Naya Diganta

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পানিবন্দি থাকতে হতে পারে আরো ৫ দিন

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পানিবন্দি থাকতে হতে পারে আরো ৫ দিন।

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে স্বাভাবিক হতে অন্তত আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। ঠিক এমনই ইঙ্গিত দিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শনিবার বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর (পুর) দফতরের সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এস.এম শহিদুল ইসলাম বললেন, নদনদীর পানি কমছে। তবে আরো অন্তত পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকতে হতে পারে সিলেটবাসীর।

নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, সিলেটে বন্যার পানি কমছে। ফলে আপাতত আর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই। তবে এ অবস্থায় আরো পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকতে হতে পারে। বন্যায় যেসব এলাকায় বাঁধ ভেঙেছে সেসব জায়গায় আবার নতুন করে বাঁধ দেয়া হচ্ছে।

এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেটে যে নদী-খালগুলো আছে, সেগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড্রেজিং করার লক্ষ্যে আমরা এখানকার নদীগুলো নিয়ে স্টাডি করছি। সুরমা নদীর গতিপথ ঠিক থাকলেও এর ড্রেজিং করতে হবে। এ লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এখনো প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন হয়নি, তবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে। সুরমা নদীর ড্রেজিং হয়ে গেলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কমে যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সিলেটে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। ফলে নগরসহ আশপাশের এলাকার পানি কিছুটা কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকেলে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার এই দুটি পয়েন্টে পানি প্রবাহ যথাক্রমে ১১ সেন্টিমিটার এবং ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। এছাড়া শনিবার একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর আমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আমলসীদে ১১ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ৩ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কম ছিল। তবে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি শুক্রবারের চেয়ে শনিবার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয় বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

অপরদিকে নগরে পানি কিছুটা কমলেও কমেনি বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। বিদ্যুৎ ও গ্যাসহীনতা, খাবার পানির সঙ্কটের পাশাপাশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। সিলেটে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ এড়াতে নগর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। শুক্র ও শনিবার নগরের প্লাবিত এলাকার অনেক বাসিন্দাকে নগর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে দেখা যায়।

জানা যায়, গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সেই সাথে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। ফলে ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। এরপর গত ১৩ মে থেকে সিলেট নগর প্লাবিত হতে থাকে। সেখানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, শুক্রবারের মতো শনিবারও সুরমা নদীর পানি কমা অব্যাহত আছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত আগের দিনের চাইতে কয়েক সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার বেড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে। সিলেটের ১৩টি উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি এখনো নামেনি। সরকার বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।