Naya Diganta

আপন মহিমায় ছুটে চলা একজন

মুশফিকুর রহীম

গভীর রাত। চারদিক নিস্তব্ধ। আধাঁরচ্ছন্ন পৃথিবী। ব্যস্ত নগরী তখন ঘুমে বিভোর। তেমনি ঘুমিয়ে ছিলেন মাহবুব হামিদ ও রহিমা খাতুন। হঠাৎ এক কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল রহিমার। উঠে গেলেন হামিদও। বুঝলেন কান্নাটা অন্য কারো নয়, কেঁদে চলেছে তাদেরই ছেলে। কান্নার কারণ ব্যাটমিন্টন। বায়না ধরেছে ব্যাটমিন্টন খেলবে। খেলবে তো খেলবেই, তাকে খেলতেই হবে। কোনোভাবেই আর শান্ত হবে না সে!

অবশেষে বাধ্য হয়ে সেই মধ্য রাতেই ব্যাটমিন্টন মাঠ সাজানো হলো, কোর্ট বানানো হলো। মন ভরে ব্যাটমিন্টন খেলে তারপরই সে ঘুমাল। বাবা হামিদ ও মা রহিমাও হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। প্রচণ্ড জেদি ছেলে। তবে মা-বাবা বরাবরই রেখেছেন আগলে৷

সেই দিন থেকে আজ, পেরিয়েছে হাজারো দিন, হাজারো রাত। কতো শতোবার চাঁদ উঠেছে, প্রতিদিন সূর্য হেসেছে; ক্যালেন্ডার বদলেছে। কিন্তু জিদটা তার এখনো রয়ে গেছে৷ সেইদিন তিনি শিশু ছিলেন, আজ নিজ সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনেন। কিন্তু জিদটা এখন সযত্নে রেখে দিয়েছেন।

আসলে জিদটাই তার এগিয়ে যাবার শক্তি। জিদটাই তার অনুপ্রেরণা। জিদটা ছিল বলেই আজ এই অবস্থানে তিনি, জিদটা ছিল বলেই আমরা মুশফিকুর রহিমকে চিনি। জেদটা ছিল বলেই ১৮ বছরেই টেস্ট দলে ডাক পাওয়া, জেদটা ছিল বলেই সেই সময়ের সেরা উইকেট কিপার খালেদ মাসুদ পাইলটকে ছিটকে দেয়া। জেদটা ছিলো বলেই সাপের মতো ফণা তুলা বাউন্স সীমানার ওপাড়ে ছুড়ে ফেলেছেন কব্জির মোচড়ে। যদিও দেখতে তিনি ছোটখাটো গড়নে!

জেদটা বরাবরই তার শক্তি। দল থেকে বাদ পড়েও পুনরায় ফিরে আসা থেকে শুরু করে সময়ের মি. ডিপেন্ডেবল হয়ে উঠা। টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন শুনে নিদাহাস ট্রফিতে গল্প লেখা। টেস্টে দুই দুইবার দ্বিশতক হাঁকানো, কিংবা সমালোচনাকে পারফরম্যান্স দিয়ে বেঁধে ফেলানো, সবই তাঁর জেদের শক্তি।

জেদের শক্তি কিভাবে? বললে তো অনেক বলা যাবে। শুধু বলি তার কথা, তারি মুখে ‘যখন আমি প্রাকটিস শুরু করি, তখন আপনারা অনেকেই ঘুমিয়ে থাকেন!’ বাকীটা না হয় বুঝে নেন? শুধু শুধুই তো তামিম ইকবাল বলেন না, আমার ছেলে ক্রিকেটার হলে তাকে বলবো যেন মুশফিকের মতো হয়। কারণ তার মতো পরিশ্রমী ক্রিকেটারদেরই হবে জয়।

যাহোক, পানিঘোলা হলেও একটা বিষয় স্পষ্ট, বিসিবি নিতে পারছে না কোনো সিদ্ধান্ত। টি-টোয়েন্টির মুশফিক থাকবেন, নাকি থাকবেন না তা নিয়ে চলছে যুদ্ধ, টানাপোড়েনে বিসিবিই এখন দগ্ধ। তামিম, রিয়াদ অভিমানে থমকালেও দমার পাত্র নয় মুশফিক। গতকাল বলে দিয়েছেন তিনি ছুটছেন, তিনি ছুটবেন ঠিক রেখে দিক।

বিসিবি’ও পারছে না সরাসরি বলতে। মিডিয়ার শিরোনাম যখন মুশফিকের দিকে, বিসিবি আবারও বসলো বেঁকে। আমরা তো বলিনি মুশফিকে নাম ধরে! প্রশ্ন হলো তবে? তবে আর কি, ইশারায় ঠেলে দিলেন বলটা মুশফিকেরই দিকে। দেখা যাক কী হয়, কী হবে। তবে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো মুশফিক পত্নীকে কাবু করে দিলেন এক ঢিলে; বললেন আমাদের হাতে বিকল্প আছে।

সব জায়গায় যেমন বিকল্প কাজে দেয় না, অভিজ্ঞতাও হয় প্রয়োজন। ব্যার্থ মুশফিকও ফলে হতে পারেন অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে দলে সংযোজন। তবে তার পরের সিদ্ধান্তটা নিতে হবে মুশফিককেই, বুঝতে হবে নিজের ভালোটা নিজেকেই। আর মুশফিক তো ভালো করেই জানেন, তিনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন!

আর সময়! কারো জন্য কখনোই তার নেই দায়। সে চলছে, সে ছুটছে আপন মহিমায়। দিন শেষে রাত আসে, রাত শেষে সূর্য হাসে; সময়ও সাথে হেঁটে চলে। সময়ের সাথে হাঁটতে তো সবাই জানে, সঠিক সময়ে থামতে কয়জন পারে? যারা পারে তাদের নামই লেখা হয় সেরার কাতারে। আর সেরা হবার ইচ্ছে কার না থাকে!