Naya Diganta

কুষ্টিয়ায় অপহরণের পর হত্যা, ৩ আসামির যাবজ্জীবন

জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় অপহরণের পর হত্যার দায়ে তিন চরমপন্থী সন্ত্রাসীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একইসাথে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

রোববার বেলা সাড়ে ৩টার সময় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম এই রায় প্রদান করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা নওয়াপাড়া গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ মেম্বার, (৩৫) মৃত ওমার আলীর ছেলে চান্নু (৩২) মজিবর রহমানের ছেলে বক্কার (৪০)।

এই মামলায় কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় নিয়াজ উদ্দিনের ছেলে সরকত আলী এবং মৃত হাতেম আলীর ছেলে সলিমকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত।

রায় ঘোষণার আগে আদলতে আসামি পক্ষের আইনজীবী চার আসামির হাজিরা দিলেও রায় ঘোষণার সময় খালাস প্রাপ্ত দু’জন আদালতে উপস্থিত হয় কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আদালতে উপস্থিত হয়নি। পরে দুই আসামির অনুপস্থিতেই এই রায় ঘোষণা করা হয়। কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতের পিপি অনুপ কমার নন্দী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পুলিশের কাছে চারমপন্থী সন্ত্রীদের তথ্য ফাঁস করে দেয়ার অভিযোগে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ সন্ধায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা নওপাড়া গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম এবং নামদার নামের দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ওই এলাকার চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় সে সময় মামলা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা শহিদুল ইসলামের স্ত্রীকেও হত্যার হুঁমকি দেয়। অপহরণের ঘটনার কয়েক বছর পর বন্দুকযুদ্ধে ওই সন্ত্রাসী দলের প্রধান সাদ্দাম ওরফে আবুল কাসেম মারা যাওয়া পর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমে যায়। পরে পুলিশের পরামর্শে ২০১০ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন অপহৃত শহিদুলের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন। ওই মামলায় ওই এলাকার চিহ্নিত চরমপন্থীসন্ত্রাসী সদর উপজেলা দহকুলা গ্রামের পিয়ার আলীর ছেলে শহিদুল ওরফে শহিদ মেম্বার, ওমর আলীর ছেলে চান্নু, হাতেম আলীর ছেলে সলিম, সাদ্দাম ওরফে আবুল কাসেম, টেংড়া বিশ্বাসের ছেলে মাহাতাব এবং শরকতসহ আরো অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

মামলার পরে এই ঘটনায় দীর্ঘ তদন্ত করা হয় এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে এই মামলায় ৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়। পরে মামলার আসামি শহিদুল এবং চান্নু পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন এবং শহিদুলকে অপহরণের পর হত্যা করে তার লাশ গুম করে দেয়ার জন্য কুয়ার মধ্যে ফেলে রাখার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে পুলিশ দহকুলা গ্রামের একটি পরিত্যক্ত কুয়ার মধ্যে থেকে কিছু হাড় এবং মাথার খুলি উদ্ধার করে। ডি এন এ পরিক্ষার মাধ্যমে দেহাবশেষ শহিদুলের বলে নিশ্চিত হয়।

পরে ২০১৪ সালের ৭মে মামলার সর্বশেষ দতন্তকারি কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই শহিদুল আবু বক্কা, শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদ মেম্বার, চান্নু, মাহাতাব বিশ্বাস, সলিম এবং শরকতকে অভিযুক্ত করে ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার চূড়ান্ত দদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিজ্ঞ বিচারকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মামলা চলাকালিন সময় মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আসামি সাদ্দাম ওরফে আবুল কাসেম ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।

কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতের সরকার পক্ষে আইনজীবী পিপি অনুপ কুমার নন্দী জানান, এটি একটি পুরাতন চাঞ্চল্যকর মামলা। এই মামলায় তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পলাতক আছে। বেকসুর খালাস প্রাপ্ত আসামি শরকত এবং সলিমের উপস্থিতিতে আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।