Naya Diganta

বামনায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফসলি জমি প্লাবিত, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

বামনায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফসলি জমি প্লাবিত, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।

বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী চেঁচান গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। ভরা পূর্ণিমার প্রভাবে বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত জোয়ারে তলিয়ে যাচ্ছে আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রামের ফসলি জমি, মাছের ঘের, পুকুর ও রাস্তাঘাট। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন নদী তীরবর্তী উপশী প্রান্তিক চাষিরা।

শনিবার দুপুরে চেঁচান গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত বেড়িবাঁধ গত বৃহস্পতিবার রাতে জোয়ারের পানির চাঁপে ভেঙ্গে গেছে। কয়েকদিন ধরে পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে ভাঙ্গনকবলিত স্থান দিয়ে প্রবল বেগে বিষখালীর নদীর পানি ভেগে ঢুকছে ফসলি জমিতে। ফলে চেঁচানসহ কাটাখালী, বেবাজিয়াখালী, ঢুষখালী, চালিতাবুনিয়া ও সফিপুর এলাকার ফসলি জমি, মাছের ঘের ও রাস্তাঘাট চলে গেছে পানির নিচে।

এছাড়াও চেচাঁন, গুদিঘাট, দক্ষিণ রামনা নামক তিনটি স্থানের বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব জায়গায় এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনে কোনো সংস্কার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয় কৃষক মো: রুস্তুম আলী, হারুন, এছিন দফাদার, সোবাহান ও নেছার আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার সময় বিষখালী নদীর ভরা জোয়ারে পানির চাপে বিষখালী নদী তীরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। মাঠে এখনো তাদের মুগডাল, মসুরডাল, ভুট্টা, সবজি রয়েছে। এছাড়া তারা ইরি ধান চাষের জন্য বিজতলা তৈরি করেছেন। ওই বীজতলা বর্তমানে হাঁটু পানিতে তলিয়ে আছে। তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রবীশস্য আবাদ করেছেন। বর্তমানে বৃষ্টি কম হওয়ায় তাদের সকলের ক্ষেতে মুগ, খেসারী, ভুট্টার ব্যাপক ফলন হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফসলি জমি তলিয়ে যায়, এতে তারা পথে বসার উপক্রম।

এদের মধ্যে রুস্তুম আলী সর্দার জানান, আমি প্রায় ২০০মন মুগডাল পেতাম। ধার করে এসব রবীশস্য আবাদ করেছি। হঠাৎ আল্লাহ আমাদের ওপর পানির গজব দিয়ে সব তলিয়ে শেষ করে দিলেন। বর্তমানে ইরি ধান চাষের মৌসুম থাকায় অনেকের ইরি ধানের বিজতলা পানিতে ডুবে আছে। আমাদের বেড়িবাঁধ সংস্কার না করলে প্রতি বছরই দুই বার এসব ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ব, পথে বসা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ থাকবে না।

বামনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী জানান, বিষখালী নদী তীরবর্তী ৬টি গ্রামে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে এ বছর মুগডাল, মুসুর, তরমুজ, ভুট্টা, উফসী সবজির আবাদ খুবই ভাল হয়েছে। এছাড়াও ২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা ও ৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজির আবাদ করা হয়েছে। তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। আমার অফিসের সুপারভাইজারদের সরেজমিনে পরিদর্শনে পাঠিয়েছি। কৃষকদের খোঁজ-খবর নিয়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করা হয়।

বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধূরী কামরুজ্জামান সগির বলেন, চেঁচান গ্রামের বেড়িবাঁধটি দিয়ে বিষখালী নদীতে জোয়ারের পানি ঢুকে এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে। বিষয়টি বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু বাঁধটি এখন পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: খলিলুর রহমান বলেন, চেঁচান গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি আমি ইতোমধ্যে অবহিত হয়েছি। খোঁজ-খবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি আলোচনা করে বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।