Naya Diganta

বগুড়ায় কালবৈশাখীতে তছনছ বাড়িঘর, মাঠের ফসল, নিহত ২

বগুড়ায় চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ গতির কালবৈশাখী ঝড়ে বোরো ধানসহ ক্ষেতের ফসল, গাছপালা ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোরে পুরো জেলার ওপর এই ঝড় আঘাত হানে। এ সময় জেলার কাহালু উপজেলায় মাটির ঘর ধসে পড়ে একজনের মৃত্যু ও এক শিশু আহত হয়েছে। এ ছাড়া শাজাহানপুর উপজেলায় ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে গিয়ে চাপা পড়ে মারা গেছেন এক ব্যক্তি। ঝড়ের কারণে বগুড়া শহরসহ পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত কিছু এলাকায় দেয়া গেলেও অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল।
জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ৩টার পরে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। ৪টা থেকে ৪টা ৪ মিনিট পর্যন্ত ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার, যা এই মৌসুমে সর্বোচ্চ গতিবেগের ঝড়। এ সময় জেলায় ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় বলে জানিয়েছে বগুড়া আবহাওয়া অফিস।
কালবৈশাখীর ছোবলে বিভিন্ন উপজেলায় শতাধিক বসতবাড়ি ও বোরো ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কের বড় পাকুড় গাছ, সার্কিট হাউজের সীমানার মধ্যে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি, সরকারি আজিজুল হক কলেজেরসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ায় বেশ কিছু স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
কাহালু উপজেলার কালাই মাছপাড়ায় পাকুড় গাছ পড়ে ঘর ধসে মাটির চাপায় মারা গেছেন শাহিন (৪৫) নামে এক দিনমজুর। এছাড়া কালাই দক্ষিণ নওদাপাড়ায় পাকা ঘর ধসে আহত হয়েছে মেহেদী হাসান (৭) নামে এক শিশু। নিহত শাহিন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ী গ্রামের মৃত গুলজারের ছেলে। তিনি সাত বছর আগে এখানে এসে দিনমজুরের কাজ করতেন। এ দিকে শাজাহানপুর উপজেলায় গাছ চাপা পড়ে আব্দুল হালিম (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে উপজেলার বৃকুষ্টিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হালিম বৃকুষ্টিয়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে। তিনি বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে মালি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জানা গেছে, শনিবার রাতের ঝড়ে একটি বড় গাছ ভেঙে আব্দুল হালিমের ঘরের ওপর পড়ে। সকালে তিনি গাছের ডাল কাটতে গেলে গাছ চাপায় গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দুপুরে তিনি মারা যান।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ইউসুফ রানা মণ্ডল বলেন, শেষ রাতের ঝড়ে ঘরে তোলার জন্য প্রস্তুত রাখা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া জানান, শনিবার ভোর ৪টায় ঝড় শুরু হয়। মাত্র ৪ মিনিট স্থায়ী ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার। তিনি বলেন, ৪টা ৪ মিনিটে বাতাসের গতিবেগ কমে এলে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত দমকা বাতাসের পাশাপাশি ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
নর্দার্ন পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়া ছাড়াও গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের তারে। ফলে ভোর রাত পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। সকাল থেকে কাজ করে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হচ্ছে।