শক্তিশালী হয়েছেন। যদিও অত্যাচার, নির্যাতন, হামলা, মিথ্যা মামলায় তাদের দমন করে রেখেছিল। তবে একই সাথে শাসক দলের অভ্যন্তরে ক্ষমতা, দলীয় পদ-পদবি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও লুটপাটের অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তাতে তারা নিজেরাই দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়ে। ওই সময় বিদেশী বন্ধুদের সাহায্যও তাদের বাঁচাতে পারেনি। ওই সব দেশের মতো বাংলাদেশেও শাসনব্যবস্থার মূলতন্ত্র হলোÑ যে দল ক্ষমতার মসনদে যাবে, দেশের সব কিছুই ভোগদখল স্বত্বের অধিকার তাদের জন্য সংরক্ষিত। সেটি যদি স্বেচ্ছাচারিতা, স্বৈরতান্ত্রিকতা ও লুটপাটের মাধ্যমেও হয় তাহলেও কোনো বাধাবিপত্তি নেই। এ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক কোনো খাতেই সরকারের সাথে বিরোধী দলের মতবিনিময়ের কোনো সুযোগ বা উদাহরণ নেই। যদি কোনো বিষয়ে মতবিনিময় করা হয় সেটি হলো সাধারণ জনগণকে নাটক দেখানোর মতো তামাশা মাত্র। যেমন ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে সরকারপ্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর টেলিফোনের কথোপকথন বা ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠক। এরূপ ঘটনা বাংলাদেশে সব শাসনামলেই ঘটে আসছে। তবে বর্তমানে এ তামাশা এমন রূপ ধারণ করেছে, যা পুরো দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সামাজিক ভারসাম্য ও অর্থনীতিকেই বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। যাই হোক আমরা আলোচনার মূল প্রতিপাদ্যে ফিরে যাই।

লুটেরা গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রতিযোগিতা
মন্ত্রী, অনির্বাচিত সংসদ সদস্য, সরকার সমর্থক রাজনীতিবিদ, দুর্বলচিত্তের ও পক্ষপাতদুষ্ট বুদ্ধিজীবী, নামসর্বস্ব ভোক্তা অধিকার রক্ষাকারী, মুক্তবাজার বিরোধী, এমনকি সরকারি পদ-পদবিধারী বহু অর্থনীতিবিদও সবসময় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে সম্বোধন করে। তারা ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে দায় চাপানোকে আজকাল অনেকটা সচরাচর নিয়মে পরিণত করেছেন। এর কারণ হলো এ শব্দটির অর্থ যাই হোক শুনতে ও বলতে বেশ মুখরোচক। তা ছাড়া এ শব্দটির প্রকৃত অর্থকে আঁকাবাঁকা করে বা বাঁকিয়ে বললে মূল্যস্ফীতির ফলে চরম ভুক্তভোগী ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করা অত্যন্ত সহজ। এই মুখরোচক শব্দটি, মূল সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু থেকে ভুক্তভোগী ভোক্তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে নিতে বেশ সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে। এসব অহেতুক বাগি¦তণ্ডার আড়ালে সরকার মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে গোটা জাতিকেই বিভ্রান্ত করে চলেছে। যেমনÑ বাড়িভাড়া, যাতায়াত খরচ, খাদ্যপণ্য, তেল, গ্যাস, পানি, ডাক্তার, হাসপাতাল বা ওষুধের মূল্য যতই বাড়–ক না কেন, সরকারি পরিসংখ্যানে ছয় থেকে সাত শতাংশের মধ্যে দেখানো হচ্ছে। সরকারি পরিসংখ্যান দেখলে মনে হয় যে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হলেও পরিসংখ্যানে দেখানো হবে ছয় থেকে সাত শতাংশ। মূল্য বৃদ্ধি ১০০ টাকার পণ্য ২০০ টাকা হলেও সরকারি পরিসংখ্যানে দেখানো হবে ছয় থেকে সাত শতাংশের মধ্যে। আমার মনে হচ্ছে বর্তমানে আমাদের দেশে পরিসংখ্যানের ফলাফল নির্ণয়েও হয়তোবা কোনো ইভিএম (ঊঠগ) মেশিন আবিষ্কার হয়ে গেছে।

