Naya Diganta

সুন্দরগঞ্জে হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ : ৫০ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ

সুন্দরগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ : নয়া দিগন্ত

আর মাত্র দেড় মাস পর মরা তিস্তা ভরায় পরিণত হবে। বন্যায় ভাসবে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ গ্রামের এক লাখ মানুষ। ৫৭ বছরে বাঁধটি সংস্কার, মেরামত, সংরক্ষণ না করায় এর ৫০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওয়ালিফ মণ্ডল ২৬ কিলোমিটার বাঁধ পরিদর্শন করে ৩৯টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছেন।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটির ডান তীর কাপাসিয়া ইউনিয়নের কামারজানি থেকে বাম তীর তারাপুর ইউনিয়নের ঘগেয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার লম্বা। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। উপজেলা শহরের সাথে পূর্বাঞ্চলের আটটি ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এই বাঁধ। বর্তমানে বাঁধটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে এখানকার লোকজন ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে শোভাগঞ্জ ভায়া বালার ছিঁড়া হয়ে উপজেলা শহরে যাতায়াত করে।
বেলকা ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক রাজেন্দ্র কুমার সরকার জানান, পাকিস্তান আমলে বাঁধটি নির্মাণ হলেও স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাঁধটি মেরামত কিংবা সংস্কার করা হয়নি। সে কারণে বর্তমানে বাঁধটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছর বন্যায় বেলকা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থান ধসে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন বাঁশের প্যালাসাইটিং দিয়ে কোনো মতে মেরামত করে। বর্তমানে বাঁধটির অবস্থা খুবেই খারাপ। বন্যা আসা মাত্রই ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং হুমকির মুখে পড়ায় বর্তমানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে কারণে ২০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা ও জেলা শহর থেকে মালামাল এনে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হচ্ছে। বাঁধটি সংস্কার ও মেরামত একান্ত প্রয়োজন।
বেলকা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি স্থান বাঁধটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর বন্যার সময় তার ইউনিয়নের ১০টি স্থানে বন্যার পানি বাঁধের গর্ত দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। তাৎক্ষণিক মেরামত করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাঁধটি মারাত্ম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত এক মাস ধরে বাঁধটির ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সে কারণে কাপাসিয়া, শ্রীপুর, চণ্ডিপুর, হরিপুর, কঞ্চিবাড়ি, শান্তিরাম বেলকা ইউনিয়নের লোকজন ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে উপজেলা শহরে যাওয়া আসা করে।
তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, তারাপুর মৌজার মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া বেড়িবাঁধের রাস্তাটি কয়েক জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেলেও দেড় যুগেও বাঁধটি সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আল-মারুফ জানান, বাঁধটি সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। দেখা গেছে প্রায় ৩৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। বন্যার সময় যেকোনো মুহূর্তে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে আগাম পরিদর্শন পূর্বক মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি মেরামত এবং সংস্কারের অভাবে আসলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, বাঁধটি সংস্কার ও মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংসদ আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বন্যার কবল থেকে বাঁধটি রক্ষার জন্য অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।