Naya Diganta

টানা পতনে পুঁজিবাজার

ভয়াবহ দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল রোববারও দিনভর বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এতে টানা আট কার্যদিবস পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় নাকাল দেশের শেয়ারবাজার।
এ অবস্থায় বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনেকেই দিশেহারা। প্রতিদিনই শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। পতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কোম্পানিগুলোও। লোকসান কমাতে দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটানো হচ্ছে। এ দরপতনের পেছনে সরকারবিরোধী একটি চক্র সক্রিয়। তারা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। চলমান দরপতনের পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরাও। তারা বলছেন, টানা দরপতনের কারণে ভালো মৌলভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের উচিত আতঙ্কিত না হয়ে ভালো কোম্পানি বাছাই করে শেয়ার কেনা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল রোববার লেনদেনের শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এতে লেনদেনের ১০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকেনি।
লেনদেনের প্রথম ১০ মিনিট বাদ দিলে পুরোটা সময় পতনের ধারায় ছিল শেয়ারবাজার। এমনকি লেনদেনের সময় যত গড়িয়েছে পতনের মাত্রা তত বেড়েছে। ফলে সূচকের বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১১৫ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ১৪২ পয়েন্টে নেমেছে। আগের সাত কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৪৪০ পয়েন্ট। আট কার্যদিবসের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান সূচক হারাল ৫৫২ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক রোববার ৩৯ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ২১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৫টির। আর ১৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৮২ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এ দিন পতনের বাজারে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ৩৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, স্যালভো কেমিক্যাল, জিএসপি ফাইন্যান্স, এসিআই ফরমুলেশন এবং শাহিনপুকুর সিরামিক। একই দিন দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৬২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি তিন লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেয়া ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টির দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ২৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির শেয়ার দাম।