আজকাল আবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন বড় বড় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। আবশ্যিকভাবে বলতে হয় তারা যত না বড় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাÑ তার চেয়ে অনেক বেশি বড় হলো রাজনৈতিক নেতা। অনেকে আমাকেও একই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তাতে আমার আপত্তি নেই, যদি তারা আমার জীবনের কর্ম-প্রক্রিয়া যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বর্তমান সমস্যা হলো এদের অনেকেই এক দিকে ভুঁইফোড় বা নামমাত্র সংগঠনের নামসর্বস্ব নেতা, আবার অন্য দিকে যথাযথভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরিবর্তে মনোনীত। তারা ক্ষমতাসীনদের অনুগ্রহপ্রার্থী। কেউ রাজউকের প্লট, কেউবা ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, আবার কেউ কেউ ভবিষ্যতে নিজ এলাকায় স্থানীয় সরকার বা সংসদ সদস্যের মনোনয়ন পেতে চান। ব্যবসায়ী সংগঠনের এসব নেতাও আজকাল প্রকৃত ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযুক্ত করছেন একই দোষে। অর্থাৎ ছাগল যেন ফসলের ক্ষেত নষ্ট করতে না পারে সে জন্য দেয়া হয়েছে মুলিবাঁশের বেড়া। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে এখন সেই বেড়াই ক্ষেতের ফসল নষ্ট করতে বা খেয়ে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

অন্য দিকে আবার ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেন। সন্দেহ নেই যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বা আমদানিনির্ভর, যেমনÑ গম, চিনি, ভুট্টা বা ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে এ দাবি একান্তই যুক্তিযুক্ত। এ কথাও সত্যি যে এ কয়েকটি পণ্যের আমদানি মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। এর প্রধান কারণ হলো এসব পণ্য (খাদ্য) আমদানি করতে হয় দূরদেশ থেকে। এর জন্য প্রয়োজন যেমন বিশ্ববাণিজ্যের অভিজ্ঞতা, তেমন বড় অঙ্কের মূলধন। তাই ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের পক্ষে এসব পণ্যের আমদানি সম্ভব নয়। তবে প্রশ্ন হলো এই যে, যেসব পণ্য বা সেবা আমদানিকৃত নয়, যেমনÑ সবজি, সাবান, বোতলজাত পানি, বাড়ি বা গাড়ি ভাড়া, সেসব পণ্য বা সেবার মূল্য কেন দিন দিন বাড়ছে। সবজি ও বোতলজাত পানির জন্য কোনো কাঁচামাল বাইরে থেকে আমদানি করা হয় না অথবা আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচÑ এসব পণ্য আমদানিতে হাজার হাজার ব্যবসায়ী নিয়োজিত। তা হলে এগুলোরও দাম বাড়ছে কেন?

একটি দৃশ্যমান ও চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত হলো বাড়িভাড়া। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন নগরে বাড়িভাড়া বেড়েছে ২৫০ শতাংশ। আগে সাধারণ চাকরিজীবীদের আয়ের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ খরচ হতো বাড়ি ভাড়া খাতে। এখন কেবল বাড়ি ভাড়ার জন্যই তার মোট আয়ের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ব্যয় হয়।’ সবাই জানেন বাড়ি ভাড়া ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করে না। উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশে এখনো বাড়ি ব্যবস্থাপনার কোনো মধ্যস্বত্ব কোম্পানি গড়ে ওঠেনি। তা হলে বাড়ি ভাড়া এত দ্রুতগতিতে বাড়বে কেন। দেশে বাড়ির সরবরাহ থেকে কি চাহিদা বেশি? এখানে প্রশ্ন হলো, কারা বা সমাজের কোনো গোষ্ঠী হঠাৎ করে বাড়ি ভাড়া নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে? যার ফলে সাধারণ মধ্যম শ্রেণীর অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া অনেকটা নাটকীয়ভাবেই বেড়ে গেছে। অবশ্য এসব বিষয়ের সমস্যা নিয়ে কাউকে সিন্ডিকেট বলে দোষারোপ করতে শোনা যায় না। পাঠক নিজেই এদিক-সেদিক তাকালেই দেখবেন যে আজকাল অনেক চেনাশোনা রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠনের ছোটখাটো নেতারা, যারা মাত্র কিছু দিন আগেও মাসিক ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা দিয়ে ছোটখাটো একটা রুম বা মেসে ভাড়া থাকতেন, তারা এখন ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকার ভাড়া ফ্ল্যাট ছাড়া থাকতে পারেন না। তার পর সাথে টেলিভিশন, ফ্রিজ, এমনকি নামীদামি বিদেশী আসবাবপত্র ছাড়া জীবন চলে না। এমনকি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত অনেক ছাত্র ও যুব নেতারাও এখন নামীদামি গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অতএব, সহজেই অনুমেয় যে সমাজে শ্রমিক, ব্যবসায়ী, কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী গোষ্ঠী ছাড়াও আরো গোষ্ঠী রয়েছে যারা নিজেদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে এসব পণ্য বা সেবার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। সেটিই হয়তো এসব খাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ হতে পারে। এ অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতা প্রথমে মূল্যস্ফীতির সঙ্কেত সৃষ্টি করেছে বা ভিত্তি তৈরি করেছে। পরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অকার্যকর সরকারের অসামর্থ্য মূল্যস্ফীতির হারকে দিন দিন আরো দ্রুতহারে বাড়াতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করেছে। এ ছাড়া অন্যান্য কারণ যেমন বাজেট ঘাটতি, ভর্তুকি, সুদের হার, অতিমাত্রায় সরকারের ঋণ, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, অতিমাত্রায় শুল্কের প্রভাব, এগুলো তো আছেই।

