Naya Diganta

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আতঙ্কের নাম সেলফি পরিবহন

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এক আতঙ্কের নাম সেলফি পরিবহন। গতির প্রতিযোগিতায় তারা যেন সবার চেয়ে এগিয়ে থাকতে চায়। আর এ কারণেই গাড়ির নিচে চাপা পড়ে পিষ্ট হচ্ছে মানুষ, তছনছ হচ্ছে জীবন ও সংসার।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সেলফি পরিবহন বাসের দুর্ঘটনা যেন রেকর্ডসীমা ছাড়িয়ে গেছে। সেলফি পরিবহনের ব্যানারে এই রুটে চলছে দেড় শতাধিক বাস। অনেকের কাছেই এটি পরিচিতি পেয়েছে যন্ত্রদানব নামে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট হচ্ছে উথুলী, টেপড়া, মুশুরা, বরংগাইল, মহাদেবপুর, পাঁচুরিয়া, পুখুরিয়া, জোকা, বানিয়াজুরী, মুলজান, জাগির, ধামরাই ও নয়ারহাট। দুর্ঘটনা রোধে এসব স্পটের অনেকগুলোতেই ডিভাইডার বসানো হয়েছে। কয়েক জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে আন্ডার পাস ও ফুটওভার ব্রিজ। তবুও দুর্ঘটনা যেন কমছেই না।
সাভার থেকে বানিয়াজুরী নিয়মিত বাসে যাতায়াতকারী মাহফুজ আহমেদ জানান, সেলফি পরিবহনের চালকরা বেপরোয়া। অহেতুক ওভারটেকিং, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, সড়কে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া ও অদক্ষ চালকদের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীদের বারণ ও হই চই তাদের কানে পৌঁছে না।
জানা গেছে, পাঁচ মিনিট অন্তর গাবতলী থেকে এই পরিবহনের একটি করে বাস ছেড়ে যায়। একই সময়ে পাটুরিয়া থেকেও ছেড়ে আসে একটি করে বাস। আপ-ডাউন ট্রিপের জন্য কে কত বেশি যাত্রী নিবে, কে কত দ্রুত আসা যাওয়া করবে সেই প্রতিযোগিতা চলে রাস্তায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি মে মাসের চার তারিখে ধামরাইয়ের বাথুলীতে সেলফি পরিবহনের বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোহাম্মদ মিজান নামে একজন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরো ২০ জন। ৮ মে মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ভাটবাউর এলাকায় ঢাকামুখী সেলফি পরিবহনের সাথে পাটুরিয়ার দিকে যাওয়া একটি বাসের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত হন। ১১ মে মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় সেলফি পরিবহন ও সেবা গ্রিন লাইন পরিবহনের সংঘর্ষে ৩০ যাত্রী আহত হন।
সামাজিক আন্দোলনের নেতা বিমল রায় বলেন, এ রুটে তো আরো অনেক পরিবহনই চলে। তবে প্রতিনিয়ত কেনো সেলফি পরিবহন দুর্ঘটনা ঘটায়? এদের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না, তাদের সঠিক ট্রেনিং আছে কি না, তারা সড়ক আইন মানে কি নাÑ এগুলো নিয়মিত মনিটরিং করলে এত দুর্ঘটনা ঘটত না।
সেলফি পরিবহনে দায়িত্বরত তত্ত্বাবধায়কদের একজন মোহাম্মদ মিজান বলেন, ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে সেলফির ব্যানারে মোট ১৫২টি বাস রয়েছে। এর বেশির ভাগেরই রুট পারমিট আছে। কর্তৃপক্ষ অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা জহুরা জানান, জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। সেলফি পরিবহনের বাসগুলোকেও দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে জরিমানা করা হয়েছে।