অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- ২৩ মে ২০২২, ০০:১০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতিগত পার্থক্যের উল্লেখ করে অঞ্চলভিত্তিক যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একেক এলাকা একেক রকম। এটা মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে আরো ভালো করে চিনতে হবে, জানতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘ডেল্টা গভর্নেন্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় দেয়া ভাষণে একথা বলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এই ব-দ্বীপের জনগণকে নিরাপদ করতে এবং জনগণকে উন্নত জীবন দিতে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে। দেশের অর্জিত বিশাল সমুদ্র এলাকা ডেল্টা প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণের সময় যমুনা নদীর প্রশস্থতা বিবেচনায় না এনে নদীর ওপর মাত্র চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, যা পদ্মা সেতুতে করা হয়নি। ফলে, সেতুটি দীর্ঘ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি পদ্মা সেতু ছোট করতে দেইনি। আমরা নদীর সাথে বাফার জোন রেখে সেতু নির্মাণ করেছি। সুতরাং, সেতুটি (দেশের) দীর্ঘতম সেতু হয়ে উঠেছে।’
দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্রে থাকা বিশাল মৎস্য ও খনিজসম্পদ কাজে লাগানোর গুরুত্বারোপ করে এ জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি মনে করি আজকের যে বিশাল সমুদ্ররাশি আমরা পেয়েছি ‘ডেল্টা প্ল্যান’-এর সাথে একে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা ‘ব্লু ইকোনমি’ ঘোষণা দিয়েছি। অর্থাৎ সমুদ্রসম্পদকে আমাদের দেশের উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে। সে ক্ষেত্রে সীমিত আকারে হলেও কিছু কিছু গবেষণাধর্মী কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারে তার সরকার একটি মেরিন রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
‘যোগাযোগের ক্ষেত্র’ হিসেবে আমাদের বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আদিকাল থেকে এই বঙ্গোপসাগর দিয়ে সারা বিশ্বের ব্যবসা বাণিজ্যটা চলে আসছে। দুই পাশে দু’টি মহাসাগর। এক মহাসাগর থেকে আরেকটাতে যেতে হলে এই বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়েই কিন্তু চলাচলটা হয়। সেদিক থেকে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব কিন্তু অনেক বেশি। কাজেই এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ভাণ্ডারকে আমরা কিভাবে আমাদের অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে পারি, সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।
মৎস্য ও খনিজসম্পদ আহরণসহ সমুদ্রগবেষণা বাড়ানো এবং বঙ্গোপসাগরকে দূষণমুক্ত রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেদারল্যান্ডসে তিনি ‘সাউথ সি’র দূষণ দেখেছেন। সেখানে পানিতে শুধু তেল ভাসে। কাজেই আমাদের বঙ্গোপসাগরটা যেন সে রকম দূষিত না হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি এই সম্পদ আমরা কিভাবে কাজে লাগাব, সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।
দেশের নদ-নদীগুলোকেও দূষণ থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশটা নদীমাতৃক। একটা মানুষের শরীরে যেমন শিরা-উপশিরা থাকে তেমনি নদীগুলোও আমাদের দেশের জন্য শিরা-উপশিরা। কাজেই নদী-খাল সচল রাখার পাশাপাশি দূষণমুক্ত রাখতে হবে। যত্রতত্র শিল্প কারখানা যেন না হয়, সে জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে এ ক্ষেত্রে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচনে জয়ী আলবানিজকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় লেবার পার্টি নেতা অ্যান্থনি নরম্যান আলবানিজকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি গতকাল তাকে এ অভিনন্দন জানিয়ে স্বচ্ছ জ্বালানি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সমুদ্রশাসন এবং ব্লু ইকোনমি বিষয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দনপত্রে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এবং ব্যক্তিগতভাবে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় লেবার পার্টির নেতা অ্যান্থনি নরম্যান আলবানিজকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে দেয়া এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দনপত্রে গভীর বিশ্বাসের সাথে বলেন, লেবার পার্টির এই বিজয় অ্যান্থনি নরম্যান আলবানিজের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়াকে অন্তর্ভুক্তি, শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দেশটির জনগণের আস্থারই প্রতিফলন। শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেন, বাণিজ্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক গভীর হয়েছে এবং সময়ের সাথে বন্ধন আরো জোরদার হয়েছে। স্বচ্ছ জ্বালানি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সমুদ্রশাসন এবং ব্লু ইকোনমি বিষয়ে সহযোগিতায় অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপক্ষীয় সমর্থন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদার সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সুকে অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় হান ডাক সুকে উষ্ণ অভিনন্দন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল কোরিয়ার নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এক অভিনন্দনপত্রে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের পক্ষ থেকে কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় হান ডাক সুকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
হান ডাক সু তার দায়িত্ব পালনকালে বন্ধুপ্রতিম দু’দেশের দেশের মধ্যে অব্যাহত বন্ধুত্ব, বোঝাপাড়া এবং সহযোগিতার বন্ধন আরো দৃঢ় হবে বলে শেখ হাসিনা পত্রে আশা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের জনগণের স্বার্থে গভীর, ব্যাপক অংশীদারিত্বের জন্য দুই দেশের বর্তমান উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।