এখন প্রশ্ন হলো, এসব গোষ্ঠী কারা। তারা কি চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সাংবাদিক বা যারা সৎ এবং সরকারি-বেসরকারি খাতে সাধারণ চাকরি করেন তারা? বলাবাহুল্য এসব গোষ্ঠীর অনেকের আয় সাধারণত স্থির (ঋরীবফ)। তা হলে ওই গোষ্ঠী কারা, যাদের হাতে এত টাকা। সাধারণ ব্যবসায়ী, যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করছেন, যারা কোনোরকমে জীবনযাপন করেন বা জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা করছেন, যারা নিয়মিত সমাজের বিভিন্ন অসাধুগোষ্ঠীর অপবাদ (সিন্ডিকেট) শুনে দিনাতিবাহিত করেন, যারা প্রতিনিয়ত ঋণ খেলাপি হচ্ছেন, তাদের মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করা একেবারেই যৌক্তিক নয় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলে এরা কারা? এরাই হলো সম্ভবত সেই টুকটাক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী নামেমাত্র ব্যবসায়ী। আসলে এরা হলো ক্ষমতাসীনদের আনুক‚ল্যে থেকে দেশের সম্পদ লুটপাটকারী গোষ্ঠী।

চিকিৎসক, অধ্যাপক, সাংবাদিক বা যেকোনো স্থির (ঋরীবফ) আয়ের পেশাজীবীদের (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নামার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে উল্টো এসব পেশাজীবী, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, সাধারণ ব্যবসায়ীদের মতো দুর্ভোগ নিয়ে জীবনযাপন করেন।

অতএব, প্রতিদিন আমরা যা দেখি, শুনি বা উপলব্ধি করি, সেগুলোকে ভালো করে পর্যালোচনা করলে তার ফলাফল কেবল আমাদের একটা শ্রেণীর দিকে টেনে নিয়ে যায়। এ শ্রেণীটি হলো ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পর্কিত ও জড়িত নানা গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকরা। তাদের সাথে আরো যোগ করা যেতে পারে অসাধু ও বিনা ভোটে নামমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি, অনির্বাচিত ও দুর্নীতিবাজ আমলা বা পেশাজীবী, যারা সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত থেকেও অকুণ্ঠচিত্তে দুর্নীতি এবং গরিবের সম্পদ চুরি ও লুণ্ঠনে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তারা চুরির টাকা আড়ালে রাখার জন্য নিজ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে অগ্রজ হিসেবে নামে-বেনামে ব্যবহার করে। সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, তারা আজকাল কাজ না করেই অতিরিক্ত টাকা বানাচ্ছে। এই গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে সম্পদ হস্তগত বা করায়ত্ত করার সাথে সাথে আর্থসামাজিক পরিমণ্ডলে তাদের জীবনমান ও মর্যাদা বাড়ানোর জন্য এক অসাধারণ, অবাঞ্ছিত ও অসাধু প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে। এসব গোষ্ঠীর সদস্যরা আবার নিজেদের জীবনমান উন্নত করার সাথে সাথে একে অন্যকে টপকে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ার সাথে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লুটেরা বাহিনীর জীবনমান উন্নয়নের প্রতিযোগিতাও মূল্যস্ফীতির শিখাকে লেলিহান করে তুলেছে বলে প্রতীয়মান।

এই লুটপাট ও অসাধু প্রতিযোগিতায় কোনো নৈতিকতা, সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা বা কোনো ব্যবসায়িক মান ও প্রমিতির কোনো বালাই নেই। তাদের কাছে আইনকানুন কোনো বিষয় নয়। কেননা তারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ের লোক। তাদের প্রয়োজনে বা সুবিধার্থে সরকারের সরবরাহ ও সংগ্রহ বিধিমালা (চৎড়পঁৎবসবহঃ জঁষবং ধহফ জবমঁষধঃরড়হং) বদলানো হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনমাফিক বিধিবিধান এড়িয়ে গিয়ে ব্যতিক্রমী কার্যপন্থা নির্ধারণ করতেও তাদের মুহূর্তমাত্র বিলম্ব হয় না। এমনকি সরকার তাদের সমর্থকগোষ্ঠীকে ব্যবসা দেয়ার জন্য ও ভবিষ্যতে আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখতে, নতুন আইন পাস করতেও দ্বিধা করে না। এসব গোষ্ঠী যেসব সরকারি দফতরের (ফবঢ়ধৎঃসবহঃ) সাথে ব্যবসা করে, ওই সব দফতরে বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোতে তাদের প্রয়োজনে, তাদের পছন্দমতো আমলা (কর্মকর্তা) নিয়োগ দেয়া হয় অথবা প্রয়োজনমতো বা চাপে তাদের বদলে দেয়া হয়। এসবই করা হয় সরকার সমর্থিত বায়বীয় ব্যবসায়ী এবং বিনা ভোটে, নামেমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের অশুভ যোগসাজশে।

গত কয়েক বছরে এসব দেখে মনে হয় যে, আমাদের দেশের সরকারি কর্মকর্তারা (নির্বাচিত ও অনির্বাচিত) লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে ফেলেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাটকে এসব গোষ্ঠী সমাজের ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সচরাচর রীতিনীতি বানিয়ে ফেলেছেন। দুর্নীতি সব দেশেই কম-বেশি আছে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশেও সবসময়, সব সরকারের আমলেই ছিল। কিন্তু এমন নির্লজ্জের মতো প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতির মতো চুরি, এর আগে আমাদের সমাজে আর কখনো দেখা যায়নি। এসব গোষ্ঠী শুধু যে ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার করে আছেন, তা নয়। তারা একই ধরনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের আর্থিক অঙ্গনে। ফলে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো আজ দেউলিয়া হয়ে গেছে বললে ভুল হবে না। এসব ফাঁকফোকরে পড়ে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ জপ করতে করতে ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছেন। অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। অনেকেই ঋণভারে জর্জরিত হয়ে চাপা উত্তেজনার পীড়নে অকালে মৃত্যুবরণ করছেন।

বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির গ্রহণযোগ্য কারণ ও যুক্তি
উপরিউক্ত বিষয়গুলোকে বিচার-বিবেচনায় এনে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে বর্তমানে বাংলাদেশে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, তার পেছনে নানা কারণের মধ্যে যেগুলো মুখ্য ভ‚মিকা পালন করছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : (১) বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ‚-রাজনৈতিক উত্তেজনায় অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধি; (২) সরকার সমর্থিত গোষ্ঠী যারা টুকটাক ব্যবসার নামে অপ্রতিহত গতিতে জনগণের সম্পদ লুটপাট করছে সেই গোষ্ঠীর ব্যয়ের ধাক্কা। এই গোষ্ঠীর বর্ণনা, কার্যকলাপ ও লুটপাটের কর্মপদ্ধতি আগেই বর্ণনা করা হয়েছে। অতিরিক্ত অন্যায্য ও অবৈধ টাকা হাতে পাওয়ার সাথে সাথে এই গোষ্ঠী অতি দ্রুত তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত; যার পরিণতিতে অতিরিক্ত সার্বিক চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তার বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতি সহজে পূরণ করা যাচ্ছে না; (৩) সরকারের ভ্রান্ত (জনতুষ্টি) নীতি যেমন বিভিন্ন অনুন্নয়ন খাতে অতিমাত্রায় ব্যয় ও ভর্তুকি দিতে গিয়ে অতিমাত্রায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া; (৪) উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ধীরগতিতে বাস্তবায়ন, ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্পের নামে অতিমাত্রায় ব্যয়, অপচয় ও লুটপাট; (৫) টুকটাক ব্যবসার নামে বিপুল অর্থ লুটপাট চলা সত্তে¡ও এই অসাধু কার্যক্রম বন্ধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা; (৬) লুটপাট ও চুরির মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ের ফলে অতিরিক্ত চাহিদা সৃষ্টি; (৭) অবৈধ উপার্জিত টাকা বিদেশে পাচার ইত্যাদি।

অতি অল্প সময়ে অতিমাত্রায় টাকা আয় করার ফলে সরকার সমর্থিত ও ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা এই গোষ্ঠী কেবল ভালো খাওয়া-দাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তা নয়, বরং তারা একই সাথে তাদের জীবনমান উন্নয়নে টেকসই নিত্যব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী (পড়হংঁসবৎ ফঁৎধনষবং) যেমন গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয় ছাড়াও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ভাড়া ও কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর ফলে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর চাহিদা ও সরবরাহে আসামঞ্জস্য সৃষ্টি হওয়ার ফলে এগুলোর মূল্য দ্রæতগতিতে বেড়ে গেছে। এসব পণ্য ও সেবা দ্রুত সরবরাহ করে চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা অভ্যন্তরীণভাবে নেই। ফলে এসব পণ্যের আমদানি বেড়ে গেছে। সেই সাথে এক দিকে দায়স্থিতির চলতি হিসাবে ঘাটতি ও টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে, আবার অন্য দিকে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, জমির মূল্য ও বাড়িভাড়া অস্বাভাবিক হারে দ্রুতগতিতে বেড়ে গেছে। অতএব, সহজেই বোঝা যায় যে এই গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ‘অতিরিক্ত ব্যয়ের ধাক্কাই’ হলো বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ। কয়েক বছর ধরে যা দেখে আসছি তাতে এটি অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
দুঃখজনক হলো, সরকার বদলের পরপরই আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দলের সাথে জড়িত নানা গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকরা (এদের মাঝে শুধু রাজনৈতিক সমর্থক নয়, বরং সরকারি দল সমর্থক আমলা পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা অন্তর্ভুক্ত) রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়। শাসকদলের সমর্থক, বিশেষ করে সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা বড়-ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আমলা-পেশাজীবী নির্বিশেষে সবাই অতি দ্রুতগতিতে পদ-পদবি পেতে ও ধনী বনে যাওয়ার এক অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। যারা কোনো দিন ব্যবসা করেনি তারাও জড়িত হয়ে পড়ে তথাকথিত ব্যবসায়ে; বিশেষ করে সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা, সদস্য, সমর্থক, সবাই অতি দ্রুত টাকা আয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। একই সাথে পদ-পদবির বিলি-বণ্টনে আজকাল আর দক্ষতা ও যোগ্যতার কোনো বালাই নেই। শুধু রাজনৈতিক ও দলীয় বিবেচনায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। এতে সাধারণ জনগণের কল্যাণে সাংবিধানিক ও আইন বলে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে এবং এগুলো জনকল্যাণের পরিবর্তে দলীয় কল্যাণে কাজ করছে; বরং এককথায় বলা যায় যে এগুলো এখন জনগণের অকল্যাণে কাজ করছে।

ওপরের ব্যাখ্যা থেকে সহজে প্রতীয়মান হয় যে, সরকারের অতিমাত্রায় দেশী-বিদেশী ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, লুটপাটের দিয়ে দ্রুত জীবনমান উন্নয়নে অসাধু প্রতিযোগিতা; অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ধাক্কা তত্ত¡কে (মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় অভিমত) বর্তমানে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। ফলে সমাজের ক্ষমতাধররা এক দিকে লাভবান হচ্ছে, অন্য দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক। যেমনÑ গরিব কৃষক, শ্রমিক ও দিনে আনে দিনে খায় এমন সব গোষ্ঠী ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। এতে সমাজে সম্পদের অন্যায্য বিলি-বণ্টনে, ধনী-গরিবের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে, যার প্রভাব-প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যতে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে ভবিষ্যতে অবিরত বাধাগ্রস্ত করবে।
লেখক : এমএসসি, কৃষি অর্থনীতিবিদ,
প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন
সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই